২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৪ঠা রজব, ১৪৪৭ হিজরি

২৯ ঘণ্টায় ৪৭ লাখ টাকা সংগ্রহ, অনুদান বন্ধ করে মাঠের লড়াইয়ে নামার ঘোষণা ডা. তাসনিম জারার

নিজস্ব প্রতিনিধি:

নির্বাচনি ব্যয় নির্বাহের জন্য নির্ধারিত প্রায় ৪৭ লাখ টাকার অনুদান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা মাত্র ২৯ ঘণ্টার মধ্যেই পূরণ হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপির মনোনীত ঢাকা-৯ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী ও দলটির সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা। এই অভূতপূর্ব সাড়ার জন্য সাধারণ মানুষকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি অনুদান গ্রহণ বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন এবং একই সঙ্গে নির্বাচনি প্রচারণার পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন।

মঙ্গলবার ২৩ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ৩টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক দীর্ঘ পোস্টে তিনি এসব কথা জানান। ডা. তাসনিম জারা তার পোস্টে বলেন, প্রায় ৪৭ লাখ টাকা অনুদান সংগ্রহের যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল, তা মাত্র ২৯ ঘণ্টায় পূরণ হওয়া বাংলাদেশের প্রচলিত রাজনীতির জন্য একটি ব্যতিক্রমী ও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। তিনি বলেন, এই সাড়া প্রমাণ করেছে যে, মানুষ এখন আর পুরোনো টাকার রাজনীতির ওপর নির্ভর করতে চায় না এবং নতুন ধরনের রাজনীতিকে সমর্থন দিতে প্রস্তুত।

তিনি স্পষ্ট করে জানান, লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে যাওয়ায় এখন থেকে আর কোনো অনুদান গ্রহণ করা হবে না। তার ভাষায়, জনগণের এই সমর্থন পুরোনো রাজনৈতিক ধারার ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছে এবং এটি নতুন বাংলাদেশের রাজনীতির পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করছে। ডা. তাসনিম জারা বলেন, এখন শুরু হচ্ছে আসল লড়াই।

তিনি উল্লেখ করেন, এই নির্বাচনে অধিকাংশ প্রার্থী ১০ কোটি থেকে শুরু করে ৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যয় করবেন এবং অনেকে বিশ্বাস করেন টাকা দিয়েই ভোট কেনা সম্ভব। কিন্তু তাদের একটি মৌলিক ভুল রয়েছে। তিনি বলেন, নতুন রাজনীতির শক্তি হলো জনগণ। যারা নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে নিজের পকেটের টাকা খরচ করতে রাজি হয়েছেন, তারাই এই লড়াইয়ের আসল ভরসা। তিনি জোর দিয়ে বলেন, টাকার জোর নয়, মানুষের সম্মিলিত শক্তিই এই নির্বাচনের ভাগ্য নির্ধারণ করবে।

এরপর তিনি বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেন, সামনে তারা কীভাবে এগোতে চান। তিনি জানান, ঢাকা-৯ আসনে প্রায় ৫ লাখ ভোটার রয়েছে। একজন প্রার্থী হিসেবে তিনি যদি প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা হেঁটে হেঁটে প্রতিটি পরিবারের সঙ্গে মাত্র ৫ মিনিট করে কথা বলেন, তাহলেও দিনে সর্বোচ্চ ১০০ থেকে ১১০টি পরিবারের কাছে পৌঁছানো সম্ভব।

পুরো নির্বাচনি প্রচারণা সময়জুড়ে তিনি বড়জোর ৪ হাজার পরিবারের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পারবেন। অর্থাৎ কয়েক লাখ পরিবারের কাছে তার বার্তা পৌঁছাবে না, যদি না একটি সংগঠিত ও বিকল্প পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়।

এই বাস্তবতা তুলে ধরে তিনি বলেন, এনসিপি টাকার রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করতে এসেছে, তাই তারা কোনো পেইড কর্মী নিয়োগ দেবে না। নতুন রাজনীতি গড়ার এই লড়াইয়ে জিততে হলে মানুষের কাছে বার্তা পৌঁছাতে স্বেচ্ছাসেবকদের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, এই প্রচারণা মানুষের দ্বারা পরিচালিত হবে, যেখানে সাধারণ মানুষই হবে প্রচারের সবচেয়ে বড় শক্তি।

ডা. তাসনিম জারা উল্লেখ করেন, অনেক সমর্থকই হয়তো ঢাকা-৯ আসনের ভোটার নন, কিন্তু তাদের আত্মীয়, বন্ধু, সহকর্মী বা পরিচিত কেউ না কেউ এই এলাকায় বসবাস করেন।

