মোঃ শহিদুল ইসলাম পিয়ারুল, ময়মনসিংহ প্রতিনিধি:
বছরের পর বছর ধরে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে ছিল গ্রামের একমাত্র জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। নির্বাচন এলে জনপ্রতিনিধিরা সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেন, কিন্তু ভোট ফুরালে আর তাদের দেখা মেলে না।
দীর্ঘদিনের অবহেলা আর দুর্ভোগে অতিষ্ঠ হয়ে অবশেষে কারোর অপেক্ষায় না থেকে নিজেদের রাস্তা নিজেরাই সংস্কার করলেন ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার বিয়ারা ও তালজাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দারা।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) উপজেলার ৫নং গাংগাইল ইউনিয়নে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। গ্রামের যুবক, বৃদ্ধ ও নানা বয়সী মানুষ হাতে কোদাল, শাবল আর মাটি ফেলার ঝুড়ি নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন। তারা পাশের কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে মাথায় বয়ে এনে ভরাট করছেন ভাঙাচোরা রাস্তা। স্বেচ্ছাশ্রমের এই অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ওই এলাকার সাধারণ মানুষ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিয়ারা-তালজাঙ্গা গ্রামের প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ এই গ্রামীণ রাস্তাটি অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় বর্ষাকাল এলেই এটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। কাদা আর গর্তে ভরা রাস্তা দিয়ে যানবাহন চলাচল তো দূরের কথা, পায়ে হাঁটাও দুষ্কর হয়ে দাঁড়ায়। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েন গর্ভবতী নারী ও অসুস্থ রোগীরা।
উপজেলা সদর হাসপাতালে তাদের নিয়ে যেতে পোহাতে হয় চরম ভোগান্তি। এছাড়া রাস্তার বেহাল দশার কারণে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল বাজারে নিতে পারেন না, ফলে বাধ্য হয়ে সস্তায় ফসল বিক্রি করতে হয়। স্কুল-কলেজ ও মাদরাসাগামী শিক্ষার্থীদেরও যাতায়াতে পোহাতে হয় সীমাহীন কষ্ট। স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা সংস্কারের বিষয়ে স্থানীয় যুবক আল-আমিন, সেলিম মিয়া ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থী কায়সার হামিদ বলেন, ‘আমরা এলাকার গর্ভবতী মা, বৃদ্ধ, রোগী এবং শিক্ষার্থীদের কষ্টের কথা চিন্তা করে এই উদ্যোগ নিয়েছি। প্রতিদিন সকালে প্রত্যেকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সবাইকে ডেকে আনি। জীবিকার তাগিদে কাজে বের হওয়ার আগে সবাই মিলে এক-দু’ঘন্টা কাজ করি। তবে প্রশাসনের সহযোগিতা পেলে আমাদের এই কষ্ট লাঘব হতো।’
স্থানীয় বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম, গোলাপ ও আতিকুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘রাস্তা খারাপ হওয়ায় কোনো যানবাহন গ্রামে আসতে চায় না। জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো লাভ হয়নি। তাই নিজেদের কষ্ট দূর করতে আমরাই রাস্তায় নেমেছি।’ এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল খালেক স্বপন জানান, বর্তমানে কোনো প্রজেক্ট না থাকায় রাস্তার কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে রাস্তাটির আইডি হয়েছে, ভবিষ্যতে উন্নয়ন কাজ আসতে পারে। নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাতেমা জান্নাত জানান, গ্রামবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমের বিষয়টি তিনি শুনেছেন। রাস্তাটি সংস্কারের বিষয়ে একটি লিখিত আবেদন করার পরামর্শ দেন, যাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।