৩০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২রা জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় দবিরগঞ্জ ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

মোঃ জাহিদুর হক, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃ

সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার দবিরগঞ্জ ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। রোগীদের অভিযোগ, একজন স্বীকৃত চক্ষু বিশেষজ্ঞ না হয়েও নিয়মিত রোগী দেখছেন এক নারী, এবং প্রতিটি রোগীর কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ২০০ টাকা ভিজিট।

হাসপাতালের রিসিপশন থেকে জানা যায়, মেরিনা সুলতানা নামের এক ব্যক্তি প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রোগী দেখেন এবং নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ গ্রহণ করেন। তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি কোনো স্বীকৃত চিকিৎসক নন। স্থানীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, তিনি প্রেসক্রিপশন প্রদান এবং রোগ নিরীক্ষার নামে রোগীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করছেন।

এ বিষয়ে মেরিনা সুলতানার সাথে কথা বললে তিনি দাবি করেন, “আমি রোগী দেখার জন্য কোনো ভিজিট নেই না, সমস্ত অর্থ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হাতে যায়।” কিন্তু তাকে প্রশ্ন করা হলে, তিনি কেন চিকিৎসকের ভূমিকায় থেকে রোগীদের প্রেসক্রিপশন দিচ্ছেন, তখন তিনি সঠিক জবাব দিতে পারেননি এবং বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ওপর চাপিয়ে দেন।

হাসপাতালের ম্যানেজার খায়রুল ইসলাম কাগজপত্র সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “হাসপাতালের কাগজপত্র বড় বিষয় না, যার ক্ষমতা যত বেশি, তার প্রতিষ্ঠান তত ভালো চলে!”

অন্যদিকে, হাসপাতালের মালিক সুজন মাহমুদ নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দেন এবং তার ভিজিটিং কার্ডে “ডক্টর এমডি সুজন মাহমুদ” লেখা রয়েছে। অথচ তদন্তে জানা যায়, তিনি ডিএমএফ (ডিপ্লোমা ইন মেডিসিন) ধারী একজন ব্যক্তি, কোনো এমবিবিএস ডাক্তার নন।

হাসপাতালের লাইসেন্স সম্পর্কে জানতে চাইলে মালিক সুজন মাহমুদ বলেন, “আমাদের সমস্ত কাগজপত্র সম্পূর্ণ আছে।” তবে পরবর্তীতে জানা যায়, হাসপাতালের লাইসেন্স থাকলেও তা ২০২৪ সালের জুন মাসেই মেয়াদ শেষ হয়েছে, যা এখনো নবায়ন করা হয়নি।

এছাড়া, পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো অনুমোদন সংক্রান্ত কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে, তারা কোনো সুনির্দিষ্ট দলিল দেখাতে পারেননি।

স্থানীয়দের দাবি, এ ধরনের অনিয়মের কারণে অনেক রোগী ভুল চিকিৎসার শিকার হতে পারেন, যা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তারা দ্রুত তদন্ত এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব হচ্ছে, অবিলম্বে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। যদি এই অভিযোগ সত্যি হয়, তাহলে হাসপাতালটি বন্ধ করা ও দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
এই অভিযোগের বিষয়ে উল্লাপাড়া উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (THO) আব্দুল কাদের এর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, মেরিনা সুলতানা স্বীকৃত চক্ষু বিশেষজ্ঞ না হয়েও কিভাবে রোগী দেখছেন এবং প্রেসক্রিপশন করছেন, তা অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে।তিনি আরো বলেন একজন এমবিবিএস বা বিডিএস ছাড়া অন্য কেউ তার নামের আগে ‘ডক্টর’ লিখতে পারেন না।”

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

এই বিভাগের আরও খবর

বিদ্যুৎ চলে গেলে, খোকসা হাসপাতালে অন্ধকারেই জরুরি সেবা! রোগীসেবা চরমভাবে বিঘ্নিত

মোঃ নুর আলম পাপ্পু, কুষ্টিয়া প্রতিনিধিঃ কুষ্টিয়া খোকসা হাসপাতালে বিদ্যুৎ চলে গেলে খোকসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যেন অচল হয়ে পড়ে। আজ ২৪ এপ্রিল সন্ধ্যার পর

পিরোজপুরে চীনের প্রস্তাবিত হাসপাতাল চেয়ে ডক্টর ইউনুসকে লেবার পার্টির চেয়ারম্যানের চিঠি

নিয়াজ, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: খুলনা ও বরিশাল বিভাগের মধ্যবর্তী জেলা পিরোজপুরের কাউখালিতে চীনের ১০০০ শয্যা বিশিষ্ট “চীন-বাংলাদেশ ফেন্ডশীপ হাসপাতাল” নির্মানের স্থান নির্ধারনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান

এক চুইংগামেই একশ থেকে তিন হাজার মাইক্রোপ্লাস্টিক ঢুকছে পেটে!

সৈয়দ মাকসুমুল হক চৌধুরী সিয়াম, মোহনগঞ্জ প্রতিনিধি : চুইংগাম দু রকমের হয়। প্রাকৃতিক ও সিনথেটিক। আমরা শিশুদের যে চুইংগাম কিনে দিই, সেগুলো সিনথেটিক। তবে প্রাকৃতিক

চট্টগ্রাম কিডনি ফাউন্ডেশনে ডায়ালাইসিস ফ্লোর ও কিডনি প্রতিস্থাপন থিয়েটার উদ্বোধন করলেন সিটি মেয়র

আসগর সালেহী, চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ চট্টগ্রাম কিডনি ফাউন্ডেশন, খুলশীতে ১৪ এপ্রিল সোমবার বিকেলে ২৫ শয্যাবিশিষ্ট ডায়ালাইসিস ফ্লোর ও কিডনি প্রতিস্থাপন অপারেশন থিয়েটারের উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম সিটি

Scroll to Top