নিজস্ব প্রতিনিধি:
দীর্ঘ দুই দশক ধরে বিএনপির নীতি নির্ধারণ, নির্বাচন পরিচালনা ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও এবারই প্রথম সরাসরি ভোটের লড়াইয়ে নামছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তাঁর মা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পুরনো আসন বগুড়া-৬ (সদর) থেকে।
সোমবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য ২৩৭ প্রার্থীর নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন। সেই তালিকায় বগুড়া-৬ আসনে প্রার্থী হিসেবে উঠে আসে তারেক রহমানের নাম।
এর আগেই তিনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে। গত অক্টোবরের শুরুতে বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, “জি, ইনশাআল্লাহ।”
বগুড়া জেলা বিএনপির রাজনীতিতে সবসময়ই বিশেষ গুরুত্ব বহন করে এসেছে। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান হওয়ায় জেলা বিএনপির রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিত। খালেদা জিয়াও ১৯৯১ সাল থেকে বগুড়া-৬ ও ৭ আসনের যেকোনো একটিতে প্রার্থী হয়ে এসেছেন এবং কখনও পরাজিত হননি।
১৯৭৯ সালে এই আসনে ধানের শীষ প্রতীকে জয়ী হয়েছিলেন ওয়াজেদ হোসেন তরফদার। ১৯৯১ ও ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জয় পান মজিবর রহমান। জুন ১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়া নিজে বিজয়ী হন, তবে পরে আসনটি ছেড়ে দেন। পরবর্তী উপনির্বাচনে জয় পান জহুরুল ইসলাম।
২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে খালেদা জিয়া এই আসনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। ২০০৮ সালের উপনির্বাচনে ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার ধানের শীষ প্রতীকে বিজয়ী হন।
২০১৪ সালের নির্বাচন বিএনপি বর্জন করে, আর ২০১৮ সালে খালেদা জিয়া দণ্ডিত থাকায় প্রার্থী হতে পারেননি। সে সময় বগুড়া-৬ আসনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী হলেও শপথ নেননি। পরবর্তী উপনির্বাচনে বিএনপি নেতা গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ ধানের শীষ প্রতীকে জয়লাভ করেন।
২০২৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। তবে এবার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। দলের সাংগঠনিক প্রস্তুতি ও মাঠ পর্যায়ে তৎপরতা বাড়ানোর অংশ হিসেবে তারেক রহমান নিজেই বগুড়া-৬ আসন থেকে প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
গত ১১ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বগুড়ার সাতটি আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নিয়ে সভা হয়, যেখানে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন তারেক রহমান। সভার পর বগুড়া-৬ ও ৭ আসন নিয়ে কোনো স্পষ্ট নির্দেশনা না দেওয়ায় স্থানীয় নেতাদের মধ্যে তখনই ধারণা তৈরি হয়, এই দুই আসনে ‘জিয়া পরিবারের’ কেউ প্রার্থী হতে পারেন।
অবশেষে সেই ধারণাই সত্যি হলো—বগুড়া-৭ আসনে খালেদা জিয়া এবং বগুড়া-৬ আসনে তারেক রহমান প্রার্থী হচ্ছেন। খালেদা জিয়া তিনটি আসনে (বগুড়া-৭, ফেনী-১ ও দিনাজপুর-৩) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, আর তারেক রহমান অংশ নেবেন কেবল একটিতে—মায়ের পুরনো ঘাঁটি বগুড়া-৬ আসনে।