৬ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২১শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৫ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

বুড়ি তিস্তা নদী খনন প্রকল্পের প্রতিবাদে ডিমলায় মশাল মিছিল

মো. সাইফুল ইসলাম, নীলফামারী প্রতিনিধি:

নীলফামারীর ডিমলায় বুড়ি তিস্তা নদী খনন প্রকল্পের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী মশাল মিছিল করেছেন। শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) রাতে উপজেলার কুটিরডাঙ্গা গ্রাম থেকে প্রায় পাঁচ হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু মশাল হাতে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া স্থানীয়দের অভিযোগ, বুড়ি তিস্তা নদী খনন করা হলে তিন থেকে চার ফসলি জমি বিলীন হয়ে যাবে এবং হাজার হাজার পরিবার বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বর্তমানে এই এলাকায় ধান, ভুট্টা, আলু, মরিচ, পেঁয়াজসহ একাধিক মৌসুমী ফসলের আবাদ হয়।

এলাকাবাসী আরও জানান, নদী খনন বিরোধী আন্দোলন শুরু হয় ২০০৯ সালে। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে এবং বিভিন্ন মামলার সৃষ্টি হয়। তারা প্রকল্প বাতিলসহ সব মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।

‘জনগোষ্ঠী’ নামে এলাকাবাসীর সংগঠনের মুখপাত্র আব্দুল আলিম বলেন, “২০২৫ সালে অনুমোদিত একটি ভুয়া প্রকল্পের মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ড তিন ফসলি জমি নষ্ট করতে চায়। জমির মূল মালিক স্থানীয়রা হলেও নদী খননের নামে আমাদের জমি দখলে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। আমরা এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে দেব না।”

স্থানীয় হেকিম শামিম বলেন, “এখানে ৫ গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ বসবাস করে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত দালালরা বিভিন্নভাবে আমাদের হুমকি দিচ্ছে। আমাদের কথা কেউ শুনছে না। এত বড় বিষয়েও প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কেউ এলাকায় আসছেন না।”

অন্যদিকে, নদী খনন নিয়ে ভিন্ন মত প্রকাশ করেন স্থানীয় জাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, “আমরা নদী খননের পক্ষে। তবে প্রকল্পের নামে কেন শুধু মাঝখানে খনন? নদী খনন করতে হলে পুরো ৭৬ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে করতে হবে। আমরা আমাদের জমি ছেড়ে দিতে প্রস্তুত। শুধু সঠিকভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন হোক।”

তিনি আরও দাবি করেন, ২০০৯ সাল থেকে শুরু হওয়া আন্দোলনের মধ্যে ২০১৮ সাল থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ড ১১টি মামলা দায়ের করে প্রায় ৭৫০ জন কৃষকের নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। এতে কৃষকরা নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। এর প্রতিবাদে এলাকাবাসী নীলফামারী আদালতে সিভিল মামলা দায়ের করেছেন।

এ বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে দায়িত্বশীলরা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান করা হবে।

পাউবো কর্তৃপক্ষ জানায়, “বুড়ি তিস্তা নদী খনন প্রকল্পটি স্থানীয় জলাবদ্রতা নিরসন, কৃষি জমিতে সেচ সুবিধা বৃদ্ধি এবং নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ পুনঃস্থাপনের লক্ষ্যে গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন, ভূমি জরিপ ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মতামত নেওয়া হয়েছে।

আমরা স্থানীয় জনগণের উদ্বেগ ও মতামতকে শ্রদ্ধা করি। প্রকল্পের কোথাও যদি ভুল তথ্য, দুর্বোধ্যতা বা আশঙ্কা থেকে থাকে, আমরা আলোচনার মাধ্যমে তা নিরসনে আগ্রহী। এলাকাবাসীর সম্পদ, তিন ফসলি জমি ও পরিবেশের ক্ষতি না করে এলাকার উন্নয়ন নিশ্চিত করাই আমাদের উদ্দেশ্য।

যেকোনো বিষয়ে ভুল বোঝাবুঝি থাকলে স্থানীয় কৃষক, জনসংগঠন ও জনপ্রতিনিধিদের সাথে বসে আমরা যৌথভাবে সমাধান খুঁজে নেব। পাউবো বিশ্বাস করে—উন্নয়ন হবে জনগণের অংশীদারিত্ব ও মতামতের ভিত্তিতে।”

এর আগে ২ ডিসেম্বর বুড়ি তিস্তা নদী খননকে ঘিরে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে ব্যারেজ এলাকায় যন্ত্রপাতি নিয়ে প্রবেশের সময় স্থানীয়দের প্রতিরোধের মুখে পড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ, আনসার ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top