৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৭ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে অফিস, টিনসেডে শিশুদের পাঠদান

মো. সাইফুল ইসলাম, নীলফামারী প্রতিনিধি:

ভূমিকম্পের ঝুঁকি ও জরাজীর্ণ ভবনের মধ্যেও অফিস কার্যক্রম পরিচালনা এবং টিনসেড কক্ষে পাঠদান চলছে নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার পশ্চিম কাঁঠালি সার্বজনীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বিদ্যালয়টি ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে ১৯৯২-৯৩ সালে পাকা ভবন নির্মিত হলেও বর্তমানে সেটি একেবারেই নড়বড়ে ও ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের ভিতরে রয়েছে প্রধান শিক্ষক কক্ষসহ অফিসিয়াল কার্যক্রম। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে একটি অস্থায়ী টিনসেড ভবনে। শিক্ষার্থী-শিক্ষকরা প্রতিদিন ভয় ও শঙ্কা নিয়ে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করছেন।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দক্ষদা মোহন রায় বলেন, “অসহায় ও মধ্যবিত্ত পরিবারের শিশুরা স্বপ্ন নিয়ে প্রতিদিন স্কুলে আসে। আমরা চাই তাদের জন্য নিরাপদ একটি স্থায়ী ভবন। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করা হলেও এখনও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা হয়নি।” তিনি জানান, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হয়েছিল তার বড় ভাই আদিত্য কৃষ্ণ রায়ের দানকৃত জমির ওপর।

বর্তমানে বিদ্যালয়ে ৬ জন সহকারী শিক্ষক এবং প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ১৩০ জন শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের কারণে শিক্ষকরা যেকোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কায় রয়েছেন। ছাদের পলেস্তার খসে পড়া ও দেওয়ালে ফাটল ভবনটিকে আরও অনিরাপদ করে তুলেছে।

বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক আদিত্য কৃষ্ণ রায় বলেন, “১৯৯২-৯৩ সালে নির্মিত ভবনটিতেই এতদিন বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলেছে। এখন এটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে টিনসেড ভবন তৈরি করে ক্লাস চালানো হচ্ছে। নতুন ভবন নির্মাণ হলে শিক্ষার্থীরা আনন্দ-উল্লাসে পাঠ নিতে পারবে এবং শিক্ষকরা নিরাপদ থাকবেন।”

এ বিষয়ে জলঢাকা উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আরামানা জাহান সিদ্দীকা বলেন, “বিদ্যালয়টি নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রয়েছে। নতুন ভবনের জন্য সুপারিশ পাঠানো হয়েছে এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এই বিষয়ে প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আশা করি দ্রুতই নতুন ভবন নির্মাণের অনুমোদন মিলবে।”

স্থানীয় অভিভাবক ও গ্রামবাসীর দাবি—এই বিদ্যালয়ই তাদের একমাত্র শিক্ষার ভরসা। দূরের বিদ্যালয়ে শিশুদের পাঠানো সম্ভব নয়। তাই দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের।

স্থানীয় কৃষক নির্মল চন্দ্র রায় বলেন, “আমাদের সন্তানরা ঝুঁকি নিয়ে পড়তে যায়। ভয় আতঙ্ক নিয়ে থাকে। সরকার যদি নতুন ভবন করে দেয়, তাহলে গ্রামের উন্নতি হবে।”

শিক্ষার্থীরাও জানায়, নিরাপদ ভবনে পড়াশোনা করলে তারা অনেক খুশি হবে।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. আব্দুস ছামাদ বলেন, “শিক্ষার্থীদের নিরাপদ পরিবেশে পাঠদানের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। গত ২০ ডিসেম্বর ভবনটি নিলাম করে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করা হয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে অনুমোদন মিলবে বলে আমরা আশাবাদী।”

দীর্ঘদিন অবহেলিত এই বিদ্যালয়টি নতুন ভবনের অপেক্ষায় রয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসীর প্রত্যাশা—দ্রুত প্রয়োজনীয় অনুমোদন ও বরাদ্দ দিয়ে ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে, যাতে গ্রামের শিশুরা নিরাপদ পরিবেশে ভবিষ্যতের স্বপ্ন বুকে নিয়ে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top