মোহাঃ রকিব উদ্দীন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি:
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় পিছিয়ে পড়া নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা এবং উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে তিন দিনব্যাপী নারী উদ্যোক্তা মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলা পরিষদ চত্বরে এই মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ফিতা ও কেক কেটে মেলার উদ্বোধন করেন শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আজার আলী। এ সময় উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিসার মো. শাহিন আক্তার, উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মোঃ নুরুল ইসলাম, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, নারী উদ্যোক্তা, সাংবাদিক ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
নারীদের উদ্যোগে রঙিন মেলা প্রাঙ্গণ
মেলায় অংশগ্রহণকারী নারী উদ্যোক্তারা নিজেদের তৈরি নানান পণ্য নিয়ে স্টল সাজান। প্রায় ৫০টি স্টলে প্রদর্শিত হয় হাতে তৈরি পোশাক, শীতের বিভিন্ন পিঠা-পুলি, ঘরোয়া খাবার, প্রসাধনী সামগ্রী, অলংকার, ব্যাগ, মাটির তৈরি হস্তশিল্প ও অন্যান্য দেশীয় পণ্য।
মেলার স্টল ঘুরে দেখা যায়, নারী উদ্যোক্তারা অত্যন্ত উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে নিজেদের তৈরি পণ্য বিক্রি করছেন। অনেক দর্শনার্থী সুলভ মূল্যে এসব পণ্য কিনতে ভিড় জমিয়েছেন। বিশেষ করে স্থানীয়ভাবে তৈরি পিঠা, ব্যাগ ও হস্তশিল্পের পণ্যে ক্রেতাদের আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো।
উদ্যোক্তাদের মুখে আনন্দ ও অনুপ্রেরণা
মেলায় অংশ নেওয়া এক নারী উদ্যোক্তা জানান, “আমরা ঘরে বসেই বিভিন্ন পণ্য তৈরি করি, কিন্তু বিক্রির সুযোগ কম। এ ধরনের মেলা আমাদের পণ্যের পরিচিতি বাড়ায় এবং আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করে। এতে আত্মবিশ্বাসও বাড়ে।”
আরেক উদ্যোক্তা বলেন, “এমন আয়োজন বছরে একাধিকবার হলে আমরা আরও ভালোভাবে ব্যবসা প্রসারিত করতে পারব।”
উপজেলা প্রশাসনের বক্তব্য
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আজার আলী বলেন, “বর্তমান সরকার নারী উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। নারীরা এখন ঘর-সংসারের পাশাপাশি অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এই মেলার মাধ্যমে নারীরা উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পাচ্ছে, যা সমাজ ও অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক দৃষ্টান্ত।”
তিনি আরও বলেন, “শিবগঞ্জের প্রতিটি ইউনিয়নে নারীদের এমন উদ্যোগকে আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব।”
মেলায় ছিল উৎসবের আমেজ
পুরো মেলা প্রাঙ্গণজুড়ে ছিল উৎসবের আমেজ। নারী উদ্যোক্তাদের প্রাণবন্ত উপস্থিতি, রঙিন সাজসজ্জা ও পণ্যের বৈচিত্র্য মেলাকে এক প্রাণচঞ্চল রূপ দিয়েছে। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে বিক্রিবাট্টা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম।
উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, মেলার মূল উদ্দেশ্য হলো নারীদের ব্যবসায়িক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্থানীয় বাজারে তাদের তৈরি পণ্যের পরিচিতি ঘটানো এবং উদ্যোক্তা হিসেবে স্বাবলম্বী হতে উৎসাহ দেওয়া।
তিন দিনব্যাপী এই নারী উদ্যোক্তা মেলা শেষ হবে আগামী বৃহস্পতিবার বিকেলে। সমাপনী দিনে সেরা উদ্যোক্তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।