২০শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

নীলফামারীতে আগাম আলু উত্তোলন শুরু: কেজি ৪০ টাকায় বিক্রি—লোকসান পুষিয়ে লাভের আশায় চাষিদের নতুন প্রস্তুতি

মো. সাইফুল ইসলাম, নীলফামারী প্রতিনিধি:

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় শুরু হয়েছে আগাম জাতের আলু উত্তোলন। মাঠে মাঠে এখন ব্যস্ত সময় কৃষকদের। নতুন উঠতি আলু কেজিপ্রতি ৪০ টাকায় বিক্রি শুরু হওয়ায় মৌসুমের শুরুতেই বাড়তি আশার সঞ্চার হয়েছে চাষিদের মনে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই উপজেলাজুড়ে পুরোদমে আলু তোলা শুরু হবে বলে জানিয়েছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।

উপজেলা কৃষি অফিসার লোকমান আলম বলেন, দেশের মধ্যে সবচেয়ে আগে কিশোরগঞ্জেই আগাম আলু উত্তোলন হয়। স্থানীয় সেভেন জাতের আলু মাত্র ৫৫–৬০ দিনের মধ্যেই সংগ্রহযোগ্য হয়ে ওঠে। তিনি জানান, কেশবা গ্রামের কৃষক সোরহাব হোসেন ৫৯ শতক জমিতে সেভেন জাতের আগাম আলু তুলে ৩৫০ কেজি ফলন পেয়েছেন, যা সাইজ ছোট হওয়ায় কেজিপ্রতি ৪০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন।

উপজেলা কৃষি দপ্তর জানায়, গত মৌসুমে ব্যাপক লোকসান গুনতে হলেও কৃষকরা আগাম আলু চাষে পিছপা হননি। নতুন আলু বাজারে তুললেই ভালো দাম মেলে—এ অভিজ্ঞতাই তাদের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। এ বছর উপজেলায় ৬ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যার মধ্যে আগাম জাতের আওতায় রয়েছে ৩ হাজার ৪৩০ হেক্টর।

সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে—বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সবুজ আলুচারা সমানতালে বেড়ে উঠছে। দুর্গাপূজার আগের বৃষ্টিতে কিছু জমিতে কর্দমাক্ত পরিস্থিতি তৈরি হলেও তেমন ক্ষতি হয়নি। চাষিদের ভাষায়, সঠিক আবহাওয়া বজায় থাকলে এবার ফলনও ভালো হবে।

নিতাই মুশরুত পানিয়ালপুকুর এলাকার কৃষক আল-আমিন জানান, তিনি ৭০ বিঘা জমিতে আগাম আলুর আবাদ করেছেন। তাঁর আলুর বয়স এখন ৩৫ থেকে ৫০ দিন। বাজারদর কত হবে তা নিয়ে শঙ্কা থাকলেও আগাম আলুর ভালো দাম পেলে বড় ধরনের লাভের আশা করছেন।

কৃষক লুৎফর রহমান লুতু মিয়া বলেন, “গতবার হিমাগারে রাখা প্রায় ছয় হাজার বস্তা আলু বিক্রি করে প্রায় ৪০ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। তারপরও ১৩ বিঘা জমিতে আগাম আলু করেছি। আরও ৩০ বিঘায় বীজ আলু চাষ করবো। ফলন আর দাম ঠিক থাকলে লোকসান পুষিয়ে লাভ করতে পারবো।”

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, মৌসুমের শুরুতে নতুন আলুর চাহিদা তুলনামূলক বেশি। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা কিশোরগঞ্জে আসছেন আগাম আলু কিনতে। স্বল্প সময়ে উৎপাদন খরচ তুলনামূলক কম হওয়ায় আগাম আলু চাষ লাভজনক হওয়া থেকেই চাষিরা প্রতিবছর আগ্রহ হারান না।

উপজেলা কৃষি অফিসার লোকমান আলম বলেন, “আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর উপজেলায় প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন আলু উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে। আগাম আলুর উৎপাদন ও দাম—উভয়ই কৃষকদের মুখে হাসি উপহার দেবে বলে আশা করছি।”

এখনো অনেক কৃষক আমন ধান উঠোনে তুলতে না তুলতেই একই জমিতে আলুর বীজ রোপণের কাজ শুরু করে দিয়েছেন। ঘরে ঘরে গজানো বীজ শোভাবর্ধন করছে। ১৫–২০ দিনের গজানো বীজ রোপণ করলে ৫০ দিনের মধ্যেই হিমাগারে সংরক্ষণযোগ্য হয়ে ওঠে—এ তথ্য জানিয়ে কৃষি বিভাগ চাষিদের সময়মতো মাঠে নামার পরামর্শ দিয়েছে।

আগাম আলু উত্তোলনের মধ্য দিয়ে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের চাষিদের মধ্যে নতুন করে প্রত্যাশা জেগেছে। অনুকূল আবহাওয়া ও ন্যায্য বাজারদর অব্যাহত থাকলে এ মৌসুমে লোকসান কাটিয়ে লাভের মুখ দেখবেন কৃষকেরা—এমনটাই বলছে মাঠপর্যায়ের বাস্তবতা।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top