৩১শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৯ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপের প্রভাবে নীলফামারীতে ধান ও শীতকালীন ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা

মো. সাইফুল ইসলাম, নীলফামারী প্রতিনিধি:

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে নীলফামারী জেলায় টানা দুই দিনের বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় চলতি মৌসুমের আমন ধান ও শীতকালীন সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষকেরা জানিয়েছেন, মাঠে আধপাকা ধানগাছ মাটিতে নুয়ে পড়েছে এবং অনেক ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে, ফলে ঘরে ফলন তোলা কঠিন হয়ে পড়েছে।

জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে নীলফামারী জেলায় প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। বিশেষ করে ডিমলা, জলঢাকা ও কিশোরীগঞ্জ উপজেলার নিচু জমিগুলোতে ধান হেলে পড়েছে এবং কিছু এলাকায় পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ধানের গোড়া পচে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

নীলফামারী জেলার কৃষকরা ইতোমধ্যে আমন ধান কাটার পর ৫,৫৬৫ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজির বীজ বপন করেছেন। সারা বছর সবজি চাষের জন্য উঁচু জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজি যেমন ফুলকপি, পাতা কপি, শিম, লাউ ইত্যাদি চাষ করা হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রংপুর কৃষি অঞ্চলের পাঁচটি জেলায় (যার মধ্যে নীলফামারীও অন্তর্ভুক্ত) মোট ৪২,১৩০ হেক্টর জমিতে ১১,১৯,৮৯৩ টন শীতকালীন সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

ডিমলা উপজেলার কৃষক মো. আছাদুল হক বলেন, “ধান পাকার পথে ছিল। কয়েকদিন পরই কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু টানা বৃষ্টিতে সব গাছ মাটিতে পড়ে গেছে। এখন পানি না নামলে ফলন ঘরে তোলা কঠিন হবে।”

একই এলাকার কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমরা বছরের পর বছর ধরে এই ফসলের জন্য অপেক্ষা করি। ঝড়ের মতো বাতাসে ধান পড়ে যাওয়ায় বছরের পরিশ্রম শেষ হয়ে যেতে পারে।”

শুধু ধান নয়, শীতকালীন সবজি যেমন ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, মরিচ, পেঁয়াজ ও আলু ক্ষেতেও ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। অনেক ক্ষেতেই পানি জমে থাকার কারণে শিকড় নষ্ট হয়ে গাছ মারা যেতে পারে।

নীলফামারী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মনজুর রহমান বলেন, “নিম্নচাপের প্রভাবে জেলার বিভিন্ন এলাকায় মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া হয়েছে। কিছু এলাকায় ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা কৃষকদের দ্রুত পানি নিষ্কাশন, নুয়ে পড়া ধানগাছ বাঁধা এবং অতিরিক্ত পানি জমতে না দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। আবহাওয়া অনুকূলে এলে ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব।”

জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, মাঠপর্যায়ে কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন শুরু করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে। স্থানীয় কৃষক সমাজের দাবি, এই ক্রান্তিলগ্নে কৃষকদের পাশে থেকে সঠিক দিকনির্দেশনা ও সহায়তা দেওয়া জরুরি, যাতে ক্ষতির মাত্রা কমানো যায়।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের পরিমাণ নিরূপণ করে দ্রুত প্রণোদনা ও পুনর্বাসনের জন্য রিপোর্ট প্রণয়ন করা হবে।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top