২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৪ঠা রজব, ১৪৪৭ হিজরি

বিয়ের মঞ্চেও শহীদ হাদি হত্যার বিচার চাইলেন ডাকসু নেতা ফরহাদ-মহিউদ্দীন

নিজস্ব প্রতিনিধি:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ডাকসু-এর সাধারণ সম্পাদক এসএম ফরহাদ এবং সহকারী সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দীন খান বুধবার একই দিনে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন এবং শিক্ষাঙ্গনের এই দুই পরিচিত ছাত্রনেতার বিয়ের খবর শুধু পারিবারিক বা ব্যক্তিগত পরিসরেই সীমাবদ্ধ থাকেনি বরং তা দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে ব্যাপক আলোচনা ও প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে।

জানা যায়, ডাকসু জিএস এসএম ফরহাদের জীবনসঙ্গী হয়েছেন জান্নাতুল ফেরদাউস সানজিদা, যিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ চাকসু-এর একজন সক্রিয় নেত্রী হিসেবে পরিচিত এবং দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত আছেন।

অপরদিকে ডাকসুর এজিএস মহিউদ্দীন খানের জীবনসঙ্গী সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ্যে না এলেও তাদের দুজনের একসঙ্গে বিবাহ সম্পন্ন হওয়াকে অনেকেই শিক্ষাঙ্গনের ইতিহাসে ব্যতিক্রমী ঘটনা হিসেবে দেখছেন।

বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা ছিল তুলনামূলকভাবে ঘরোয়া ও পারিবারিক পরিবেশে আয়োজিত হলেও এই আয়োজনকে কেন্দ্র করে যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি আলোচনার জন্ম দিয়েছে তা হলো বিয়ের মঞ্চেই সদ্য আলোচিত ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি। বরের সাজে দাঁড়িয়ে এসএম ফরহাদ ও মহিউদ্দীন খান ‘Justice for Hadi’ লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে ছবি তুলেছেন, যা মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং শিক্ষার্থী ও রাজনৈতিক কর্মীদের মধ্যে গভীর আবেগ ও একাত্মতার অনুভূতি তৈরি করে।

অনেকেই মন্তব্য করেছেন যে ব্যক্তিগত জীবনের সবচেয়ে আনন্দঘন মুহূর্তেও তারা যে সহযোদ্ধার কথা ভুলে যাননি এবং ন্যায়বিচারের দাবি তুলে ধরেছেন, সেটি বর্তমান সময়ের ছাত্র রাজনীতিতে একটি ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত।

ডাকসু নেতা এবি জুবায়ের তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ওই ছবি শেয়ার করে লেখেন যে বিয়ের অনুষ্ঠানেও সহযোদ্ধাকে না ভোলার জন্য এসএম ফরহাদ ও মহিউদ্দীন খানকে ধন্যবাদ এবং তিনি আরও লেখেন আমরা সবাই হাদি হব যুগে যুগে লড়ে যাব, তার এই মন্তব্যের নিচে অসংখ্য শিক্ষার্থী, সাবেক ছাত্রনেতা এবং রাজনৈতিক সহকর্মী একাত্মতা প্রকাশ করে মন্তব্য করেন।

এর আগে ডাকসুর কার্যনির্বাহী সদস্য রায়হান উদ্দীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্টের মাধ্যমে ফরহাদ ও মহিউদ্দীনের বিয়ের খবর জানান এবং তাদের দাম্পত্য জীবনের জন্য দোয়া ও শুভকামনা কামনা করেন, একই সঙ্গে তিনি লেখেন যে এই দুই ছাত্রনেতার নতুন জীবনে যেন আল্লাহ তায়ালা বরকত দান করেন এবং তারা যেন ন্যায় ও সত্যের পথে অবিচল থাকতে পারেন।

শিক্ষাঙ্গনের অনেকেই মনে করছেন যে এই বিয়ের আয়োজন শুধু দুটি পরিবারের মিলন নয় বরং দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতির একটি প্রতীকী সংযোগ হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে, কারণ একদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু নেতৃত্ব আর অন্যদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকসু নেতৃত্বের একজন নেত্রীর সঙ্গে এই সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই বিয়ে ছাত্র রাজনীতির ভৌগোলিক ও সাংগঠনিক বিভাজনের ঊর্ধ্বে গিয়ে একটি বার্তা দিয়েছে যে ন্যায়বিচার, গণতান্ত্রিক চেতনা ও প্রতিবাদের ভাষা এক জায়গায় মিলিত হতে পারে।

উল্লেখ্য, ডাকসুর দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি এসএম ফরহাদ ও মহিউদ্দীন খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের যথাক্রমে সভাপতি ও সেক্রেটারির দায়িত্বে রয়েছেন এবং দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন আন্দোলন ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছেন।

এসএম ফরহাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ইনস্টিটিউটের ২০১৭–১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং মহিউদ্দীন খান লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮–১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচিত, তাদের দুজনকেই শিক্ষাঙ্গনে সংগঠক হিসেবে দক্ষ ও সরব নেতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

বিয়ের মতো ব্যক্তিগত ও পারিবারিক আয়োজনে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি সামনে এনে তারা যে বার্তা দিয়েছেন, সেটিকে অনেক শিক্ষার্থী ও সচেতন মহল বর্তমান সময়ের ছাত্র রাজনীতিতে নৈতিক অবস্থান ও সামাজিক দায়বদ্ধতার উদাহরণ হিসেবে দেখছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই লিখেছেন যে যেখানে রাজনীতি ও ব্যক্তিগত জীবনকে আলাদা করে দেখার প্রবণতা বাড়ছে সেখানে ফরহাদ ও মহিউদ্দীন তাদের ব্যক্তিগত জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তকেও সামাজিক ও রাজনৈতিক দায়বদ্ধতার সঙ্গে যুক্ত করেছেন, যা ভবিষ্যতের ছাত্র নেতৃত্বের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারে।

অনেকে আবার মন্তব্য করেছেন যে এই বিয়ে ও এর সঙ্গে যুক্ত প্রতিবাদী বার্তা শিক্ষাঙ্গনের বাইরেও একটি বৃহত্তর সামাজিক আলোচনার জন্ম দিয়েছে এবং ন্যায়বিচারের দাবিকে নতুনভাবে সামনে এনেছে।

সব মিলিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের জিএস ও এজিএস-এর এই যৌথ বিবাহ আয়োজন শুধু দুটি পরিবারের আনন্দের উপলক্ষ নয় বরং ছাত্র রাজনীতি, সামাজিক সচেতনতা এবং ন্যায়বিচারের দাবিকে এক সুতোয় গেঁথে দেওয়া একটি ঘটনাবহুল অধ্যায় হিসেবে ইতোমধ্যে শিক্ষাঙ্গনের ইতিহাসে বিশেষভাবে আলোচিত হয়ে উঠেছে।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top