নিজস্ব প্রতিনিধি:
দাফনের পাঁচ দিন কেটে গেলেও শহীদ শরীফ ওসমান হাদির কবরের পাশে এখনও থামেনি মানুষের অশ্রুধারা। জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখযোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হাদির স্মৃতিচারণে প্রতিদিনই কেউ না কেউ ছুটে আসছেন তার কবরের কাছে। ভালোবাসা, শ্রদ্ধা আর নীরব কান্নায় শোকাবহ পরিবেশ তৈরি হচ্ছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধি চত্বরে অবস্থিত কবরস্থান জুড়ে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদসংলগ্ন এই সমাধিস্থলে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মানুষের উপস্থিতি লেগেই আছে। কেউ হাত উঁচিয়ে দোয়া করছেন, কেউ কোরআন তিলাওয়াত করছেন, আবার কেউ নীরবে চোখের পানি মুছছেন। অনেকেই সৌধের বাইরে দাঁড়িয়ে ফুল অর্পণ করছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিন দেখা যায়, সকাল থেকেই অসংখ্য মানুষ হাদির কবর জিয়ারতে আসছেন। নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে সমাধিসৌধের ভেতরে প্রবেশে বাধা থাকলেও গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে তারা দোয়া ও মোনাজাতে অংশ নিচ্ছেন। এসময় অনেকের চোখেই দেখা গেছে অশ্রুসিক্ত দৃশ্য।
রাজনৈতিক নেতাকর্মীর পাশাপাশি রিকশাচালক, পথচারী, শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, এমনকি পরিবার-পরিজনসহ শিশুদেরও দেখা গেছে সেখানে। দূর-দূরান্ত থেকে শুধুমাত্র একনজর কবর দেখা ও দোয়া করার জন্যই অনেকেই ছুটে এসেছেন।
ফার্মগেট থেকে আসা শিক্ষার্থী আফসানা শারমিনের চোখ ভেজা কান্নায়। হাতে ধরা বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে তিনি বলেন, “আন্দোলনের সময় হাদি ভাইয়ের সঙ্গে স্লোগান দিয়েছি। তার কণ্ঠ আমাদের ভেতরে নতুন শক্তি জাগাত। সুযোগ থাকলে এই পতাকাটা তার কবরের ওপর রেখে আসতাম। এখন শুধু কান্না নয়, আমরা বিচারও চাই—যার কথা তিনি জীবিত থাকতে বলেছিলেন।”
গাজীপুর থেকে আসা চিকিৎসক ফারহানা ইয়াসমিন বলেন, “আমি তার আত্মীয় নই, রাজনৈতিক অনুসারীও নই। তবুও তার জন্য বুক ভেঙে আসে। এমন সততা আর দেশপ্রেমের মানুষ কবে আবার জন্মাবে—জানি না। শুধু দোয়া করি, আল্লাহ তার শাহাদাত কবুল করুন।”
নারায়ণগঞ্জের যুবক শাহিন ইসলাম বলেন, “অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলার কারণেই তাকে প্রাণ দিতে হয়েছে। তার এই ত্যাগ বৃথা যেতে দেওয়া হবে না।”
বরিশাল থেকে আসা আব্দুল করিমের ভাষায়, “ওসমান হাদি কোনো প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না, বড় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বও নন—তবুও আজ তিনি কোটি মানুষের হৃদয়ে জীবিত।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তারেকুজ্জামান বলেন, “হাদি ভাইয়ের স্বপ্ন ছিল—তার হত্যার বিচার নিশ্চিত হোক এবং ইনসাফ প্রতিষ্ঠার লড়াই চালিয়ে যাওয়া হোক। সেই লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত থামা যাবে না।”
হাদির কবর ঘিরে মানুষের অবিরাম অশ্রু, ভালোবাসা ও উপস্থিতি যেন একটাই বার্তা দিচ্ছে—শরীফ ওসমান হাদি চলে গেছেন, কিন্তু তার আদর্শ আরো দৃঢ় হয়ে মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবে।