মোঃ আমিরুল হক, রাজবাড়ী প্রতিনিধি:
জীবনের শুরুটা কোনরকমই সহজ ছিল না। দারিদ্র্যের জন্য বহুবার থেমে গেছে শৈশবে তার মুখের হাসি। ঠিকমতো জোটেনি দু’বেলা দু’মুঠো আহার। অনেক সময় ক্ষুধার্ত অবস্থায়ই যেতে হতো প্রাইমারী স্কুলে। কিন্তু এসব কষ্টও থামাতে পারেনি তার স্বপ্ন দেখা চোখটাকে। স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া চালিয়ে গেছেন পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত। প্রাথমিকের গোন্ডী পেরেনোর আগেই অল্প বয়সে পিতৃহারা হয়ে সংসারের বোঝা কাঁধে তুলে নিতে হয়েছিলো তার। জীবনটাকে বাস্তবের সাথে যুদ্ধ করতে করতে এগিয়ে চলেন তিনি। দুই ভাই আর চার বোন ও মা’কে নিয়ে সংসারে দু’বেলা অন্ন যোগানোর দ্বায়িত্ব তারই উপর ন্যাস্ত। পেশা হিসাবে বেছে নেন পায়ে চালানো ভ্যান। সে যখন ভ্যানের হ্যান্ডেল ধরেন তখনো ব্যাটারি চালিত ভ্যান আবিষ্কার হয়নি। জীবনের চাকা ঘোড়াতে ছোট্ট আব্দুল প্যাডেল চালিত ভ্যানে প্যাডেল মারা শুরু করে জীবনের চাকা ঘোড়াতে ব্যস্ত।
কে এই আব্দুল্লাহ! মোঃ আব্দুল্লাহ ওরফে আব্দুল মোল্লো রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দী উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নে নারায়নপুর গ্রামের মৃত আজগর আলী মোল্লার ছেলে। তার জন্ম ১৯৮৬ সালে। স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণীর গোন্ডি পেরুতে পারলেও অর্থের অভাবে পড়াশোনায় আর এগোতে পারেননি দরিদ্র আব্দুল্লাহ। আজ সেই ছেলেটিই রাজবাড়ী জেলার বিভিন্ন ক্রিকেট ও ফুটবল টুর্নামেন্টের মাঠে দর্শকদের প্রিয় মুখ, মিষ্টি সুরেলা ভাষার ধারাভাষ্যকার আব্দুল্লাহ। ফুটবল হোক কিংবা ক্রিকেট, মাঠে মাইক্রোফোন হাতে ছন্দময় কণ্ঠে খেলা উপভোগ করতে আশা দর্শকরা যেন খুঁজে পান অন্যরকম এক আনন্দময় টানটান উত্তেজনা। কথার জাদুতে মাতিয়ে তোলেন গ্যালারির প্রতিটি দর্শককে।
শিক্ষাগত যোগ্যতা সীমিত হলেও তার প্রতিভা, আত্মবিশ্বাস আর প্রাণবন্ত উপস্থাপনা আজ তাকে এনে দিয়েছে অগণিত শ্রোতার ভালোবাসা। রাজবাড়ী জেলার প্রতিটি খেলার মাঠেই এখন পরিচিত নাম ‘আবদুল্লাহ’।
স্থানীয়রা বলেন, “আবদুল্লাহ মাঠে মাইক্রোফোন ধরলেই খেলার উত্তেজনা বেড়ে যায়, খেলায় প্রাণ ফিরে পায় । তার ভাষায় খেলায় যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে খেলার মাঠ।” দারিদ্র্য ও সংগ্রামের মধ্য দিয়েও এগিয়ে চলা এই তরুণের গল্প অনুপ্রেরণার। “জীবনের কষ্ট, অপূর্ণতা, অভাব সবকিছুকে জয় করে তিনি আজ পরিণত হয়েছেন এক ‘মন মাতানো কথার যাদুকরে।