২১শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৫শে জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

উন্নয়নের নামে অপরিকল্পিতভাবে কাটা হচ্ছে গাছ,প্রতিবাদে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

তনিয়া আক্তার,জাককানইবি প্রতিনিধিঃ

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুদ্বীপে গাছ কাটার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবাদী সংগঠন ‘গ্রীন ক্যাম্পাস’।

রবিবার (৯ মার্চ) সকাল ১১:৩০ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নজরুল ভাস্কর্যের সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী ও পরিবেশপ্রেমী সংগঠনের সদস্যরা অংশ নেন।

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, পরিকল্পনা দপ্তরের সিদ্ধান্তে ক্যাম্পাসের চারুদ্বীপ এলাকায় ২০ থেকে ২৫ বছর বয়সী বরই, কাঁঠাল ও তাল গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এছাড়া, বেশ কিছু গাছের গোড়ায় এস্কেভেটর দিয়ে আঘাত করে তাদের গুঁড়ি নড়বড়ে করা হয়েছে, যার ফলে গাছগুলো এখন মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে। আরও বলেন, চারুদ্বীপ ক্যাম্পাসের অন্যতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্থান। এখানে অপ্রয়োজনীয় রাস্তা নির্মাণের নামে সরকারি অর্থ অপচয় করা হচ্ছে, যা পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

মানববন্ধনে গ্রীন ক্যাম্পাসের সভাপতি সাজন চন্দ্র পাড় বলেন, একটি গাছের বয়স ২০ থেকে ২৫ বছর হতে সময় লাগে। অথচ পরিকল্পনা দপ্তরের সিদ্ধান্তে গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে, কোনো বিকল্প চিন্তা করা হয়নি। আমরা চাই, পরিবেশবান্ধব পরিকল্পনা হোক এবং যেসব গাছ কাটা হয়েছে, তার যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিয়ে দ্রুত নতুন গাছ লাগানো হোক।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল বলেন, অপরিকল্পিত উন্নয়ন প্রকল্পের নামে গাছ গুম করে দেয়া এবং সরকারি অর্থের অপচয় কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।

মানববন্ধন শেষে আন্দোলনকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন এবং ভবিষ্যতে পরিবেশবিরোধী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে আরও বড় কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন। স্মারকলিপিতে শিক্ষার্থীরা ৫টি দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো, চারুদ্বীপের বৃক্ষগুলোকে নির্বিচারে কেন কাটা হলো এবং কর্তনকৃত গাছের কান্ড ও ডালপালা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে পাচার কেন করা হলো এবং কর্তনকৃত বৃক্ষের মূল মাটিচাপা দিয়ে আলামত লোপাটের চেষ্টা কেন করা হলো, তার সঠিক কারণ দর্শাতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে অযৌক্তিকভাবে কোন প্রকার বৃক্ষ কর্তন করা যাবে না এবং ইতোমধ্যেই অপ্রয়োজনে যে সকল বৃক্ষ নিধন করা হয়েছে তার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। পরিবেশবান্ধব এবং ধুলাবালি মুক্ত ক্যাম্পাস গড়তে যেসব রাস্তায় আরসিসি-এর কাজ সম্পন্ন হয়েছে, সেসব রাস্তায় অতিদ্রুত বিটুমিনের আস্তরণ দিয়ে ক্যাম্পাসের স্বাস্থকর পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে পর্যাপ্ত ডাস্টবিনের ব্যবস্থা করতে হবে এবং অতিরিক্ত মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মশা প্রজনন কেন্দ্র আন্ডারগ্রাউন্ড ইলেক্ট্রিক লাইনের পানি অপসারণের ব্যবস্থা করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়কে ১০০ বছর পিছিয়ে দেয়া, পরিবেশ- প্রয়োজনীয়তা- উপযোগীতা বিবেচনা ও আধুনিক পরিকল্পনায় অক্ষম- পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস দপ্তরের পরিচালক প্রকৌশলী মোঃ হাফিজুর রহমানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, উন্নয়নের নামে কাজগুলো আমি আসার আগে থেকেই শুরু হয়েছে। দেখা যায় দায়িত্বরত যে লেবাররা আছে তাদের অশিক্ষা ও জ্ঞানহীনতার কারণে এই ভুলগুলো হয়ে যায়। তাদের সাথে কথা বলেছি, তারা ভুল স্বীকার করেছে।

এছাড়া ডিপিডি হাফিজুর রহমানের নিয়োগ বাতিল প্রসঙ্গে উপাচার্য বলেন, নতুন ডিপিডি নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। যোগ্য কাউকে পেলে প্রতিস্থাপন করা হবে। আপাতত ক্যাম্পাসে চলমান দীর্ঘমেয়াদী কাজগুলো সম্পর্কে একমাত্র তিনিই ভালো বোঝেন।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top