১৩ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২২শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

নরসিংদী হানাদারমুক্ত দিবস আজ: গৌরব, ত্যাগ আর বিজয়ের ৫৪ বছর

সাদ্দাম উদ্দিন রাজ, নরসিংদী প্রতিনিধি:

বিজয়ের মাস ডিসেম্বর—বাঙালির অহংকার, গৌরব ও আত্মমর্যাদার মাস। আজ থেকে ঠিক ৫৪ বছর আগে, ১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পরাজয় ও আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে নরসিংদী হানাদারমুক্ত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ এ দিনটি নরসিংদীবাসীর কাছে আজও এক অবিস্মরণীয়, গৌরবোজ্জ্বল ও আবেগঘন স্মৃতি।

দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে নরসিংদী জেলায় সংঘটিত হয় শতাধিক খণ্ডযুদ্ধ। এসব যুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর নির্মমতা ও নৃশংসতার শিকার হয়ে ১১৬ জন বীর সন্তান শহীদ হন। এর মধ্যে নরসিংদী সদরে ২৭, মনোহরদীতে ১২, পলাশে ১১, শিবপুরে ১৩, রায়পুরায় ৩৭ ও বেলাবো উপজেলায় ১৬ জন শহীদ হন। এছাড়া সশস্ত্র হামলার সময় অসংখ্য নারী-পুরুষকে হত্যা করে গণকবর দেয় হানাদার বাহিনী। সেই দিনগুলোর নির্মমতা মনে হলে এখনো শিউরে ওঠেন এলাকাবাসী।

ঢাকার সন্নিকটে অবস্থান হওয়ায় নরসিংদী ছিল মুক্তিযুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধাঞ্চল। দেশমাতৃকার ডাকে সাড়া দিয়ে জেলার আপামর জনসাধারণ সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র প্রতিরোধ, আক্রমণ ও ঘাঁটি ভাঙার লড়াই একসময় হানাদারদের পরাজয়ের পথে ঠেলে দেয়। মার্চ থেকেই মুক্তিযোদ্ধারা সশস্ত্র যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করেন এবং একের পর এক আক্রমণে দুর্বল করে তোলেন দখলদার বাহিনীকে। শেষ পর্যন্ত ১২ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনারা পরাজয় ও আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।

মুক্তিযুদ্ধের সময় নরসিংদী জেলা ছিল ২ নম্বর সেক্টরের অধীনে, যার কমান্ডার ছিলেন তৎকালীন মেজর জেনারেল সফিউল্লাহ। পরে জেলার কিছু অংশ ৩ নম্বর সেক্টরের অধীনেও অন্তর্ভুক্ত হলে ব্রিগেডিয়ার (অব.) এএসএম নুরুজ্জামান কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন।

নরসিংদীকে মুক্ত করতে যেসব এলাকায় বড় যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য—
বাঘবাড়ী, পালবাড়ী, আলগী, পাঁচদোনা, পুটিয়া, চলনদীয়া, হাতিরদীয়া বাজার, শ্রীরামপুর বাজার, রামনগর, মেথিকান্দা, হাঁটুভাঙ্গা, বাঙালীনগর, খানাবাড়ী, বেলাব বাজার, বড়িবাড়ী, নারায়ণপুর ও নীলকুঠি।
এ স্থানগুলো আজও সেই রক্তঝরা দিনের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

দিবসটি উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধারা বলেন—
“নরসিংদীর মানুষ আজও গর্বের সঙ্গে স্মরণ করে ১২ ডিসেম্বরকে। শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।”

বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অগাধ কৃতজ্ঞতা আর স্বাধীনতার চেতনাকে বুকে ধারণ করেই আজ নরসিংদীবাসী পালন করছে তাদের হানাদারমুক্ত দিবস

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top