২১শে আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৭শে সফর, ১৪৪৭ হিজরি

ক্যামেরায় স্বপ্ন বুনছেন নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রাবণ

ইকবাল মাহমুদ, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিঃ 

ইশতিয়াক আহমেদ শ্রাবণ ২০১৯ সালে ফটোগ্রাফির জগতে প্রবেশ করেন। একটি অ্যান্ড্রয়েড ফোন দিয়ে তার যাত্রা শুরু। তখনো ফটোগ্রাফির গভীরতা বা গুরুত্ব সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানতেন না। করোনার সময় ঘরবন্দি অবস্থায় ছবি তোলা তার নেশায় পরিণত হয়। ধীরে ধীরে তিনি বিভিন্ন অনলাইন ফটোগ্রাফি গ্রুপে যুক্ত হন এবং পরিচিত হতে থাকেন স্বনামধন্য ফটোগ্রাফারদের সঙ্গে। তাদের কাজ দেখে তিনি প্রতিনিয়ত অনুপ্রাণিত হন এবং ফটোগ্রাফির প্রতি ভালোবাসা বাড়তে থাকে।

ইশতিয়াকের ভাষায়, “আমি যা মুখে বলতে পারি না, তা ছবির মাধ্যমে প্রকাশ করা সম্ভব। একটি শক্তিশালী ছবি কখনো কখনো শব্দের চেয়ে বেশি প্রভাবশালী হয়ে ওঠে। এটি মানুষের আবেগকে স্পর্শ করে এবং কখনো কখনো সামাজিক পরিবর্তনের সূচনা করে।” ফটোগ্রাফির মাধ্যমে গল্প বলার এই ক্ষমতা তাকে আকর্ষণ করে এবং আলোকচিত্রকে নিজের অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে বেছে নেন।

ইশতিয়াক বিশ্বাস করেন একটি ছবি পুরো পৃথিবীকে বদলে দিতে পারে। জনজীবনের ছবি তোলায় তার বিশেষ আগ্রহ। তিনি মনে করেন, একটি মুখচ্ছবি হাজারো গল্প বলতে সক্ষম। খেটে খাওয়া মানুষের সংগ্রামী জীবন এবং তাদের পরিশ্রমের চিত্র ফুটিয়ে তোলাই তার ফটোগ্রাফির অন্যতম লক্ষ্য।

বর্তমানে তার বেশ কিছু প্রোজেক্ট চলমান রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম একটি “Fatigue Sleep”। এই প্রোজেক্টে তিনি সদরঘাটের নৌকা থেকে ফুটপাত, ভ্যানগাড়ি—সব জায়গায় ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে থাকা মানুষদের ছবি তুলে ধরতে চান। এর মাধ্যমে তিনি মানুষের দৈনন্দিন জীবনের ক্লান্তি ও সংগ্রামকে তুলে আনবেন বলে আশা করেন।

ফটোগ্রাফির পাশাপাশি ডকুমেন্টারি এবং ট্রাভেল ফটোগ্রাফিতেও তার আগ্রহ রয়েছে। ইশতিয়াক জানান, তার ফটোগ্রাফির সব অর্জন নিজের প্রচেষ্টায় এসেছে। কোনো সহযোগিতা ছাড়াই একক প্রচেষ্টায় এগিয়ে গেছেন তিনি।

বর্তমানে তিনি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগে অধ্যয়নরত। এই বিভাগে অধ্যয়ন তাকে নতুন নতুন দিক উন্মোচনে সাহায্য করছে। তার শিক্ষকেরা ফটোগ্রাফির সম্ভাবনা এবং এর বহুমুখী কর্মক্ষেত্র সম্পর্কে তাকে প্রতিনিয়ত অবহিত করছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, এই বিভাগ তার স্বপ্ন পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

ইশতিয়াকের ফটোগ্রাফি ইতোমধ্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃতি পেয়েছে। তিনি বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ড ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতা ২০২৪-এ বিজয়ী হয়েছেন। এছাড়া এক্সপ্লোর ফটোগ্রাফি বাংলাদেশ বার্ষিক প্রতিযোগিতা ২০২২-এ প্রথম রানার আপ, সিয়েনা ফটো প্রতিযোগিতা ২০২৪ এবং হিপা মাসিক ছবি প্রতিযোগিতায় ফাইনালিস্ট হয়েছেন।

তার কাজ প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম যেমন CCTV Asia Pacific, CRI Bangla, KP.ru এবং ফ্রান্সের VSD ম্যাগাজিনে।

ইশতিয়াক মনে করেন, ফটোগ্রাফির এই যাত্রা তার জীবনের একটি বিশেষ অধ্যায়। তার মতে, “ক্যামেরার লেন্সের মাধ্যমে আমি জীবনের গল্পগুলো তুলে ধরতে চাই এবং সেই গল্পগুলোর মাধ্যমে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে চাই।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top