১৮ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

“শুধু রায়ই নয়, তা দ্রুত কার্যকর করতে হবে” – শহীদ সাগরের বাবা

মোঃ আমিরুল হক, রাজবাড়ী প্রতিনিধি:

২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এর প্রতিক্রিয়ায় গণ অভ্যুত্থানে শহীদ সাগর আহম্মেদের বাবা তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, দীর্ঘ ১৭ মাস ঘুমাতে পারি না। সাগরের মা কান্না করতে করতে অন্ধ হয়ে যাওয়ার জোগার। একমাত্র ছেলে সাগর ছিল আশার আশার আলো। আমার বুকের মানিককে ওরা মেরে ফেলেছে। প্রতিদিন ভেবেছি ছেলের হত্যাকারীদের বিচার দেখে যেতে পারব কিনা। গতকাল সোমবার ১৭ নভেম্বর মামলার রায় হলো।’

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধের রায় ঘোষণা হয়েছে গতকাল সোমবার (১৭ নভেম্বর)। এতে শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এই খবরে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া ইউনিয়নের শহীদ শিক্ষার্থী সাগর আহম্মেদের বাবা দরিদ্র কৃষক তোফাজ্জেল হোসেন। তিনি বলেছেন, ‘শেখ হাসিনার নির্দেশেই সাগরসহ শত-শত ছেলে-মেয়েকে এ আন্দোলনে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। “শুধু রায়ই নয়, তা দ্রুত কার্যকর করতে হবে।”

শহীদ সাগরের বাবা তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, ‘আজ ১৭ মাস বিছানায় শান্তিতে ঘুমাতে পারি না। সাগরের মা কান্না করতে করতে এখন অন্ধ হয়ে যাওয়ার জোগার। একমাত্র ছেলে সাগর ছিল আমাদের জীবনে আশার আলো। আমার বুকের মানিককে ওরা মেরে ফেলেছে। প্রতিদিন ভেবেছি, ছেলের হত্যাকারীদের বিচার দেখে যেতে পারব কিনা। ১৭ নভেম্বর রায় হলো, শুধু রায় হলেই হবে না, দ্রুত রায় কার্যকর করতে হবে। “নিষ্পাপ শিশুদের যেভাবে হত্যা করেছে, ওদের সেই সাজা দ্রুত দিতে হবে।”

শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ড ছাড়াও তাঁদের সমস্ত স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি জব্দের আদেশ দিয়েছেন মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এছাড়া রাজসাক্ষী হিসেবে সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে ৫ বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে। সোমবার (১৭ নভেম্বর) সকালে বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ রায় ঘোষনা করেন।

শহীদ সাগর আহম্মেদের বাড়ি রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া ইউনিয়নের টাকাপোড়া গ্রামে। তিনি রাজধানীর মিরপুরের সরকারি বাঙলা কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশোনা করতেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গিয়ে গত বছরের ১৯ জুলাই মিরপুর-১ গোলচত্বরে পুলিশের গুলিতে নিহত হন তিনি।

সাগরের বাবা বলেন, “আমার ছেলেকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তখন ভয়ে কথা বলতে পারিনি। ছেলে হত্যার পর থেকেই আমি নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে বিচার দিয়েছি। আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করেছেন।”

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে দ্রুত রায় কার্যকরের দাবি জানিয়ে তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘মাঠে কাজ করা দেখে সাগর প্রায়ই বলত— বাবা, আর কয়েকটা দিন অপেক্ষা করো, তোমাকে আমি আর রোদে পুড়তে দেব না, বৃষ্টিতেও ভিজতে দেব না। আমার সব শেষ হয়ে গেছে। কেউ কখনও এমন করে আর বলবে না। আমি মাঠে কাজ করে খাই।’

সন্তানের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, সাগর অত্যন্ত মেধাবী ছিল। সে রাজবাড়ী সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চেয়েছিল, কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজধানীর মিরপুরের সরকারি বাঙলা কলেজে ভর্তি হয়।

সাগরের বাবা বলেন, ‘পরিবারের অভাব অনটনের কারণে আমি তার (সাগর) পড়ার খরচ ঠিক মতো দিতে পারতাম না বলে সে টিউশনি করে নিজের খরচ নিজেই চালাত। সাগরের স্বপ্ন ছিল বিসিএস ক্যাডার হবে, সরকারি চাকরি করবে। সেই স্বপ্ন নিয়েই চাকরির জন্য কোটা আন্দোলনে গিয়েছিল, ফিরল লাশ হয়ে। আমি শুধু আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলাম, যারা সাগরকে হত্যা করেছে তাদের যেন বিচার হয়। আল্লাহ আমার কথা শুনেছে।’

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। এর মধ্য দিয়ে হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছরের শাসনের অবসান হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের করা মামলার তিন আসামির মধ্যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল বর্তমানে পলাতক। এ মামলায় চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন গ্রেপ্তার একমাত্র আসামি।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top