২০শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

নীলফামারীতে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে গোপনে বই বিক্রির অভিযোগ

মো. সাইফুল ইসলাম, নীলফামারী প্রতিনিধি:

নীলফামারী সদর উপজেলায় মাধ্যমিক স্তরের বিনামূল্যের পুরাতন বই গোপনে বিক্রির অভিযোগ উঠে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। গত ১৯ সেপ্টেম্বর ভোর সাড়ে ৫টার দিকে নীলফামারী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি কক্ষ থেকে পুরাতন বই বোঝাই দুটি ট্রাক বের হতে দেখেন স্থানীয়রা। দীর্ঘদিন ধরে গচ্ছিত এসব বই উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের নির্দেশেই বিদ্যালয়ের কক্ষে সংরক্ষণ করা ছিল বলে জানা গেছে।

স্থানীয়দের দাবি, ভোরের অন্ধকারে বই বোঝাই ট্রাক দুটি বিদ্যালয়ের মূলফটক দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় জেলা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তাকেও দেখা গেছে। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

সরকারি বিধি অনুযায়ী পুরাতন বই বিক্রি করতে হলে সঠিক প্রক্রিয়ায় কমিটি গঠন ও হিসাব-নিকাশ প্রদানের বাধ্যবাধকতা থাকলেও এসব নিয়ম উপেক্ষা করেই গোপনে বই বিক্রি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এ.টি.এম নুরুল আমীন শাহের বিরুদ্ধে।

পুরাতন বই বিক্রির প্রক্রিয়া ও হিসাব জানতে গত ২৫ সেপ্টেম্বর তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ অনুযায়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বরাবর আবেদন করা হয়। ইউএনও জানান, সংশ্লিষ্ট নথিপত্র তাঁর কার্যালয়ে নেই—এ কারণে তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করার পরামর্শ দেন।

পরবর্তীতে ১৩ অক্টোবর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর তথ্য প্রাপ্তির আবেদন জমা দেওয়া হলেও ৩০ কার্যদিবস অতিক্রম করলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা কার্যালয় কোনো তথ্য সরবরাহ করেনি।

নীলফামারী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নলিনী কান্ত রায় জানান, “এসব বই আমাদের নয়। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার তিনটি কক্ষে পুরাতন বই রেখেছিলেন। সামনে পরীক্ষা থাকায় আমরা কক্ষ খালি করতে বলি। এরপর তাঁদের লোকজন এসে বইগুলো দুটি ট্রাকে তুলে নিয়ে গেছে। এর বাইরে আমি কিছু জানি না।”

বিষয়টি জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এ.টি.এম নুরুল আমীন শাহ বলেন, “ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেই বিধি মোতাবেক পরিত্যক্ত বই বিক্রি করা হয়েছে। আপনারা যা পারেন করেন, পারলে নিউজ করেন।”

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হাফিজুর রহমানও একই দাবি করেন। তাঁর ভাষায়, “নিয়ম মেনে পুরাতন বই বিক্রি করা হয়েছে। বিষয়টি আমাকে জানিয়ে করা হয়েছে।”

এদিকে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম জানান, “পুরাতন বই বিক্রির কোনো তথ্য আমার কাছে নেই। আমি কীভাবে মন্তব্য করব? যারা বই বিক্রি করেছেন, তাঁদের কাছ থেকেই জানতে হবে।”

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কমিটি গঠন, নিলাম প্রক্রিয়া, মূল্য নির্ধারণ এবং বিক্রির সম্পূর্ণ হিসাব প্রকাশের বাধ্যবাধকতা থাকলেও গোপনে ভোররাতে বই বিক্রি করাকে প্রশ্নবিদ্ধ বলেই মনে করছেন স্থানীয়রা।

পুরো ঘটনাকে কেন্দ্র করে নীলফামারী জুড়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের স্বচ্ছ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন সচেতন নাগরিকরা।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top