নিজস্ব প্রতিনিধি:
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দীর্ঘ প্রবাস জীবন শেষে বহুল আকাঙ্ক্ষিত প্রত্যাবর্তনের দিন রাজধানীর ৩০০ ফিট সড়কের গণসংবর্ধনা মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রথমেই মহান রব্বুল আলামিনের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং বলেন, তিনি আল্লাহর অশেষ কৃপা ও দোয়ায় নিরাপদে মাতৃভূমিতে ফিরে এসেছেন—এই ফিরে আসা শুধু ব্যক্তিগত আবেগের বিষয় নয়, বরং এটি দেশের গণতান্ত্রিক যাত্রাপথ, সংগ্রাম ও জনগণের প্রত্যাশার সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত একটি মুহূর্ত।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকায় অবতরণের পর হাজারো মানুষের উচ্ছ্বাস, আবেগ এবং মানবস্রোত অতিক্রম করে সরাসরি জনসমুদ্রের মাঝে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি বলেন, আল্লাহর রহমত ছাড়া আজকের এই ঐতিহাসিক দৃশ্য সম্ভব হতো না এবং এই দেশে ফিরে এসে তিনি নিজেকে নতুনভাবে দায়িত্বশীল, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ও অনুপ্রাণিত মনে করছেন।
দিনব্যাপী রাজধানীর কুড়িল-বিশ্বরোড থেকে ৩০০ ফিট সড়ক পর্যন্ত লাখো মানুষের ঢল, বিভিন্ন জেলা-মহানগর থেকে আগত নেতাকর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত সমাগম এবং সড়কের দুই পাশে সারিবদ্ধ মানুষের উপস্থিতি এই প্রত্যাবর্তনকে এক অভূতপূর্ব গণজোয়ারে পরিণত করে।
বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটের দিকে যখন তারেক রহমান গণসংবর্ধনা মঞ্চে পৌঁছান, তখন পুরো এলাকা করতালি, স্লোগান ও উচ্ছ্বাসে মুখর হয়ে ওঠে এবং মঞ্চে উপস্থিত দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শীর্ষ নেতারা ফুল ও শুভেচ্ছায় তাকে বরণ করে নেন।
উপস্থিত জনতার উদ্দেশে বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থেকে বাংলাদেশের রাজনীতি, জনগণের কষ্ট, সংগ্রাম ও প্রত্যাশাকে তিনি গভীরভাবে অনুভব করেছেন এবং আজকের এই ফিরে আসা তার কাছে এক নতুন অঙ্গীকার—গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির লড়াইকে নতুন শক্তিতে এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার।
তিনি বলেন, পথে পথে যে ভালোবাসা, জনসমর্থন ও উৎসর্গ দেখেছেন, তা প্রমাণ করে যে বাংলাদেশের মানুষ পরিবর্তন চায়, ন্যায়ের সমাজ চায় এবং এই প্রত্যাশা পূরণের জন্য তিনি নেতাকর্মী ও জনগণের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবেন।
তারেক রহমান উল্লেখ করেন, এই দেশে স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও অধিকারবোধের ঐতিহ্যকে অক্ষুণ্ন রাখতে হলে জনগণকেই হবে সবচেয়ে বড় শক্তি এবং জনগণের এই শক্তির ওপর ভরসা করেই তিনি ভবিষ্যতের পথচলায় এগোতে চান।
তিনি উপস্থিত তরুণ প্রজন্ম, শ্রমজীবী, কৃষক, প্রবাসী পরিবার থেকে শুরু করে দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তাদের ভালোবাসা ও বিশ্বাসই তার সবচেয়ে বড় প্রেরণা এবং তিনি এই বিশ্বাস রক্ষার জন্য আপসহীনভাবে কাজ করবেন। বক্তৃতায় তিনি সংগঠনের নেতাকর্মীদের প্রতি শৃঙ্খলা, ঐক্য ও দায়িত্ববোধের আহ্বান জানিয়ে বলেন, সামনে যে পথচলা, তা চ্যালেঞ্জপূর্ণ হলেও এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলাই হবে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার প্রথম শর্ত।
তারেক রহমানের আগমন উপলক্ষে গণসংবর্ধনা প্রাঙ্গণে যে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়, তা দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বিরল বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা; কারণ এদিন কেবল দলীয় নেতাকর্মী নয়, সাধারণ নাগরিক, নারী-পুরুষ, তরুণ-ছাত্র—সবাই যেন এক ধরনের আবেগী সংহতিতে অংশ নেয়। নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল কঠোর, কিন্তু মানুষের উচ্ছ্বাসে পুরো এলাকা পরিণত হয় এক বিশাল মিলনমেলায়, যেখানে কেউ হাতে ফুল, কেউ পতাকা, কেউবা তারেক রহমানের ছবি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি বলেন, এই ফিরে আসা তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়গুলোর একটি এবং এই দিনটির স্মৃতি তার রাজনৈতিক অঙ্গীকারকে আরও গভীর করবে।
তিনি তার প্রয়াত পিতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও দলীয় নেতা-কর্মীদের ত্যাগ ও সংগ্রাম স্মরণ করে বলেন, তাদের আদর্শ থেকেই তিনি শক্তি পান এবং সেই আদর্শের ভিত্তিতেই তিনি গণতন্ত্রের সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান।
সমগ্র বক্তব্যে ছিল আবেগ, কৃতজ্ঞতা, দৃঢ়তা এবং ভবিষ্যতের প্রতি অঙ্গীকারবোধের এক সমন্বিত প্রকাশ, যা উপস্থিত জনতার করতালি ও সমর্থনের মধ্য দিয়ে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, তারেক রহমানের এই প্রত্যাবর্তন শুধু একটি ব্যক্তিগত বা দলীয় ঘটনা নয়, বরং এটি বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক বাস্তবতা, ক্ষমতার ভারসাম্য, গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা এবং ভবিষ্যতের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
একইসঙ্গে গণসংবর্ধনা মঞ্চে দাঁড়িয়ে তার প্রথম বক্তব্যেই তিনি যে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা দিয়ে সূচনা করলেন, তা তার রাজনৈতিক আচরণে নম্রতা ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার প্রতিফলন হিসেবেও দেখা হচ্ছে।
শেষ অংশে তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা করেন এবং আল্লাহর দরবারে দোয়া করেন যেন সামনে থাকা দায়িত্ব তিনি সফলভাবে ও কল্যাণের পথে সম্পন্ন করতে পারেন—এভাবেই দিনটির আবেগঘন পরিবেশ এবং তার বক্তব্য সমাপ্ত হয়, যা উপস্থিত লাখো মানুষের মনে এক গভীর অনুরণন তৈরি করে।