নিজস্ব প্রতিনিধি:
প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের পতন ঘটিয়ে নতুন সরকার গঠনের একটি বড় ষড়যন্ত্রের তথ্য ফাঁস হয়েছে। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক এনায়েত করিম (মাসুদ করিম) রিমান্ড ও আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে এই চক্রান্তের বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি শুধু ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনাই নয়, নতুন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে কারা প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টা হতে যাচ্ছিলেন, তাও প্রকাশ করেন।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, এই ষড়যন্ত্রে এনায়েত করিম একা নন; দেশের একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি, ব্যবসায়ী, সাবেক সেনা কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও সাংবাদিক এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য দেশ ও বিদেশে বেশ কয়েকটি গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। জানা গেছে, সরকারের সম্ভাব্য প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে একজন খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদের নামও ঠিক করা হয়েছিল।
এনায়েত করিম জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন যে, তিনি সম্প্রতি বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন। অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ একটি ব্যবসায়ী গ্রুপ ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য তাকে ছয় কোটি টাকা সহায়তা দেয়।
এনায়েত করিমের জবানবন্দিতে উল্লেখিত উপদেষ্টা পরিষদের সম্ভাব্য সদস্যদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে বিদেশযাত্রা নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, সাবেক বিএনপি প্রতিমন্ত্রী এহসানুল হক মিলনের বিদেশযাত্রা স্থগিতের পেছনেও এই তদন্তের সংযোগ রয়েছে।
দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন নিয়ে যখন সরকার ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে, তখন এনায়েত করিমের দেওয়া তথ্য নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে, নির্বাচন বানচালের চেষ্টা হতে পারে এবং হঠাৎ আক্রমণও ঘটতে পারে।
উল্লেখ্য, গত ১৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি অফিসের সামনে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাঘুরির সময় পুলিশ এনায়েত করিমকে আটক করে। তিনি নিজেকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর এজেন্ট ও এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক পরিচয় দেন, যা পরে ভুয়া প্রমাণিত হয়। রিমান্ডে তিনি স্বীকার করেন, অতীতে ২০১৪ সালে বিএনপি ভাঙার কার্যক্রমেও তিনি জড়িত ছিলেন এবং তখন ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ ও ডিজিএফআইয়ের সঙ্গে কাজ করেছিলেন।
তিনি আরও জানান, দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় তিনি বাংলাদেশে এসে বিনিয়োগের নামে অর্থ হাতিয়ে নেন। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচন ঘিরেও তিনি একইভাবে সক্রিয় ছিলেন এবং বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় তৎপরতা চালাতেন।
এনায়েত করিমের এই জবানবন্দি এখন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে, আর সরকারের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো নতুন করে তদন্তে নেমেছে।
সূত্র: দৈনিক আমারদেশ অনলাইন