২৯শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৯ই রজব, ১৪৪৭ হিজরি

বাকৃবিতে ইন ভিট্রো কালচার ও জেনোম এডিটিং গবেষণাগারের উদ্বোধন

আরাফাত হোসাইন, বাকৃবি প্রতিনিধি :
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) অত্যাধুনিক ইন ভিট্রো ভ্রূণ উৎপাদন, ভ্রূণ কালচার ও জেনোম এডিটিং সুবিধা সংবলিত এবং উচ্চমাত্রার জৈব-নিরাপত্তা নিশ্চিত করে বাংলাদেশে প্রথম একটি বিশেষায়িত ক্লিন ল্যাব উদ্বোধন করা হয়েছে। বাকৃবির পশু প্রজনন ও কৌলিবিজ্ঞান বিভাগ কর্তৃক গৃহীত দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, বিজ্ঞানসম্মত প্রস্তাবনা এবং ধারাবাহিক গবেষণা কার্যক্রমের সফল বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ওই গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া প্রধান অতিথি হিসেবে ওই গবেষণাগারের উদ্বোধন করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সর্বাত্মক সহযোগিতা এবং কেজিএফ, বিএএস-ইউএসডিএ ও এটিএফ-হিট প্রকল্পের আর্থিক সহায়তায় আন্তর্জাতিক মান ও জৈব-নিরাপত্তা নির্দেশিকা অনুসরণ করে এই ল্যাবের অবকাঠামো, যন্ত্রপাতি ও গবেষণা সুবিধাসমূহ গড়ে তোলা হয়েছে।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, আধুনিক জৈবপ্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা ও গবেষণাকে আরও কার্যকর, গতিশীল ও ফলপ্রসূ করার ক্ষেত্রে এই ল্যাবটি একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা অবকাঠামো হিসেবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। এই ল্যাব থেকে অর্জিত গবেষণালব্ধ জ্ঞান ও প্রযুক্তি ভবিষ্যতে দেশের প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং টেকসই কৃষি ব্যবস্থার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। এই গবেষণাগার প্রতিষ্ঠায় পশু প্রজনন ও কৌলিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সামছুল আলম ভূঁঞা ও বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মো. মুনির হোসেনের অবদান অনস্বীকার্য। অত্যাধুনিক এই গবেষণারের মাধ্যমে প্রাণিসম্পদে উন্নত গবেষণা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণের দেশের কৃষক ও খামারিরা উপকৃত হবে।

অধ্যাপক ড. মো. মুনির হোসেনের সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনায় আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা, প্রক্টর, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, শিক্ষকবৃন্দ, গবেষক, প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, শিক্ষার্থী এবং আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে অতিথিবৃন্দ সরেজমিনে ল্যাবটি পরিদর্শন করেন এবং এর আধুনিক অবকাঠামো, উন্নত যন্ত্রপাতি ও গবেষণা সুবিধাসমূহ সম্পর্কে অবহিত হন।

অধ্যাপক ড. মো. সামছুল আলম ভূঁঞা বলেন, এই ল্যাবে সর্বোচ্চ জৈব-নিরাপত্তা বজায় রেখে কৃত্রিম পদ্ধতিতে গবাদিপশুর ভ্রূণ উৎপাদন, ভ্রূণের বৃদ্ধি ও বিকাশ পর্যবেক্ষণ এবং আধুনিক জেনোম এডিটিং প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে নির্দিষ্ট ও কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন প্রাণি উৎপাদনের গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এর মাধ্যমে দুধ ও মাংস উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, পরিবেশের সঙ্গে অভিযোজন সক্ষমতা উন্নয়ন এবং ভবিষ্যৎ চাহিদাভিত্তিক প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে কার্যকর ও টেকসই বৈজ্ঞানিক সমাধান উদ্ভাবনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। যা দেশের প্রাণিসম্পদ ও বায়োটেকনোলজি গবেষণায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে।

অধ্যাপক ড. মো. মুনির হোসেন বলেন, দেশের প্রাণিসম্পদে একই সাথে ইন ভিট্রো কালচার ও জিনোম এডিটিং এর গবেষণাগার বাংলাদেশে এটিই প্রথম। তাছাড়া এটি বিএসএল ২+ বিশিষ্ট একটি ল্যাব। একই সঙ্গে কোভিড-১৯-এর মতো যেকোনো প্যান্ডেমিক পরিস্থিতিতে দেশের জরুরি প্রয়োজনে এই ল্যাব তাৎক্ষণিক ও কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। তাছাড়া এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী, পিএইচডি গবেষক এবং নবীন বিজ্ঞানীরা অত্যাধুনিক কৌশলে হাতে-কলমে শিক্ষা ও গবেষণার বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ পাবেন। এর ফলে দেশীয় প্রাণিসম্পদ উন্নয়নের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ ও সহযোগিতামূলক গবেষণায় সম্পৃক্ত হওয়ার একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম তৈরি হবে।

বিশ্বমানের এই অত্যাধুনিক ল্যাবটি বাংলাদেশে প্রাণিসম্পদ ও জৈবপ্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষা ও গবেষণাকে একটি নতুন উচ্চতায় উন্নীত করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন উপস্থিত অতিথিবৃন্দ।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top