নিজস্ব প্রতিনিধি:
মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় হাইকোর্টের প্রকাশিত পূর্ণাঙ্গ রায়ে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড এবং সাবেক পরিদর্শক মো. লিয়াকত আলীকে সরাসরি চারটি গুলি ছোড়া শুটার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আদালত জানিয়েছে, প্রদীপ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে সিনহার বুকের পাঁজরে জুতার আঘাতে হাড় ভেঙে দেন এবং গলার বাম পাশে পা চেপে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। অন্যদিকে, লিয়াকত পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সরকারি পিস্তল দিয়ে সিনহার শরীরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পরপর চারটি গুলি করেন, যা ময়নাতদন্তে নিশ্চিত হওয়া মৃত্যুর কারণ।
হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের বেঞ্চ ৩৭৮ পৃষ্ঠার এই রায়ে বিচারিক আদালতের প্রদত্ত প্রদীপ ও লিয়াকতের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন। আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, দুই আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ দণ্ড ছাড়া অন্য শাস্তি বিবেচনার সুযোগ নেই।
রায়ে উল্লেখ আছে, সিনহা কক্সবাজার–টেকনাফ এলাকায় ‘জাস্ট গো’ প্রজেক্টের ভিডিও ধারণ করতে গিয়ে প্রদীপ ও তার বাহিনীর গুম, চাঁদাবাজি ও বেআইনি কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করছিলেন। বিষয়টি প্রদীপ জেনে তাকে এলাকা ছাড়ার হুমকি দেন। এরপর প্রদীপ, লিয়াকতসহ আরও কয়েকজন তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে এবং সোর্স নিয়োগ দিয়ে তার গতিবিধি নজরদারি করায়। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে স্থানীয় মসজিদের মাইক ব্যবহার করে সিনহাকে ডাকাত হিসেবে প্রচারও করা হয়।
হত্যাকাণ্ডে ষড়যন্ত্র, সহায়তা ও অভিপ্রায়ের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত সাবেক এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল রুবেল শর্মা, সাগর দেব, নুরুল আমিন, আইয়াজ ও নিজাম উদ্দিনসহ ছয়জনের যাবজ্জীবন দণ্ড বহাল রেখেছেন। আদালত বলেছে, বিচারিক আদালতের রায়ে হস্তক্ষেপের কোনো সুযোগ নেই।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে মেজর (অব.) সিনহা নিহত হন। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে বিচারিক আদালত প্রথম রায় দেয়। হাইকোর্ট ২০২৪ সালের ২ জুন মৃত্যুদণ্ড বহাল ঘোষণা করে এবং আজ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করে।