ওসমান গনি, বান্দরবান প্রতিনিধি:
বান্দরবানের রুমা উপজেলার কেওক্রাডং সংলগ্ন দুর্গম সুংসুয়াং পাড়ার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানে সেনাবাহিনীর অর্থায়নে ও সার্বিক সহায়তায় একটি ইকো রিসোর্ট নির্মাণ করা হচ্ছে।
২৭ ডিসেম্বর (শনিবার) দুপুরে সেনাবাহিনীর বান্দরবান রিজিয়ন এর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম রাকিব ইবনে রেজওয়ান, এএফডব্লিউসি, পিএসসি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সুংসুয়াং পাড়ায় নির্মাণাধীণ আলা মি ত্ল্যাং লা রিসোর্ট এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন এর শুভ উদ্বোধন করেন।
এসময় বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য লাল জার লম বম, সেনা রিজিয়নের জিএস টু মেজর পারভেজ রহমান, বম সম্প্রদায়ের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ এবং সুংসুয়াং পাড়ার বাসিন্দারা উপস্থিত ছিলেন।
সুত্রে জানা যায়, বান্দরবানের রুমা উপজেলার কেওক্রাডং সংলগ্ন সুংসুয়াং পাড়ায় বম সম্প্রদায়ের সাধারণ জনগণের বসবাস। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাস থেকে শুরু হওয়া কুকি ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ) এর সাথে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘাতে রুমা উপজেলায় সৃষ্ট অস্থিতিশীল পরিবেশে বম জনগোষ্ঠীর কিছু পরিবার এবং সদস্য নিজ পাড়া ছেড়ে ভারতের মিজোরাম এবং সীমান্তবর্তী দুর্গম অঞ্চলে আশ্রয় গ্রহণ করে। সেনাবাহিনীর চলমান বিশেষ অভিযানের ফলে রুমা উপজেলায় কেএনএ সশস্ত্র সদস্যদের আধিপত্য বহুলাংশে হ্রাস পায় এবং তাদের অনেকেই স্বাভাবিক জীবনে ফেরত আসতে আগ্রহ প্রকাশ করে।

সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় সেনাবাহিনী নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এবং অর্থায়নে এই সকল বাস্তুচ্যুত বম পরিবারকে নিজ নিজ পাড়ায় ফেরত আনার কার্যক্রম শুরু করে। ইতিমধ্যে প্রত্যাবর্তনকারী বম পরিবারের পুনর্বাসনের জন্য ২০ লক্ষ টাকা ২৪ পদাতিক ডিভিশন হতে বরাদ্দ করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহায়তায় গত ১৮ নভেম্বর ২০২৪ তারিখ হতে বম পরিবারের সদস্যরা পুনরায় তদের নিজ আবাসভূমিতে প্রত্যাবর্তন করা শুরু করে এবং অদ্যাবধি সর্বমোট ২০২টি পরিবারের ৫০৩ জন সদস্য প্রত্যাবর্তন করেছেন। একই সাথে এইসব ফেরত আসা পরিবার ও তাদের সদস্যদের কর্মসংস্থান এবং আর্থ-সামাজিকভাবে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে গত ২০২৫ সালের ৫ জুন হতে শুরু করে পর্যায়ক্রমে রুমা উপজেলার বিভিন্ন আকর্ষণীয় স্থান পর্যটকদের জন্য খুলে দেয়া হয়।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২১০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত সুংসুয়াং পাড়ায় বসবাসরত বম জনগোষ্ঠীর জীবন যাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে সেনাবাহিনী ইতিমধ্যে নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় সুংসুয়াং পাড়ায় পাড়াবাসির জন্য (যার মালিকানা এবং পরিচালনার দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে স্থানীয় বম জনগোষ্ঠীর কাছে থাকবে) একটি ইকো রিসোর্ট নির্মাণ প্রকল্পের প্রাথমিক উদ্বোধন করা হয়।
সুংসুয়াং পাড়ার নির্মাণাধীণ আলা মি ত্ল্যাং লা রিসোর্ট এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে সেনাবাহিনীর বান্দরবান রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম রাকিব ইবনে রেজওয়ান, এএফডব্লিউসি, পিএসসি বলেন, দি ম্যাজিস্টিক টাইগার্স’ (১৬ ই বেংগল) এর সেনা সদস্যরা পরিকল্পনা প্রণয়ন থেকে শুরু করে দুর্গম এলাকায় রিসোর্ট নির্মাণের জন্য স্থানীয় জনসাধারণকে সকল ধরনের সহযোগিতা প্রদান করে চলেছেন। ২৪ পদাতিক ডিভিশনের অর্থায়নে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা ব্যয় করা হচ্ছে।
এই রিসোর্ট স্থাপনের ফলে প্রত্যাবর্তনকৃক্ত বম সম্প্রদায়ের সদস্যদের জন্য সরাসরি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি তাদের জীবন মানের উন্নয়ন হবে। রিসোর্ট থেকে অর্জিত আয়ের সম্পূর্ণ অংশ সুংসুয়াং পাড়াবাসীর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন সামাজিক কল্যাণমূলক কাজে ব্যবহৃত হবে।
রিজিয়ন কমান্ডার আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র দলগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর অভিযানের পাশাপাশি পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য সেনাবাহিনীর এই ধরনের জনকল্যাণ মূলক কার্যক্রম ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়ন নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।