একজন পরিচিত মানুষের বলা একটি কথা অনেক সময় পোস্টার, ব্যানার বা বিপুল অর্থ ব্যয় করে চালানো প্রচারণার চেয়েও অনেক বেশি কার্যকর হয়। তিনি জানান, তিনি নিজে এই ক্যাম্পেইনে নিয়ম মেনে পোস্টার লাগাননি, যেখানে অন্য প্রার্থীরা পোস্টার ও ব্যানারে এলাকা ভরিয়ে ফেলেছেন। এই অসমতা কাটিয়ে উঠতেও একটি ফোন কল, একটি ব্যক্তিগত অনুরোধ বড় ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি বলেন, এই নির্বাচনে মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগই হবে প্রধান হাতিয়ার। এরপর ডা. তাসনিম জারা সমর্থকদের উদ্দেশে দুটি সুনির্দিষ্ট আহ্বান জানান।

প্রথমত, তিনি বলেন, সপ্তাহে মাত্র ৪ থেকে ৮ ঘণ্টা সময় দিয়ে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে মানুষের দ্বারে দ্বারে যাওয়ার জন্য তিনি সমর্থকদের আহ্বান জানাচ্ছেন। তিনি ব্যাখ্যা করেন, একজন সাধারণ মানুষের দুটি কথা একটি পেইড বিলবোর্ডের চেয়ে হাজার গুণ শক্তিশালী হতে পারে। এই কাজ একা একা নয়, বরং প্রশিক্ষণ নিয়ে একটি সংগঠিত টিমের অংশ হয়ে করতে হবে।

যারা এতে আগ্রহী, তাদের একটি নির্দিষ্ট ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। দ্বিতীয়ত, তিনি বলেন, নির্বাচনের দিন পোলিং এজেন্ট হিসেবে অথবা ভোটারদের সহায়তা করতে স্বেচ্ছাসেবক টিমে যুক্ত হওয়া অত্যন্ত জরুরি।

এই ক্ষেত্রেও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে একটি সংগঠিত গ্রুপ হিসেবে কাজ করতে হবে। ভোটের দিন প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে এমন সাহসী মানুষ দরকার, যারা অন্যায়ের সামনে মাথা নত করবেন না। এ জন্যও তিনি আগ্রহীদের জন্য আলাদা একটি ফেসবুক গ্রুপের কথা উল্লেখ করেন। তার ভাষায়, সবাই মিলে প্রমাণ করতে হবে যে, জনগণের সম্মিলিত শক্তির সামনে কোটি কোটি কালো টাকা কতটা অসহায়।

ডা. তাসনিম জারা তার পোস্টে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, শুরু থেকেই তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, এই ফান্ডের প্রতিটি পয়সার হিসাব সম্পূর্ণ স্বচ্ছ হবে। এই স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে কয়েকটি নির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

তিনি জানান, কোনো ক্যাশ ডোনেশন গ্রহণ করা হয়নি এবং প্রতিটি অনুদান একটি মাত্র বিকাশ অ্যাকাউন্ট ও একটি মাত্র ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয়েছে, যার রেকর্ড সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে থাকে এবং ভবিষ্যতে যাচাই করা সম্ভব।

তিনি আরও জানান, কোন মাধ্যমে কত টাকা এসেছে, সেই তথ্য নিয়মিতভাবে সমর্থকদের জানানো হবে এবং এই সমস্ত নথিপত্র নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দেওয়া হবে, যাতে তারা পূর্ণ স্বচ্ছতা যাচাই করতে পারে। তিনি বলেন, যে বিকাশ ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অনুদান গ্রহণ করা হয়েছে, সেখানে কোনো ব্যক্তিগত লেনদেন করা হয় না। অ্যাকাউন্ট দুটি নতুন এবং শূন্য ব্যালান্স থেকে শুরু হয়েছে।

ফলে অ্যাকাউন্টে থাকা অর্থের শতভাগই জনগণের অনুদান এবং অন্য কোনো উৎসের অর্থ এখানে মেশার সুযোগ নেই। পাশাপাশি তিনি আশ্বাস দেন, সংগৃহীত অর্থ কোন কোন খাতে কতটুকু ব্যয় করা হবে, তার বিস্তারিত হিসাব জনগণের সামনে স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হবে। ডা. তাসনিম জারার এই ঘোষণাকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বাংলাদেশের নির্বাচনি রাজনীতিতে একটি নতুন ধারা হিসেবে দেখছেন।

স্বল্প সময়ে বিপুল জনগণের অনুদান, অনুদান বন্ধ করে স্বেচ্ছাসেবাভিত্তিক মাঠের লড়াইয়ে নামার ঘোষণা এবং ব্যয়ের পূর্ণ স্বচ্ছতার অঙ্গীকার—সব মিলিয়ে এটি প্রচলিত টাকার রাজনীতির বিপরীতে একটি বিকল্প মডেল হিসেবে আলোচিত হচ্ছে। অনেকের মতে, এই উদ্যোগ শুধু একটি নির্বাচনি প্রচারণা নয়, বরং ভবিষ্যতের রাজনীতির জন্য একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে, যেখানে জনগণই হবে রাজনীতির মূল চালিকাশক্তি।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top