মো.সাইফুল ইসলাম, নীলফামারী প্রতিনিধি:
টিস্যু কালচারের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আলুবীজ উৎপাদনে নতুন দিগন্ত সৃষ্টি করেছে নীলফামারীর ডোমার ভিত্তি আলুবীজ খামার। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) অধীন পরিচালিত এই খামারটিতে প্রতিবছর প্রায় ১৭–১৮টি উন্নত জাতের মোট ২৫ লাখ ভাইরাসমুক্ত প্লান্টলেট উৎপাদন করা হচ্ছে। এখান থেকেই ধাপে ধাপে উৎপাদিত হচ্ছে মিনিটিউবার, প্রাকভিত্তি, ভিত্তি ও প্রত্যায়িত আলুবীজ, যা পরে কৃষক পর্যায়ে পৌঁছায়।
১৯৫৭-৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ডোমার আলুবীজ উৎপাদন খামারটি ১৯৮৯-৯০ অর্থবছর থেকে আলুবীজ বিভাগে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর কার্যক্রমে বড় পরিবর্তন আসে। বর্তমানে মূল খামারের আয়তন ৫১৪.৪৮ একর এবং এর আওতায় দেবীগঞ্জে আরও ৮৬.২৯ একর জমিতে আলুবীজ উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

খামারের প্রধান শক্তি ৭টি অত্যাধুনিক টিস্যুকালচার ল্যাবরেটরি, যেখানে দক্ষ জনবল ও উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে বার্ষিক ২৫ লাখ প্লান্টলেট উৎপাদন করা হয়।
খামারটির নিজস্ব হিমাগারের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিএডিসির ৩২টি হিমাগার জোনে বীজ সংরক্ষণ ব্যবস্থা রয়েছে। পুরো প্রক্রিয়া শেষে বছরে প্রায় ৪০–৫০ হাজার মেট্রিক টন মানসম্পন্ন আলুবীজ কৃষক পর্যায়ে পৌঁছায়, যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
ডোমার বিএডিসি খামার সুত্র জানায়, চলতি মৌসুমে বিএডিসি ১৮টি জাতের মোট ২৫ লাখ প্লান্টলেট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য জাত হলো—
বিএডিসি আলু-১ (সানসাইন), আলু-৩ (সানতানা), আলু-৬ (কুমবিকা), আলু-৭ (কুইন অ্যানি), আলু-৮ (লেবেলা), বারিআলু-৭ (ডায়মন্ট), বারিআলু-৮ (কার্ডিনাল), বারিআলু-১৩ (গ্রানোলা), বারিআলু-২৫ (এস্টারিক্স), বারিআলু-২৯ (কারেজ), বারিআলু-২৮ (লেডিরোসেটা), বারিআলু-৫৪ (মিউজিকা), বারিআলু-৮৫ (৭ ফোর ৭), বারিআলু-৯০ (এলোয়েট), সাগিত, বারিআলু-৬২ ও বারিআলু-৮৬।
ডোমার খামারের উৎপাদন ব্যবস্থাপনা, প্রযুক্তি উন্নয়ন ও ল্যাব আধুনিকীকরণে নেতৃত্ব দিচ্ছেন খামারের উপপরিচালক মো. আবু তালেব মিঞা। তার নেতৃত্বে ল্যাবগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি, বীজ উৎপাদনের প্রতিটি ধাপে দক্ষতা ও স্বচ্ছতা, মাঠপর্যায়ে কার্যক্রম তদারকি এবং আধুনিক কৃষি ব্যবস্থাপনার সমন্বয় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে বলে খামারের কর্মকর্তারা জানান।
খামারের সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে উপপরিচালক মো. আবু তালেব মিঞা বলেন,
“ডোমার ভিত্তি আলুবীজ উৎপাদন খামার দেশের আলুবীজ উৎপাদনের কেন্দ্রবিন্দু। আমাদের ল্যাবগুলোতে উৎপাদিত ভাইরাসমুক্ত প্লান্টলেট থেকে লক্ষ লক্ষ কৃষক উপকৃত হন। বীজের গুণগত মান বজায় রাখতে আমরা কঠোর নজরদারি করি এবং সময়মতো প্রতিটি ধাপ সম্পন্ন করি। দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় আলুবীজের বড় অংশই এই খামার থেকে আসে—এটাই আমাদের গর্ব।”
তিনি আরও জানান, চলতি মৌসুমে ২৫ লাখ প্লান্টলেট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ইতোমধ্যে অর্জিত হয়েছে এবং মাঠপর্যায়ে রোপণ ও হার্ডেনিং কার্যক্রম চলছে।
উল্লেখ্য, ভাইরাসমুক্ত আলুবীজ উৎপাদন ও সরবরাহে ডোমার খামার বর্তমানে দেশের অন্যতম নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত। আধুনিক প্রযুক্তি, মাননির্ভর উৎপাদন ব্যবস্থা এবং দক্ষ জনবলের সমন্বয়ে বাংলাদেশের আলুচাষে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে এই খামার।