মোঃ নুর আলম পাপ্পু, খোকসা কুষ্টিয়াঃ
আজ মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর ২০২৫) দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের দিকে কুষ্টিয়ার খোকসা থানাধীন পাইকপাড়া মির্জাপুর গ্রামের ফুলতলা মোড়ে ঘটে গেল এক হৃদয়বিদারক সড়ক দুর্ঘটনা। এতে চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা থানার চিতলা গ্রামের এক পরিশ্রমী ও স্বপ্নবাজ যুবক মোঃ আব্দুর রহিম (২৫) এর করুণ মৃত্যু ঘটে।
পরিবারের সচ্ছলতা, মায়ের মুখে সুখের হাসি, সংসারের অভাব দূরীকরণে প্রতিদিন সংগ্রাম করতেন রহিম। গ্রামের অনেক যুবকের মতো শহর কিংবা বিদেশ ভাগ্য পরিবর্তনের পথে না গিয়ে নিজেই পরিশ্রম করে জীবন গড়ার লক্ষ্য ছিল তার। কর্মসংস্থানের অভাব থাকা সত্ত্বেও তিনি ইঞ্জিন চালিত নছিমন চালিয়ে সৎ উপার্জনের মাধ্যমে জীবিকা চালাতেন।
আজ সকালে স্বাভাবিক দিনের মতোই তিনি চুয়াডাঙ্গা থেকে রাজবাড়ীর পাংশা এলাকায় পাটকাঠি সংগ্রহের উদ্দেশ্যে নছিমন নিয়ে রওনা দেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম ছোবল তাকে তার কর্মস্থল বা ঘরে ফেরার সুযোগই দিল না।
ঘটনাস্থল সূত্রে জানা যায়, দুপুরে ফুলতলা মোড়ে পৌঁছালে বরিশাল থেকে রাজশাহীগামী একটি দ্রুতগামী বিআরটিসি বাসের সাথে তার নছিমনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের ধাক্কায় নছিমনটি উল্টে রাস্তার পাশে পড়ে যায় এবং ঘটনাস্থলেই রহিমের মৃত্যু হয়।
দুর্ঘটনার পর বিআরটিসি বাসটি দ্রুত পালিয়ে যায় বলে প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানিয়েছেন। খবর পেয়ে খোকসা থানা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং নিহতের মরদেহ হেফাজতে নেয়।
তার সহ কর্মী ও স্থানীয়রা গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন, রহিম খুব শান্ত, পরিশ্রমী ও নির্ভরযোগ্য ছেলে ছিল। পরিবার বলতে তার মা ও ছোট ভাই—ওদের মুখে হাসি ফুটাতেই সে প্রতিদিন কঠোর পরিশ্রম করত। কিন্তু সড়কের বেপরোয়া পরিবেশ তার সকল স্বপ্ন কেড়ে নিল।
রহিমের মৃত্যুতে তার অসহায় পরিবারে নেমে এসেছে অন্ধকার। হঠাৎ করেই ভেঙে পড়েছে তাদের জীবনের স্বপ্ন, নিরাপত্তা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।
সড়ক নিরাপত্তা — বারবার একই প্রশ্ন, কোথায় নজরদারি?
বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে সড়ক দুর্ঘটনা যেন নিত্যদিনের সংবাদ। জীবন হারাচ্ছে তরুণ কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী—যাদের কাঁধে পরিবার, সমাজ, দেশের ভবিষ্যৎ!
দায়হীনতা, দ্রুতগতি, প্রতিযোগিতা, চালকের অসাবধানতা, নজরদারিহীন পরিস্থিতি এবং সড়ক ব্যবস্থাপনায় অব্যবস্থাপনাকেই স্থানীয়রা দায়ী করছেন।
স্থানীয় ও সচেতন মহল বলছেন ফুলতলা মোড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও সাইনেজ বৃদ্ধি করতে হবে এ রুটে গতি নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিং জোরদার করতে হবে।
সমাজ, রাষ্ট্র, কর্তৃপক্ষ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সবাই যদি সময়মতো দায়িত্ব পালন করতো, তবে হয়তো আজ রহিম জীবিত থাকতেন।
একটি অবহেলা একটি পরিবারকে নিঃস্ব করেছে, কে নেবে এর দায়?