মোঃ নজরুল ইসলাম, শেরপুর প্রতিনিধি:
বাংলাদেশের উত্তর-মধ্যাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন হলো গড়জরিপা বারদুয়ারী মসজিদ। শেরপুর ও জামালপুর জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত এ মসজিদটি শুধু ধর্মীয় স্থানই নয়, বরং মধ্যযুগীয় বাংলার মুসলিম স্থাপত্যশৈলীর এক জ্বলন্ত সাক্ষী।
জনশ্রুতি অনুসারে, প্রায় সাত-আটশত বছর পূর্বে জরিপ শাহ নামক এক প্রভাবশালী মুসলিম শাসক বা সুফি সাধকের নির্দেশে এ মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল। মসজিদটির নামকরণ হয়েছে এর বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী — চারদিকের মোট বারোটি দরজা থাকায় এটি ‘বারদুয়ারী মসজিদ’ নামে পরিচিত।
বর্তমান অবস্থা ও পুনর্নির্মাণ
বর্তমানে আসল প্রাচীন মসজিদটি ভূগর্ভে চাপা পড়ে আছে। তার ওপরেই নতুন করে পুনর্নির্মাণ করা হচ্ছে একটি আধুনিক মসজিদ। জামালপুর সদর উপজেলার তিতপল্লা ইউনিয়নের পিঙ্গলহাটী (কুতুবনগর) গ্রামে, ব্রাহ্মণঝি বিলের উত্তর পাড়ে এটি অবস্থিত। স্থানীয় পীর আজিজুল হক সাহেবের উদ্যোগে খননকার্য চালানো হলে প্রাচীন মসজিদের ধ্বংসাবশেষ উন্মোচিত হয়। খননকৃত ইটের আকার, কৌশল ও নকশায় গৌড় অঞ্চলের বিখ্যাত খান জাহান আলী প্রণীত ‘খান বাড়ী মসজিদ’-এর সঙ্গে আশ্চর্যজনক মিল পাওয়া গেছে।
স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য
পুনর্নির্মিত মসজিদটি প্রাচীন ও আধুনিক স্থাপত্যের এক অপূর্ব সংমিশ্রণ। মেহরাব ও কার্নিশে রয়েছে অত্যন্ত নিপুণ কারুকাজ, যা দর্শকের মন কেড়ে নেয়। বারোটি দরজার নকশা পুরোপুরি ধরে রাখা হয়েছে, যাতে ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ণ থাকে।
আশেপাশের ঐতিহাসিক নিদর্শন
মসজিদের অদূরে রয়েছে জরিপ শাহের মাজার। তার কিছুটা দূরে অবস্থিত কালিদহ সাগর — যে দীঘির সঙ্গে জড়িয়ে আছে মধ্যযুগীয় বাংলার কিংবদন্তি চাঁদ সওদাগরের নৌকা ডোবার কাহিনি। এখনো দীঘির আকৃতিতে নৌকার ছায়া অনুমান করা যায়।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
এ অঞ্চলের মাটির নিচে এখনো লুকিয়ে আছে হাজার বছরের প্রাচীন সভ্যতার নানা নিদর্শন। নিয়মতান্ত্রিক প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্য চালালে এ এলাকা বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নক্ষেত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে।
গড়জরিপা বারদুয়ারী মসজিদ কেবল একটি উপাসনালয় নয় — এটি আমাদের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য, স্থাপত্যকলা ও সাংস্কৃতিক ধারাবাহিকতার এক জীবন্ত দলিল। একবার এখানে এসে দাঁড়ালে যে কোনো চিন্তাশীল মানুষের মনে জাগবে অতীতের স্মৃতি আর ভবিষ্যতের দায়বোধ।