সৈয়দ মাকসুমুল হক চৌধুরী সিয়াম, মোহনগঞ্জ (নেত্রকোণা) প্রতিনিধিঃ
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার ৫ নম্বর সমাজ সহিলদেও ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামে একটি ফৌজদারি মামলায় ষাটোর্ধ্ব অসুস্থ নারীকে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় এলাকায় মানবিকতা ও ন্যায়বিচার নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ঘটনার সঙ্গে কোনো সংশ্লিষ্টতা না থাকা সত্ত্বেও মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলায় আসামি করে বৃদ্ধা নারীকে কারাবন্দি করা হয়েছে।
কারাবন্দি ওই নারীর নাম সাজু বেগম। দীর্ঘদিন ধরে তিনি বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। বহু বছর আগে তার স্বামী তাকে তিন কন্যাসন্তানসহ পরিত্যাগ করে অন্যত্র সংসার গড়েন। জীবিকার তাগিদে সাজু বেগম ঢাকায় গৃহকর্মীর কাজ করে সন্তানদের মানুষ করেন। তার মেয়েরাও ঢাকায় গৃহকর্মী ও গার্মেন্টসে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
সম্প্রতি অসুস্থতার কারণে সাজু বেগম নিজ গ্রাম নয়াপাড়ায় অবস্থান করছিলেন। এরই মধ্যে গত ১৫ নভেম্বর বিকেলে একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে। সাজু বেগমের নাতি কাউছার মিয়া নানিকে দেখতে গ্রামে এসে রাস্তার পাশে তার চাচা কামাল মিয়ার দোকানে সিগারেট নিতে গেলে চাচী শিল্লী বেগমের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে কাউছার বটি দিয়ে কুপিয়ে শিল্লী বেগমকে গুরুতর আহত করেন।
আহত শিল্লী বেগমকে প্রথমে মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঘটনার পর স্থানীয়রা কাউছারকে আটক করে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে।
এ ঘটনায় শিল্লী বেগমের স্বামী কামাল মিয়া বাদী হয়ে মোহনগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন (মামলা নং ৭(১১)২৫)। মামলায় প্রধান অভিযুক্ত কাউছার মিয়ার পাশাপাশি তার মা স্বপ্না আক্তার (৪২) এবং অসুস্থ নানী সাজু বেগমকেও আসামি করা হয়।
ঘটনাস্থলে গিয়ে অন্তত ১০ জন প্রতিবেশীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘটনার সময় কাউছারের মা স্বপ্না আক্তার ঢাকায় অবস্থান করছিলেন এবং এখনও সেখানেই আছেন। অপরদিকে সাজু বেগম ঘটনার সময় অসুস্থ অবস্থায় নিজ ঘরেই ছিলেন। স্থানীয়দের দাবি, এই দুই নারী ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নন।
তবুও গত ১৮ ডিসেম্বর আদালতে হাজিরা দিতে গেলে সাজু বেগমের জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এতে এলাকায় চরম ক্ষোভ ও বেদনার সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী বিষয়টিকে অমানবিক ও অন্যায় বলে আখ্যা দিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, অভিযুক্ত কাউছার মিয়া মানসিকভাবে কিছুটা ভারসাম্যহীন। কয়েক বছর আগে গ্রামের একটি মামলায় তাকে ব্যবহার করতে গিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। এরপর থেকেই তার আচরণ অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে। তার মায়ের দাবি, চিকিৎসার অভাবে সমস্যার সমাধান হয়নি।
এলাকাবাসীর জোর দাবি, মামলার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক এবং কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যেন হয়রানির শিকার না হন।
এ বিষয়ে মোহনগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হাফিজুল ইসলাম হারুন বলেন, “আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগের মামলা এটি। তারপরও আজই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে আইনগতভাবে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।