১১ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২০শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

ডোমারে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু: ক্লিনিকের ওটি সিলগালা

মো. সাইফুল ইসলাম,  নীলফামারী প্রতিনিধি:

নীলফামারীর ডোমারে ভুল চিকিৎসার অভিযোগে এক প্রসূতির মৃত্যুর পর বেসরকারি ‘ডোমার জেনারেল ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার’ এর অপারেশন থিয়েটার (ওটি) সিলগালা করেছে প্রশাসন।

বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে ডোমারের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুন্না রানী চন্দের নেতৃত্বে গঠিত একটি তদন্ত দল ক্লিনিকে অভিযান চালিয়ে ওটি সিলগালা করেন।

তদন্তে জানা গেছে—ক্লিনিকে নিয়ম অনুযায়ী কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই, প্রয়োজনীয় ট্রেড লাইসেন্স নেই এবং অধিকাংশ স্টাফ প্রশিক্ষিত নয়। এতে ক্লিনিকের পরিচালনা ও চিকিৎসা কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

মারা যাওয়া প্রসূতির নাম লক্ষ্মী রায় (২৫)। তিনি ডোমার উপজেলার হরিনচড়া ইউনিয়নের নীলাহাটি শালমারা গ্রামের বাসিন্দা তাপস কুমার রায়ের স্ত্রী। পরিবারের অভিযোগ, ক্লিনিকের গাইনি বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত ডা. অরাতুল আক্তার বিভার ভুল চিকিৎসার কারণে লক্ষ্মীর মৃত্যু হয়েছে।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২১ নভেম্বর গর্ভাবস্থায় শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে লক্ষ্মীকে ওই ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জরুরি সিজারের পরামর্শ দেন ডাক্তার। পরিবারের সম্মতিতে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নবজাতক কন্যাশিশুর জন্ম হয়।

তবে সিজারের দুইদিন পর থেকেই লক্ষ্মীর শারীরিক অবনতি শুরু হয়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে সংকটাপন্ন অবস্থায় তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে রংপুরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে দুই সপ্তাহ চিকিৎসাধীন থাকার পর ৮ ডিসেম্বর বিকেলে তিনি মারা যান। নবজাতক সুস্থ আছে বলে পরিবার জানিয়েছে।

নিহতের স্বামী তাপস কুমার রায় বলেন, “ভুল চিকিৎসার কারণেই আমার স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসায় প্রায় ১২ লাখ টাকা খরচ হলেও কোনো লাভ হয়নি। যেন আর কোনো পরিবার এমন ক্ষতির মুখে না পড়ে, তাই কঠোর ব্যবস্থা জরুরি।”

হরিনচড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রাসেল রানা জানান, ঘটনাটি জানার পর প্রতিনিধি পাঠানো হয় এবং প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে ক্লিনিকের পক্ষ থেকে মো. জাহাঙ্গীর ইসলাম বলেন, “সিজারের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হয়নি। বিষয়টি অকারণে বড় করে দেখানো হচ্ছে।”

গাইনি চিকিৎসক ডা. অরাতুল আক্তার বিভা বলেন, “সিজারের সময় কোনো জটিলতা ছিল না। রোগীর জন্মগত কিডনি সমস্যা ছিল। এজন্য ডায়ালাইসিসের জন্য রেফার করা হয়। কিন্তু স্বজনেরা কিডনি বিভাগে না গিয়ে গাইনি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন।”

তদন্ত কমিটির সদস্য ডা. মো. আইনুল হক বলেন, “ক্লিনিকে কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই, ট্রেড লাইসেন্স নেই এবং স্টাফের অধিকাংশই প্রশিক্ষণহীন। প্রয়োজনীয় নথি দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে কর্তৃপক্ষ। এসব অনিয়মের ভিত্তিতে ওটি সিলগালা করা হয়েছে।”

উল্লেখ্য, একই ক্লিনিক ২০২৩ সালেও ভুল চিকিৎসা বিতর্কে সমালোচিত হয়। তখন পেটব্যথা নিয়ে আসা ১৩ বছরের এক মাদরাসাছাত্রীকে গর্ভবতী বলে ভুল রিপোর্ট দেয়ায় এলাকাবাসীর তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত ক্লিনিকটি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top