৯ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১১ই জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

এফবিআই বিলাসবহুল ৮টি গাড়ি, পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জয়ের সম্পৃক্ততা পেয়েছে

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) – বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৮টি বিলাসবহুল গাড়িসহ পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে।

এফবিআইয়ের তদন্তে আরও জানা গেছে, হাসিনা ও জয় যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে ৩০ কোটি ডলার (প্রায় ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা) পাচার করেছেন।

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাটি দাবি করেছে, তারা জয়ের আর্থিক কর্মকাণ্ডে উল্লেখযোগ্য অনিয়ম উদঘাটন করেছে।

এফবিআইয়ের অনুসন্ধানের ভিত্তিতে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন ২০২৪ সালের ২২ ডিসেম্বর হাসিনা ও জয়ের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে ৩০০ মিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগের তদন্ত শুরু করে।

২০২৩ সালের ২৩ এপ্রিল মার্কিন বিচার বিভাগের অপরাধ বিভাগের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে এফবিআইয়ের প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। এফবিআইয়ের প্রতিবেদনের একটি অনুলিপি দুদক হাতে পেয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

এফবিআই জয়ের মালিকানাধীন ৮টি বিলাসবহুল গাড়ি পেয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে – ম্যাকলারেন ৭২০এস (মূল্য ২ লাখ ৫০ হাজার ৫৭৮ ডলার), মার্সিডিজ বেঞ্জ এএমজি জিটি (মূল্য ১ লাখ ৯ হাজার ৮০৬ ডলার), মার্সিডিজ বেঞ্জ এস-ক্লাস (মূল্য ৫১ হাজার ৮ ডলার), এসএল শ্রেণির মার্সিডিজ বেঞ্জ (৭৩ হাজার ৫৭০ ডলার), লেক্সাস জিএক্স ৪৬০ (মূল্য ৩০ হাজার ১৮২ ডলার), রেঞ্জ রোভার (৩৭ হাজার ৫৮৬ ডলার), জিপ গ্র্যান্ড চেরোকি (৭ হাজার ৪৯১ ডলার) এবং গ্র্যান্ড চেরোকি (৪ হাজার ৪৭৭ ডলার)।

এফবিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা হংকং ও কেম্যান আইল্যান্ডে সজীবের ব্যাংক হিসাব খুঁজে পেয়েছে। স্থানীয় একটি মানি এক্সচেঞ্জ কোম্পানির মাধ্যমে ওয়াশিংটন ডিসি, নিউইয়র্ক ও লন্ডনে সন্দেহজনক অর্থ স্থানান্তরের বিষয়টি জানা যায়।

জয়ের সন্দেহজনক কার্যকলাপ খতিয়ে দেখতে এফবিআই যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই অনুসন্ধানগুলো সম্ভাব্য অবৈধ ক্রিয়াকলাপ সম্পর্কে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন।

এফবিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্পেশাল এজেন্ট লা প্রিভোটের সঙ্গে মার্কিন বিচার বিভাগের সিনিয়র ট্রায়াল অ্যাটর্নি লিন্ডা স্যামুয়েলসের যোগাযোগ হয়। তিনি বাংলাদেশ থেকে ৩০০ মিলিয়ন ডলার চুরি এবং যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাচার সংক্রান্ত একটি মামলায় ওয়াশিংটন ফিল্ডের সহায়তা চেয়েছিলেন।

হাসিনা ও সজীব সজীব যুক্তরাষ্ট্র ও কেম্যান আইল্যান্ডে অর্থ পাচার করেছেন উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, বিচার বিভাগের সম্পদ বাজেয়াপ্তকরণ বা মানি লন্ডারিং বিভাগ এসব তহবিল খুঁজে বের করতে, সংযত করতে, জব্দ করতে ওয়াশিংটন ফিল্ডের সহায়তা চেয়েছিল। আমাদের তদন্তে ওয়াজেদ কনসাল্টিং ইনকর্পোরেটেড নামে সন্দেহজনক কার্যকলাপও পাওয়া গেছে। ওয়াজেদ কনসালট্যান্ট বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে অসংখ্য ব্যবসায় নিয়োজিত ছিল এবং বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট প্রকল্পের যুক্ত ছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব আর্থিক লেনদেনের বৈধতা নির্ধারণ ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সতর্কতার সঙ্গে যাচাই-বাছাই ও তদন্তের দাবি রাখে।

