জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান:
ডিজিটাল যুগের ব্যস্ত স্রোতে আমরা যত এগোচ্ছি, ততই বাড়ছে অদৃশ্য এক আতঙ্ক—সাইবার অপরাধ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে ব্যাংক–অ্যাকাউন্ট, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা থেকে প্রাত্যহিক যোগাযোগ—সবকিছু যখন প্রযুক্তিনির্ভর, তখন নিরাপত্তাহীনতার এই বাস্তবতায় আলোকবর্তিকার মতো আবির্ভূত হয়েছেন চট্টগ্রামের এক তরুণ, মাত্র ২১ বছরের সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ আব্দুল্লাহ সাইফ।
গ্রাম থেকে পথচলা, প্রযুক্তির প্রতি অদম্য ভালোবাসা
চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে সাইফ। শৈশব থেকেই কম্পিউটারের প্রতি ছিল অদম্য টান। অন্য শিশুরা যখন গেমে মগ্ন, সাইফ তখন খুঁজতেন প্রযুক্তির গভীরে লুকানো সমস্যা ও তার সমাধান। কৌতূহল থেকেই শুরু, তারপর ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে অনলাইন প্রতারণা প্রতিরোধ, হ্যাকিং মোকাবিলা, ও সাইবার নিরাপত্তায় দক্ষতা।
যুবকের হাতে নেতৃত্ব: কওমী সাইবার এক্সপার্ট টিম
তরুণ বয়সেই তিনি হয়ে ওঠেন কওমী সাইবার এক্সপার্ট টিমের Co-founder। তার হাত ধরে অসংখ্য সাধারণ মানুষ, সেলিব্রেটি, জনপ্রিয় আলেম-ওলামা ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর ফিরে পেয়েছেন হারানো অ্যাকাউন্ট, রক্ষা পেয়েছেন তথ্য ফাঁসের বিপদ থেকে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় আইডি হ্যাকিং, ব্ল্যাকমেইল, প্রতারণা—এসব সংকটে নির্ভরতার নাম হয়ে উঠেছেন এই তরুণ।
গ্রামের ছেলে—কিন্তু ভাবনা বিশ্বজোড়া
নিজের সম্পর্কে সাইফের বক্তব্য– “আমি গ্রামের ছেলে। মানুষ ভাবে গ্রাম থেকে বড় কিছু করা কঠিন। কিন্তু ইচ্ছাশক্তি থাকলে আকাশও দূরে নয়। আমি চাই, সাইবার নিরাপত্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি ক্ষেত্রে কাজ করে দেখাতে—গ্রাম থেকেও বিশ্বকে বদলে দেওয়া যায়।”
তার সাফল্য প্রমাণ করে—সুযোগ বড় নয়, বড় হলো দৃষ্টিভঙ্গি ও নিবেদন।
স্বপ্ন আরও বিস্তৃত: দেশকে সাইবার সচেতন করা
সাইফের লক্ষ্য শুধু সমস্যা সমাধান নয়, বরং দেশের প্রতিটি মানুষকে সাইবার নিরাপত্তায় সচেতন করে তোলা।
তার ভাষায়—“মানুষ সাইবার অপরাধে ক্ষতিগ্রস্ত হয় মূলত অসচেতনতার কারণে। আমি চাই সবাই বুঝুক—নিজের ডিজিটাল নিরাপত্তা নিজের হাতে।”
সামাজিক উদ্যোগেও সক্রিয় ভূমিকা
শুধু প্রযুক্তি নয়, অনলাইন সংস্কৃতি সংশোধনেও কাজ করছে সাইফ ও তার দল। তারা অনলাইনের অশ্লীলতা প্রতিরোধ, কিশোর–তরুণদের সচেতনতা বৃদ্ধি, দুর্বল ব্যবহারকারীদের সঠিক ব্যবহার শেখানো—এসবকে দায়িত্ব হিসেবে নিয়েছে।
আগামীর অনুপ্রেরণা এক ২১ বছরের তরুণ
প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের সমস্যার সমাধান করে তিনি প্রমাণ করছেন—আলোর জন্য বয়স লাগে না, লাগে মানসিকতা। গ্রামের সাদামাটা পরিবেশ থেকে উঠে এসে আজ যারা তথ্য–প্রযুক্তির নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করছেন, তাদের হৃদয়ে সাইফ হয়ে উঠেছেন অনুপ্রেরণার প্রতীক।
২১ বছরের ক্ষুদ্র বয়সে বিশাল স্বপ্ন বুকে নিয়ে এগিয়ে চলা এই তরুণ প্রমাণ করে দিয়েছেন— নতুন যুগের যোদ্ধা আর তলোয়ারের নয়; জ্ঞানের, প্রযুক্তির ও সততার।
এই তরুণের পথচলা শুধু তার নিজের নয়—এ পথ আলোকিত করছে একটি প্রজন্মকেও।