জয়নাল আবেদীন জহিরুল, মধ্যনগর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি:
সুনামগঞ্জ জেলার মধ্যনগর উপজেলার বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের রংচী গ্রামের প্রাচীন হিজল বাগান এখন বিলুপ্তির মুখে। দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পিতভাবে হিজলগাছ কেটে ফেলা, মাটি তুলে নিয়ে জমি সমতল করা এবং কৃষি জমিতে রূপান্তরের ফলে বাগানটির শতবর্ষী হিজল গাছের অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। স্থানীয়দের দাবি—প্রায় তিন শতাধিক বছরের সাক্ষী এ বনটি রক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে প্রশাসনিক পদক্ষেপ প্রয়োজন।
সরেজমিন দেখা যায়, বনে প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে অনেক গাছের গোড়ায় মাটি নেই। কিছু গাছ গোড়া থেকে কেটে ফেলে রাখা হলেও এখনো সরানো হয়নি। আবার কোনো কোনো গাছ মাটিবিহীন অবস্থায় দুর্বল হয়ে হেলে পড়েছে। স্থানীয়রা জানান, একসময় গ্রামের সামনে বিস্তৃত হিজল বাগানটি ছিল গ্রামের পরিচয়ের প্রধান অংশ। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে গাছ কেটে নেওয়ার ফলে বনটির আয়তন ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে। বর্তমানে বনের ভেতরের মাটি সমতল করে বোরোধান রোপণের উদ্দেশ্যে জমিতে পরিবর্তন করছে কিছু অসাধু ব্যক্তি। এতে গাছের গোড়ায় মাটি সরে গিয়ে অনেক গাছ নষ্ট হয়ে পড়ছে।
প্রবীণদের মতে, প্রায় ৩৫০–৪০০ বছর আগে রংচী গ্রামে প্রথম বসতি স্থাপনের অন্যতম কারণ ছিল এই হিজল বনটি। বর্ষায় হাওরের ঢেউ, ঝড়, বন্যা কিংবা অতিবৃষ্টির সময় বনটি গ্রামটির ঢাল হিসাবে কাজ করত। বনের গাছগুলো প্রাকৃতিক বাঁধের মতো পানি প্রতিরোধ করায় ভাঙন, ক্ষয় বা পানির চাপ তেমনটা প্রভাব ফেলতে পারত না। তাই গ্রামের লোকদের কাছে বনটি শুধু একটি ঝুম বা বাগান নয়, বরং নিরাপত্তার প্রতীক।
রংচি গ্রামের তোফায়েল মিয়া বলেন, একসময় এই বনে দাঁড়িয়ে থাকা গাছ দেখে মনে হতো একটা জীবন্ত দেয়াল। এখন গাছ কমে গেছে, জায়গাগুলো ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। আরেক কৃষক আনোয়ার মিয়ার ভাষ্য, প্রথমে গাছের গোড়ায় সার দেওয়া হয়, পরে তা নরম হয়ে গেলে গাছ মারা যায়। এরপর গাছ সরিয়ে ফসল করা হয়। বছরের পর বছর এভাবেই বাগানটি উজাড় হয়েছে।
এ বিষয়ে ইউপি সদস্য নুরুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, এটি আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ। সংরক্ষণ না করলে বনটি স্থায়ীভাবে হারিয়ে যাবে। গাছের গোড়ায় বাঁধাই, নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি, বনের ভেতর চাষাবাদ বন্ধ এবং নতুন চারা রোপণের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উজ্জ্বল রায় জানান, রংচী গ্রামের শতবর্ষী হিজল বাগানটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক ও পরিবেশগত সম্পদ। বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। হিজল বাগানে অবৈধভাবে গাছ কাটা, মাটি অপসারণ কিংবা কৃষিকাজ করার কোনো সুযোগ নেই। তদন্ত সাপেক্ষে দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।