১৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২রা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৬শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের: রাজবাড়ীতে বসতবাড়ীতে নারকীয় তান্ডব হামলা-ভাংচুর ফসল-স্বর্ণালংকার ও সর্বস্ব লুট

মোঃ আমিরুল হক, রাজবাড়ী প্রতিনিধি:

জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধকে পুঁজি করে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের দোপপাড়া পদমদী এলাকায় এক কৃষকের বাড়ীতে নারকীয় তান্ডব চালিয়েছে একটি প্রভাবশালী চক্র।

এসময় পুরো বাড়ীতে হামলা, ভাংচুর সহ ঘরের মধ্যে থাকা ফ্রিজ, টেলিভিশন, মোবাইল ফোন, মূল্যবান, খাট, ড্রেসিং টেবিল, সোফাসেট, সোকেচ, হাড়ি-পাতিল, হাঁস-মুরগি, কবুতর, লেপ-তোষক, বিছানাপত্র, মালামাল ভাংচুর, ক্ষেতের ফসল ক্ষতিসাধন ও লুট করে নিয়েছে।

ঘরে থাকা স্বর্ণালংকার সহ মালামাল প্রকাশ্যে দিবালোকে নিয়ে গেছে। এ ঘটনায় বালিয়াকান্দি থানায় মামলা দায়ের হলেও আসামীরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়েছে।

মঙ্গলবার সকালে সরেজমিন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের বাড়ীতে গিয়ে দেখা যায়, এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য। বাড়ীর প্রবেশ পথে দক্ষিণমুখী বড় আকৃতির টিনশেড ওয়াল করা ঘরটির টিনের চাল, পাকা দেয়াল সহ সবই রামদা,শাবল সহ দেশীয় অস্ত্র দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। ঘরের কক্ষে প্রবেশ করতেই চোঁখে পড়ে প্রতিটি রুমে আসবাবপত্র ভেঙ্গে চুরমার করা হয়েছে। ফ্রিজ, টেলিভিশন সেট এবং ড্রেসিং টেবিল ও সোকেচ সহ অধিকাংশ ফার্ণিচারই ভাংচুর ও কুপিয়ে মারাত্নক আকারে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। চাল,ডাল, থালা, বাসন, জামা-কাপড় সবকিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে একাকার করা হয়েছে। বেসিন, বাথরুম ও জানালা দরজা কোন কিছুই বাদ যায়নি হামলার কবল থেকে। উত্তর দিকের টিনশেড ঘরটি একেবারেই ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। এছাড়া বাড়ীতে সংরক্ষিত পেঁয়াজ সহ অন্যান্য ফসল ও ৩০-৩৫ ভরি স্বর্ণালংকার লুটপাট করা হয়েছে। মারধর করা হয়েছে মোঃ মামুন মন্ডলকে। তার বাম হাত ভেঙ্গে গেছে।

