জাকির হোসেন হাওলাদার, পটুয়াখালী প্রতিনিধি
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক পদে আবেদন করার সুযোগ পেলেন রাজনৈতিক বৈষম্যের শিকার দুই মেধাবী ছাত্র কৃষিবিদ হাসিব মোহাম্মদ তুষার ও রাহাত মাহমুদ। শিক্ষক হওয়ার সকল যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বিগত ১/১১ সরকারের সময় আওয়ামী চক্রান্তের কারণে তাদেরকে শিক্ষক পদের মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দেয়া হয়নি উপরন্তু তারা যাতে অত্র বিশ্ববিদ্যালয় কোনভাবে চাকরিতে ঢুকতে না পারেন এজন্য কর্মকর্তা পদে বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাসে প্রথমবারের মতো লিখিত পরীক্ষা চালু করা হয়।
উল্লেখ্য যে, উক্ত লিখিত পরীক্ষার পরে অদ্যাবধি অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে আর কোন কর্মকর্তা নিয়োগে লিখিত পরীক্ষা হয়নি। মেধাবী হওয়ার সুবাদে কর্মকর্তা নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদেরকে নিয়োগ পত্র ইস্যু করে। পারিবারিক রুটি রুজির তাগিদে কৃষিবিদ হাসিব মোহাম্মদ তুষার ও রাহাত মাহমুদ বিগত ২রা এপ্রিল ২০০৭ তারিখে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অনেকটা নিরুপায় হয়ে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট সরকারের রোষানলে পরে পেশা পরিবর্তন করে শিক্ষক পদে আবেদন দাখিল করা তো দূরের কথা উপরন্তু কর্মক্ষেত্রে প্রতি পদে পদে লাঞ্ছিত ও বঞ্চিত হয়েছেন। আরো উল্লেখ্য যে, হাসিব মোহাম্মদ তুষার ও রাহাত মাহমুদ ছাত্র জীবনে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন কমিটির অন্যতম সক্রিয় সদস্য হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।তারা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও হল শাখা কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
উভয়েই অত্র বিশ্ববিদ্যালয় এর ইত্তেফাক ও প্রথম আলো পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হিসেবে ও কাজ করেন। হাসিব মোহাম্মদ তুষার পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এর কৃষি অনুষদের মেধা তালিকায় স্থান প্রাপ্ত ছাত্র ছিলেন এবং পরবর্তীতে তিনি ইন্দোনেশিয়া সরকারের ফেলোশিপ প্রাপ্ত হয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি ও ইউনিভার্সিটি পুত্রা মালয়েশিয়া থেকে ফেলোশিপ প্রাপ্ত হয়ে পিএইচডি ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন। হাসিব মোহাম্মদ তুষার ইউনিভার্সিটি পুত্রা মালয়েশিয়াতে তার বিভাগে দীর্ঘদিন যাবত শিক্ষার্থীদের ক্লাস কার্যক্রম সুনামের সাথে পরিচালনা করেছেন। ডক্টর রাহাত মাহমুদ সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হতে স্বনামধন্য বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি’র BAS-USDA ফেলোশিপ প্রাপ্ত হয়ে পিএইচডি ডিগ্রী সম্পন্ন করেছেন এবং ‘রিসার্চ এসোসিয়েট’ হিসেবে চার বছর সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স,মাস্টার্স ও পিএইচডি শিক্ষার্থীদের গবেষনা ও শিক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত ছিলেন ।
অবশেষে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সাম্প্রতিক বিজ্ঞাপিত ‘সহকারী অধ্যাপক’ পদে উভয়েই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে আবেদন দাখিল করার সুযোগ পাওয়ায় তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পাশাপাশি জুলাই বিপ্লবের আন্দোলনকারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন।
তবে ফ্যাসিস্ট চক্রান্ত এখনো চলমান রয়েছে বলে তারা অভিযোগ করেন। ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগিরা তাদেরকে বঞ্চিত করতে এখনো নানা ধরনের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও বৈষম্যের কারনে ইতোপূর্বে বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষক হতে না পারলেও জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বর্তমান ভাইস-চ্যান্সেলর মহোদয় ডক্টর রাহাত মাহমুদ ও ডক্টর হাসিব মোহাম্মদ তুষার কে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করে তাদের প্রতি বঞ্চনার প্রতিদানে যথাযথ ভূমিকা রাখবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র -শিক্ষক -কর্মকর্তা -কর্মচারীবৃন্দ।