নিজস্ব প্রতিনিধি:
জুলাই বিপ্লবের অগ্রনায়ক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সোমবার (আজ) দুপুরে তাকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে মেডিকেল এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া, চিকিৎসক দল এবং ভ্রমণসংক্রান্ত সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। যদিও হাদির পরিবার থাইল্যান্ডে নেওয়ার বিষয়ে বেশি আগ্রহী ছিল বলে জানা গেছে।
গতকাল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে এক জরুরি কল কনফারেন্সে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে অংশ নেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান, এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. জাফর ইকবাল এবং ওসমান হাদির ভাই ওমর বিন হাদি। এর আগে গত দুই দিন ধরে সরকার সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার একাধিক হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করে চিকিৎসার সম্ভাবনা যাচাই করে।
ডা. সায়েদুর রহমান প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, বর্তমানে হাদির শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। সোমবার দুপুরে তাকে সিঙ্গাপুর নেওয়ার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় মেডিকেল এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসক দল এবং আনুষঙ্গিক সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের অ্যাক্সিডেন্ট অ্যান্ড ইমার্জেন্সি বিভাগে তার চিকিৎসার সব ধরনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। হাদির চিকিৎসাসংক্রান্ত সব ব্যয় রাষ্ট্রীয়ভাবে বহন করা হবে। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা চিকিৎসার অগ্রগতি সম্পর্কে নিয়মিত অবহিত থাকার নির্দেশ দেন এবং হাদির দ্রুত সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া কামনা করেন।
এদিকে, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও আসন্ন সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ওসমান হাদির সার্বিক অবস্থা এখনো অত্যন্ত আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে তার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ড। যদিও তার কিডনি ও ফুসফুসের কার্যক্ষমতা সচল রয়েছে, তবে মস্তিষ্কে অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে সর্বোচ্চ মৃত্যুঝুঁকি এখনো বিদ্যমান।
চিকিৎসা বোর্ডের সদস্য এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ নিউরোসার্জারি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ও ন্যাশনাল হেলথ অ্যালায়েন্সের (এনএইচএ) সদস্য সচিব আবদুল আহাদ জানান, নতুন করে করা সিটি স্ক্যানে মস্তিষ্কে অক্সিজেন স্বল্পতা ধরা পড়েছে। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে হাদির সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা নিয়ে মেডিকেল বোর্ড বৈঠকে বসে।
মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ও এভারকেয়ার হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. জাফর ইকবালের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রোববার সকালে পুনরায় করা সিটি স্ক্যানে দেখা গেছে হাদির মস্তিষ্কের ফোলা আগের তুলনায় আরও বেড়েছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ফুসফুসের কার্যকারিতা ও মেকানিক্যাল ভেন্টিলেটরের অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল রয়েছে। চেস্ট ড্রেইন টিউব সচল আছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, রোগীর কিডনির কার্যক্ষমতা বজায় আছে এবং ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা কিছুটা কমেছে। তবে ব্রেন ইনজুরির কারণে হরমোনগত ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়েছে, যা ইউরিন উৎপাদনে প্রভাব ফেলছে। এ কারণে অ্যাসিড-বেস ব্যালান্স, ফ্লুইড ও ইলেক্ট্রোলাইট অত্যন্ত নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
এ ছাড়া ব্রেন স্টেমে আঘাত ও অতিরিক্ত মস্তিষ্ক ফোলার কারণে রোগীর রক্তচাপে ওঠানামা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রোববার হাদির হৃৎস্পন্দন স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বেশি ছিল। রক্তচাপ ও হৃদযন্ত্রের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় মেডিকেল সাপোর্ট চলমান রয়েছে। ব্লাড সুগারও নিবিড়ভাবে মনিটর করা হচ্ছে। মেডিকেল বোর্ড জানিয়েছে, রোগীর সার্বিক অবস্থা এখনো অত্যন্ত সংকটাপন্ন হলেও সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব ও সমন্বয়ের মাধ্যমে সর্বোত্তম চিকিৎসা নিশ্চিত করতে তারা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।