ক্ষতিগ্রস্থ গৃহকর্তা জলিল মন্ডলের একমাত্র পুত্র জাহিদুল ইসলামের অভিযোগ, ঘটনার দিন গত ১১ ডিসেম্বর ভোর সাড়ে ৫ টার দিকে পাশ্ববর্তী পদমদী দোপপাড়া, ঘোড়ামারা, গোবিন্দপুর, সদাশিবপুর এলাকায় ২-৩’শ লোক রামদা, হকিস্ট্রিক, লোহার রড নিয়ে তাদের বসতবাড়ীতে হামলা চালায়। এসময় মীর মশাররফ হোসেন কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক সালেহ মোঃ ওয়াজেদ আলী ও গোবিন্দপুরের রজব আলীর নির্দেশে তাদের হাতে থাকা হকিস্টিক, শাবল, লোহার রড দিয়ে তার চাচাতো ভাই মামুনকে লোহার রড দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিট করে। তাদের লাঠির আঘাতে মামুনের বাম হাত ভেঙ্গে যায়। সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র দিয়ে তাদের প্রতিটি ঘরের পাকা দেয়াল, টিনের চাল, আসবাবপত্র, থালা-বাসন, জামা কাপড় সহ বিভিন্ন জিনিসপত্র ভাংচুর এবং ফ্রিজ, টেলিভিশন সহ ২৮ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার সম্পদ ক্ষতি সাধন করে। থানায় দায়েরকৃত মামলার আসামীরা গৃহকর্তার ঘরে থাকা আলমারি ভেঙ্গে আলমারির ড্রয়ারে রক্ষিত পরিবারের ৩০ ভরি ওজনের স্বর্ণের গহণা নিয়ে যায়। ভাংচুর ও লুটতরাজ করে যাওয়ার সময় তাদের হাতে থাকা অস্ত্র উচিয়ে এ ঘটনা নিয়ে কোন মামলা মোকদ্দমা করলে পরিবারের লোকজনকে প্রাণে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দিয়ে চলে যায়। যাওয়ার পথে লোহার রড, হকিস্ট্রিক, রামদা সহ দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র দিয়ে প্রতিবেশী আশকার মন্ডল (৪৫) এর বসত বাড়ীতে প্রবেশ করে তার ঘরের টিনের বেড়া, দরজা, জানালা, আসবাবপত্র ভাংচুর করে ৫০ হাজার টাকার ক্ষতি সাধন করে এবং নগদ ২০ হাজার টাকা, ৮০ হাজার টাকা মূল্যের একটি গরু, ২০ হাজার টাকা মূল্যের একটি গর্ভবতী ছাগী এবং ৩৫ হাজার টাকা মূল্যের একটি ব্যাটারী চালিত অটো ভ্যান নিয়ে যায়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় মামুন মন্ডলকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এবিষয়ে বালিয়াকান্দি উপজেলার সোনাপুর মীর মশাররফ হোসেন ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক ও দোপপাড়া পদমদী গ্রামের ফৈজনি মন্ডলের ছেলে সালেহ মোঃ ওয়াজেদ আলী (৫০), গোবিন্দপুর গ্রামের ইন্তাজ উদ্দিন মন্ডলের ছেলে বজব আলী মন্ডল (৪৮), দোপপাড়া পদমদী গ্রামের সালেহ মোঃ ওয়াজেদ আলী ছেলে সৌরভ মন্ডল (২২), ঘোড়ামারা গ্রামের অহিদ মন্ডলের ছেলে রাশেদ মন্ডল (৩২), লোকমান শেখের ছেলে অবির শেখ (৩৫), জয়নালের ছেলে আল আমিন (৩৫), সদাশিবপুর গ্রামের খালেক মোল্লার ছেলে শাহ আলম মোল্লা (৬০), রকমর খাঁ’র ছেলে মোঃ লালন খাঁ (৪০), ঘোড়ামারা গ্রামের মৃত মকছেদ মন্ডলের ছেলে মোঃ সাহিদ মন্ডল (৫০), মাছেম মন্ডলের ছেলে মোঃ মোয়াই মন্ডল (৪৫), মোজা মোল্লার ছেলে মোঃ বক্কার মোল্লা (৩৫), সামছুল মন্ডলের ছেলে মোঃ ওসমান মন্ডল (৫০), বাবু মোল্লার ছেলে জাহিদ মোল্লা (২৫), মৃত নিজামুদ্দিন শেখের ছেলে জামাল শেখ (৩০), মৃত গফুর শেখের ছেলে হাছান শেখ (৩৫), সেকেন মন্ডলের ছেলে রেজাউল মন্ডল (৪০), মেহের মন্ডল (৩০), সফি মন্ডলের ছেলে নাছির মন্ডল (৩৫), সদাশিবপুর গ্রামের আশরাফ শেখের ছেলে সাগর শেষ (২৫), নিয়ামত শেখের ছেলে তৈয়ব আলী শেখ (৫০), তৈয়ব আলী শেখের ছেলে মরশেদ শেখ (২৫), ঘোড়ামারা গ্রামের হাবিবুর শেখের ছেলে ইউনুস শেখ (৫৫), আজগর শেখের ছেলে বাবুল শেখ (৪০), জলিল মন্ডলের ছেলে সোহেল মন্ডল (৩০), সদাশিবপুর গ্রামের ময়েন মোল্লার ছেলে আশরাফ মোয়া (৩৫), মৃত নিয়ামত শেখের ছেলে শহিদ শেখ (৩০), ঘোড়ামারা গ্রামের খুনকার শেখের ছেলে আরজু শেখ (৪০) সহ অজ্ঞাতনামা ২০/৩০ জন এর বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন দোপপাড়া পদমদী গ্রামের আব্দুল জলিল মন্ডলের ছেলে জাহিদুল ইসলাম বালিয়াকান্দি থানায় একটি মামলা গত ১২ ডিসেম্বর দায়ের হয়েছে। বালিয়াকান্দি থানায় মামলা (নং-৫, তারিখ-১২/১২/২৫, জি,আর-১৭৭/২৫, ধারা ১৪৩/৪৪৭/৪৪৮/৩২৩/৩২৫/৩০৭/৪২৭/৩৭৯/৩৮০/৩৮৫/৫০৬(২)/১১৪/৩৪) দায়ের হয়েছে।

এ ঘটনার মাত্র দু’দিন আগে গত ৯ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ৮ টার দিকে একদল সন্ত্রাসী ৭-৮ টি মোটর সাইকেল ও দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে নবাবপুর ইউনিয়নের পদমদী খাসকান্দিপাড়া এলাকার বাদল মন্ডলের বাড়ীতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটতরাজ করে। এ ঘটনায় বালিয়াকান্দি আমলী আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে।
এদিকে সন্ত্রাসী হামলা,ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনার পর থেকে পুরো এলাকা জুড়েই আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের চোখেমুখে আতংকের ছাপ। সংবাদ মাধ্যমের কাছে মুখ খুলে সব বলতেও সাহস পাচ্ছেনা। তবে সকলেই এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়েছেন।

ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, মামলা দায়েরের পর থেকেই মামলা তুলে নেওয়া সহ দীঘির মাছ লুটের হুমকি দিচ্ছে। তাদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে মামলার বাদীসহ পরিবারের সদস্যরা।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত প্রভাষক সালেহ মোঃ ওয়াজেদ আলীকে বাড়ীতে পাওয়া যায়নি। তার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও ফোন বন্ধ থাকায় তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

বালিয়াকান্দি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আব্দুর রব তালুকদার বলেন, মামলা দায়েরের পর থেকেই আসামীদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top