নিজস্ব প্রতিনিধি:
সবার মতামত উপেক্ষা করে ২০১১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একক রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের যে রায় ঘোষণা হয়েছিল, সেটিকে অবৈধ বলে অভিহিত করা হচ্ছে নতুন বিশ্লেষণে। উঠে এসেছে আদালতের ভেতরে–বাইরে দেওয়া মতামতের বড় ধরনের অমিলের নানা তথ্য।
তথ্য বলছে—সাত সদস্যের আপিল বেঞ্চে চার বিচারপতির মতামতের ভিত্তিতে ২০১১ সালের ১০ মে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল ঘোষণা করা হয়। এদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক, বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন, বিচারপতি এসকে সিনহা চৌধুরী ও বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
বাকি তিন বিচারপতি—আবদুল ওহাব মিঞা, নাজমুন আরা সুলতানা ও মোহাম্মদ ঈমান আলী—ব্যবস্থা বহাল রাখার পক্ষে ছিলেন।
এর আগে আদালত গঠিত আটজন অ্যামিকাস কিউরির মধ্যে সাতজনই তত্ত্বাবধায়ক বহালের পক্ষে মত দিয়েছিলেন। এমনকি তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও এটিকে অব্যাহত রাখার পরামর্শ দেন।
এদিকে সংসদীয় পর্যবেক্ষণেও উঠে আসে একই চিত্র। ২০১০ সালে গঠিত বিশেষ সংসদীয় কমিটি ২৫টিরও বেশি বৈঠক শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বহাল রাখার সুপারিশ করে। কিন্তু শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের পরপরই সুপারিশ পরিবর্তন হয়ে যায়।
পরে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধান থেকে পুরোপুরি বাদ পড়ে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা।
সুশাসনের জন্য নাগরিক–সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, তত্ত্বাবধায়ক বাতিলের সিদ্ধান্তই আজকের রাজনৈতিক সংকটের বড় কারণ। তার ভাষায়, “এ ব্যবস্থা থাকলে দেশ এ ধরনের অচলাবস্থায় পড়ত না।”
উল্লেখ্য, ১৯৯৬ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত তিনটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে, যা দেশি–বিদেশি পর্যবেক্ষকদের কাছে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্যতা পায়। কিন্তু ২০১১ সালের রায়ের পর অনুষ্ঠিত তিনটি নির্বাচন—২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪—তীব্র বিতর্কের জন্ম দেয়।
২০১২ সালে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পেলেও সরকার তার আগেই ভোটকালীন ব্যবস্থা বাদ দেয়। এতে নির্বাচনী ব্যবস্থা যে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, সেটি এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।