২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৬ই রজব, ১৪৪৭ হিজরি

তুহিনকে বাদ দেওয়ায় ডিমলায় বিএনপির বিক্ষোভ, ক্ষোভে ফুঁসছে জনতা

মো. সাইফুল ইসলাম, নীলফামারী প্রতিনিধি:

নীলফামারী-০১ (ডোমার-ডিমলা) সংসদীয় আসনে ইঞ্জিনিয়ার শাহরিন ইসলাম তুহিনকে পুনরায় প্রার্থী ঘোষণা না করায় ডিমলা উপজেলায় বিএনপির নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটেছে। দীর্ঘদিনের জনপ্রিয় এই নেতাকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেলে ডিমলা উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে ফেটে পড়ে জনগণ।

বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী, শ্রমজীবী ও তরুণদের অংশগ্রহণে বিক্ষোভ মিছিলটি ডিমলা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মিছিলে অংশ নেওয়া মানুষের কণ্ঠে কণ্ঠে ছিল একটাই স্লোগান—“তুহিন আমাদের নেতা, তুহিন আমাদের আশা।”

সমাবেশে আবেগঘন কণ্ঠে এক বৃদ্ধ কৃষক আশরাফ আলী বলেন, “আমরা ভোট দিয়েছি, পাশে পেয়েছি তুহিন ভাইকে। সুখে-দুঃখে উনাকে পেয়েছি। আজ যদি তাকে বাদ দেওয়া হয়, তাহলে আমাদের কথা শোনার কেউ থাকবে না।”

একজন তরুণ শিক্ষার্থী আলামিন হোসেন বলেন, “রাজনীতিতে অনেক নেতা আসে-যায়। কিন্তু তুহিন ভাই আলাদা। তিনি আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, আন্দোলনে ছিলেন, নির্যাতনের সময় ছিলেন। তাকে বাদ দেওয়া মানে আমাদের স্বপ্ন ভেঙে দেওয়া।”

সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করেন, তৃণমূল নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মতামত উপেক্ষা করে নীলফামারী-০১ আসনে বিএনপি জোটের শরিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দীকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। তারা বলেন, এই সিদ্ধান্ত ডোমার-ডিমলার মানুষের প্রত্যাশা ও আবেগের সম্পূর্ণ বিপরীত।

একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী আশরাফুল আলম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “রাজনীতি যদি শুধু কাগজে-কলমে চলে, তাহলে মাঠের মানুষ কোথায় যাবে? তুহিন ভাই মাঠের নেতা, জনগণের নেতা।”

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া নেতাকর্মীরা কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে বলেন, দাবি মানা না হলে আগামী ২৬ ডিসেম্বর ডোমার ও ডিমলা উপজেলায় সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হবে। একই সঙ্গে তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে জানান, এরপরও যদি সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা না করা হয়, তবে দলীয় পদ-পদবি ছেড়ে গণপদত্যাগের মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবেন তারা।

সমাবেশে আরও বলা হয়, নীলফামারী-০১ আসন বিএনপির একটি ঐতিহ্যবাহী ও গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি। এখানে তৃণমূলকে উপেক্ষা করে ভুল সিদ্ধান্ত নিলে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের জন্য তা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।

এদিকে বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে ডিমলা উপজেলা শহরে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়। তবে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি শেষ হওয়ায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই বিক্ষোভ শুধু একটি মনোনয়ন ইস্যু নয়—এটি তৃণমূলের আবেগ, দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ও নেতৃত্বের প্রতি মানুষের আস্থার বহিঃপ্রকাশ। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দ্রুত সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা না করলে নীলফামারী-০১ আসনে বিএনপির অভ্যন্তরীণ সংকট আরও গভীর হতে পারে।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top