জাকির হোসেন হাওলাদার, দুমকী ও পবিপ্রবি প্রতিনিধি:
বঙ্গোপসাগরে, সামুদ্রিক শৈবালে অপার সম্ভাবনা সমুদ্রের তীরে অযত্নে জন্ম নেওয়া সামুদ্রিক শৈবাল (সি-উইড) ঘিরে সম্ভাবনার নতুন দ্বার খুলছে। একসময় উপকূলের মানুষের কাছে তেমন মূল্য না থাকা শৈবালকে পুষ্টিকর খাবার ও নানা প্রসাধনী সামগ্রীতে রূপান্তরিত করা হচ্ছে। আর এ সফলতা এসেছে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) একদল গবেষক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর হাত ধরে।
পবিপ্রবির মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিক্স বিভাগের গবেষক দল কয়েক মাস ধরে শৈবাল চাষ ও প্রক্রিয়াজাত করে তৈরি করেছেন নানা পণ্য। শৈবাল দিয়ে ল্যাবে আইসক্রিম, মিষ্টি, জিলাপি, বিস্কুট এবং জাপানের জনপ্রিয় খাবার সুশির অপরিহার্য উপাদান নরি শিট তৈরি করা হয়েছে। শুধু খাবার নয়-ফুড সাপ্লিমেন্ট ট্যাবলেট, সাবান, উপটানসহ প্রসাধনী সামগ্রীও তৈরি করা হয়েছে। শৈবাল থেকে বায়োপ্লাস্টিক, বায়োডিসেলও তৈরি করা যায়।
পুষ্টিবিদদের মতে, সামুদ্রিক শৈবালে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ হাই-ফাইবার, প্রোটিন, ভিটামিন, ওমেগা-খ্রি ও খনিজ উপাদান। এসব মানবদেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোসহ ত্বক ও চুলের যত্নে কার্যকর ভূমিকা রাখে। ইতোমধ্যে এসব পণ্য ব্যবহারকারীরা সুফলও পেয়েছেন।পবিপ্রবির পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান অনুষদের সহকারী অধ্যাপক মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, প্রাণিজ ভিটামিন ও মিনারেলের ওপর যে চাপ তা শৈবালের মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব।
গবেষকরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা করতে এবং প্রাণিজ ও উদ্ভিজ্জ সম্পদের ওপর চাপ কমাতে শৈবাল হতে পারে কার্যকর সমাধান। পবিপ্রবির ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রাজীব সরকার জানান, সামুদ্রিক শৈবালে উচ্চমানের প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেলস থাকে।
খাদ্যে থাকা এন্টি অক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। শৈবালের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে আয়রনের অভাব পূরণ করে এবং মানসিক হতাশা দূর করে। শৈবালে থাকা ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৬ ফ্যাটি এসিড শিশুর মেধা বিকশিত করে, গ্যাস দূর করে ও কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়।
তিনি জানান, শূন্য দশমিক ৫ কেজি কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করতে পারে প্রতিকেজি শুকনো শৈবাল। একই বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আরিফুল আলম এ প্রতিনিধিকে জানান, উপকূলীয় এলাকায় বিশেষ করে কুয়াকাটা ও কক্সবাজারে প্রচুর পরিমাণে শৈবাল পাওয়া যায়। এছাড়া শৈবাল চাষ করার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
শৈবাল থেকে তৈরি পণ্য সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে পারলে উপকূলীয় অঞ্চল হবে টেকসই উন্নয়নের রোল মডেল। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, উপকূলীয় অঞ্চলে শৈবাল চাষকে টেকসই আকারে গড়ে তুলতে পারলে এটি খাদ্য ও সৌন্দর্য শিল্পের পাশাপাশি উপকূলের মানুষের জীবিকারও নতুন ভরসা হয়ে উঠবে।