এফবিআই আরও বলেছে, তারা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য যাচাই এবং যে কোনো সম্ভাব্য অবৈধ কার্যক্রম মোকাবেলায় সহযোগিতা করার জন্য দুদকের সাথে যোগাযোগ করেছে।

তদন্তে ম্যাসাচুসেটস ও ভার্জিনিয়ায় সজীব সজীবের স্ত্রী ক্রিস্টিন ও. ওয়াজেদের সঙ্গে সন্দেহজনক ব্যাংক কার্যক্রমের তথ্যও পাওয়া গেছে বলেও উল্লেখ করা হয়।

এফবিআই আরও জানিয়েছে, তাদের গোপন তথ্যদাতা জয়ের দুই সহযোগীর নামও জানিয়েছেন- যুক্তরাষ্ট্র মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক নিজাম চৌধুরী। গোয়েন্দা সংস্থাটি ওয়াজেদ কনসাল্টিং, ইকম সিস্টেমস, এমভিয়ন ও ইন্টেলিজেন্ট ট্রেড সিস্টেমস লিমিটেডসহ পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে সজীবের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে।

শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ও পরিবারের অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। কমিশনের উপ-পরিচালক মো. সালাউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি তদন্ত দল অনুসন্ধান শুরু করে এবং ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য চেয়ে সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকে চিঠি দিয়েছে।

অনুসন্ধান দলের এক সদস্য সোমবার বলেছেন, তারা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, পাসপোর্ট অফিস, নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন দপ্তরে তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন।

অর্থ পাচারের বিষয়ে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সূত্র থেকে ইতোমধ্যে তথ্য পাওয়া গেছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, পাসপোর্ট অফিস ও নির্বাচন কমিশন তাদের কিছু তথ্য দিলেও বাকি অফিসগুলো এখনো চিঠির জবাব দেয়নি।

এর আগে গত ১৭ ডিসেম্বর শেখ হাসিনা, সজীব সজীব, শেখ রেহানা এবং শেখ রেহানার মেয়ে ও ব্রিটিশ মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ৮০ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত শুরু করে কমিশন।

২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ ৯টি প্রকল্পে ৮০ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।

সূত্রঃ নিউ এজ

 

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

এই বিভাগের আরও খবর

আবদুল হামিদকে আটকানোর পর ফোনে নির্দেশ: কীভাবে ছাড় পেলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি?

নিজস্ব প্রতিনিধি: সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের আকস্মিক দেশত্যাগ নিয়ে দেশজুড়ে চলছে তীব্র সমালোচনা। এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ অভিযোগ করেছেন, রাষ্ট্রপতি মো.

আসিম জাওয়াদের ১ম মৃত্যুবার্ষিকী: এক বছর পরও থামেনি মায়ের কান্না

নিজস্ব প্রতিনিধি: চোখের জলে ভেজা সেই দিনটি আজও ভুলতে পারেননি স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদের মা নাসরিন জাওয়াদ। ঠিক এক বছর আগে, ২০২৪ সালের ৯

গুম হওয়া বিএনপি নেতা সুমনের বাসায় পুলিশ, পরে দুঃখপ্রকাশ ডিএমপির; এসআই প্রত্যাহার

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) পরোয়ানা নিয়ে গুম হওয়া বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাসায় অভিযান চালানোর পর ভুল বুঝতে পেরে আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ

“আজই ফয়সালা হবে—কারা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে চায়”: এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ

নিজস্ব প্রতিবেদক: ফ্যাসিস্ট ও গণহত্যাকারী আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ ও সমাবেশের ডাক দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। শুক্রবার (৯ মে) সকাল সাড়ে

Scroll to Top