১৩ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২২শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

ওসমান হাদিকে গুলি করেন নানক–কামালের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ফয়সাল করিম মাসুদ

নিজস্ব প্রতিনিধি:

ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় একজন সন্দেহভাজনের সম্পৃক্ততার দাবি সামনে এসেছে। দৈনিক আমার দেশ–এর হাতে পাওয়া কয়েকটি ছবিতে ওই ব্যক্তিকে হামলার আগে ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে হাদির পাশেই বসে থাকতে দেখা গেছে বলে জানানো হয়েছে। তবে সংবাদমাধ্যমটি তার পরিচয় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেনি।

এদিকে আল-জাজিরার অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে দাবি করেন, সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তির নাম ফয়সাল করিম মাসুদ (ছদ্মনাম দাউদ বিন ফয়সাল)। তার দাবি অনুযায়ী, তিনি সাবেক ছাত্রলীগ নেতা—ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এবং আদাবর থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। সায়ের আরও অভিযোগ করেন, ওই ব্যক্তি সাবেক মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আসাদুজ্জামান খান কামালের ঘনিষ্ঠ অনুসারী।

আরেকটি পোস্টে জুলকারনাইন সায়ের দাবি করেন, ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান এর আগে ২০২৪ সালের ৮ নভেম্বর ঢাকার আদাবরে একটি স্কুলে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। সে সময় তার কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও পাঁচ রাউন্ড গুলি জব্দ করা হয়েছিল বলেও উল্লেখ করেন তিনি। একই সঙ্গে তিনি প্রশ্ন তোলেন—এমন একজন ব্যক্তি কীভাবে জামিন পেয়েছেন।

আমার দেশ–এর প্রতিবেদনে বলা হয়, তাদের হাতে থাকা ছবিগুলোর একটি চলতি মাসের ৯ তারিখে তোলা, যেখানে ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে হাদির পাশে বসে থাকা ওই ব্যক্তিকে দেখা যায়। সেদিন তারা একসঙ্গেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) জুমার নামাজের পর বেলা ২টা ২৫ মিনিটে রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় শরিফ ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, মোটরসাইকেলে আসা দুর্বৃত্তরা হাদিকে গুলি করে দ্রুত পালিয়ে যায়। তিনি বলেন, হামলাকারীরা তিনটি মোটরসাইকেলে করে এসেছিল। রমনা বিভাগের ডিসি মাসুদ আলম গুলিবিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

হাদির এক সহযোদ্ধা জানান, জুমার নামাজের পর মসজিদে লিফলেট বিতরণের কর্মসূচি ছিল তাদের। কর্মসূচি শেষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একত্র হয়ে দুপুরের খাবার খাওয়ার পরিকল্পনা ছিল।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক চিকিৎসকদের বরাতে জানান, মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাদিকে জরুরি বিভাগে আনা হলে তাকে আইসিইউতে রাখা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসকদের মতে, হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন। গুলি বাম কানের ওপর দিয়ে ঢুকে ডান পাশ দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ায় ব্রেনস্টেম পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা ‘ম্যাসিভ ব্রেন ইনজুরি’ হিসেবে বিবেচিত। আগামী ৭২ ঘণ্টা তার জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

এর আগে গত ১৩ নভেম্বর গভীর রাতে দেওয়া এক ফেসবুক পোস্টে শরিফ ওসমান হাদি দাবি করেছিলেন, তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে এবং এর জন্য তিনি সরাসরি আওয়ামী লীগকে দায়ী করেন। ওই পোস্টে তিনি জানান, বিদেশি নম্বর থেকে একাধিক হুমকিমূলক কল পেয়েছেন এবং পরিবারসহ তাকে টার্গেট করা হচ্ছে। হুমকির মুখেও আন্দোলনের পথ থেকে সরে দাঁড়াবেন না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top