২৮শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৭ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই অবাধে গরু-ছাগল জবাই: বাড়ছে জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি

মো. সাইফুল ইসলাম, নীলফামারী প্রতিনিধি:

জেলা শহরের বিভিন্ন কসাইখানা ও বাজারে কোনো ধরনের পশুচিকিৎসকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা- নীরিক্ষা ছাড়াই অবাধে গরু-ছাগল জবাই করা হচ্ছে। একইসঙ্গে অনুমোদনহীন এসব স্থানে চলছে মাংস বিক্রির মহোৎসব। এতে সাধারণ ভোক্তারা চরম স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে পড়ছেন।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, শহরের প্রধান বড় বাজারের কাঁচাবাজার , মহল্লাভিত্তিক কসাইঘর ও রাস্তার পাশে গড়ে ওঠা অস্থায়ী স্টলে প্রতিদিনই জবাই হচ্ছে গরু-ছাগল। কিন্তু এসব জবাইয়ের আগে পশুর রোগ পরীক্ষা বা ভেটেরিনারি সার্টিফিকেট প্রদানের কোনো ব্যবস্থা নেই। এমনকি স্থানীয় প্রশাসনের নিয়মিত তদারকি না থাকায় ব্যবসায়ীরা নির্বিঘ্নে এ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

নীলফামারী সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডাঃ এ,কে, এম ফরহাদ নোমান জানান, স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়া পশু জবাই করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এতে অ্যানথ্রাক্স, যক্ষ্মা, ব্রুসেলোসিসসহ নানা প্রাণিজ রোগ মানুষের দেহে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। নিয়ম অনুযায়ী উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের অনুমোদিত কসাইখানায় স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে জবাই করার কথা থাকলেও বাস্তবে তার তেমন কোনো প্রয়োগ নেই।

স্থানীয় এক ক্রেতা মোঃ ফরহাদ আলী বলেন, “মাংস কিনতে এখানে প্রতিদিনই আসি। কিন্তু কোথায় জবাই হচ্ছে বা স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়েছে কি না—তা আমরা জানি না। কর্তৃপক্ষ নজরদারি বাড়ালে ভালো হয়।”

এ বিষয়ে নীলফামারী পৌরসভার প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ সাইদুল ইসলাম জানান, বেশ কয়েকটি স্থানে অভিযান চালানো হলেও জনবল সংকট ও পর্যাপ্ত কসাইখানা না থাকায় বাজারগুলোতে নিয়মিত তদারকি কঠিন হয়ে পড়ে। তবে শিগগিরই এ অব্যবস্থাপনা দূর করতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অপরীক্ষিত মাংস বিক্রেতার মোঃ পাপ্পু বলেন “আমরা অনেক সময় বাধ্য হয়েই দ্রুত মাংস বিক্রি করি। পশু পরীক্ষা করাতে গেলে সময় লাগে, খরচও বাড়ে। ক্রেতাদের চাহিদা বেশি থাকায় দ্রুত জবাই করে বাজারে তুলতে হয়। তবে পশু পরীক্ষার ব্যবস্থা যদি সহজ ও দ্রুত করা হয়, তাহলে আমরাও নিয়ম মেনে মাংস বিক্রি করতে পারব। নিরাপদ খাদ্য সবার প্রয়োজন, আমরাও চাই মাংস বিক্রি হোক নিয়ম অনুযায়ী।”

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রাশেদুল হক বলেন, “অপরীক্ষিত পশু জবাই জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাই অনুমোদিত কসাইখানায় স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে পশু জবাই করতেই হবে। মাংস বিক্রির সময় পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং খোলা জায়গায় মাংস ঝুলিয়ে না রাখা অত্যন্ত জরুরি। নিয়ম ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি আরোও বলেন, নীলফামারীতে পৌরসভার তত্ত্বাবধানে আধুনিক কসাইখানার নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আশা করছি আগামী ১০ দিনের মধ্যেই জেলা প্রশাসক মহোদয় এটি উদ্বোধন করবেন। এরপর সবাই নিয়মের মধ্যে আসবে, আর কেউ আইন অমান্য করলে যথাযথ অভিযান পরিচালনা করা হবে।”

নীলফামারী জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোঃ শামসুল আলম জানান “পশু জবাই ও মাংস বিক্রির ক্ষেত্রে সঠিক নিয়ম-কানুন মানা অত্যন্ত জরুরি। অসুস্থ বা অপরীক্ষিত পশু জবাই করলে জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়ে। তাই অনুমোদিত কসাইখানায় স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে পশু জবাই করার নির্দেশনা আমরা বারবার দিচ্ছি।

মোঃ শামসুল আলম আরোও জানান, মাংস বিপননের সময় পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে হবে, খোলা জায়গায় মাংস ঝুলিয়ে রাখা যাবে না। ব্যবসায়ীদের আমরা অনুরোধ করছি—মানুষের সুস্বাস্থ্যের জন্য নিয়ম মেনে কাজ করুন। নিয়মভঙ্গ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এছাড়াও আমরা মাঠ পর্যায়ে নিয়মিত বাজার মনিটরিং এর ব্যবস্থা এবং সচেতনতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহন করেছি। সকলের সহযোগিতা থাকলে নিরাপদ ও মানসম্মত মাংস সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব।”

সাধারণ ক্রেতারা প্রতিক্রিয়া জানান, “স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়া গরু-ছাগল জবাই হওয়া আমাদের জন্য বড় ঝুঁকি। মাংসটি নিরাপদ কি না—তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে জবাই ও বিক্রি হওয়ায় রোগের আশঙ্কা বাড়ে। আমরা চাই নিয়মিত নজরদারি ও ভেটেরিনারি সার্টিফিকেট নিশ্চিত করা হোক, যাতে ক্রেতারা অন্তত নিরাপদ মাংস পেতে পারে।”

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনুমোদনহীন ভাবে পশু জবাই ও মাংস বিক্রি বন্ধে প্রশাসনকে কঠোর নজরদারি এবং সচেতনতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি ভোক্তাদেরও নিরাপদ মাংস নিশ্চিত করতে সনদপ্রাপ্ত দোকান থেকে মাংস কেনার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top