৫ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৭ই জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

৫ মে: শাপলা চত্বরের সেই রক্তাক্ত রাতের স্মৃতি

আজ ঐতিহাসিক ৫ মে। ক্যালেন্ডারে অনেক বছর পেরিয়ে গেলেও বদলায়নি সেই ‘ভয়াল রাতের স্মৃতি’। ২০১৩ সালের এই দিন, ঢাকার মতিঝিল শাপলা চত্বরে ইতিহাসের ‘নির্মমতম গণহত্যা’ সংঘটিত হয়।

আমি ছিলাম সেই ‘ঈমানি কাফেলার’ একজন। রাতভর আলেম-ওলামা, হাফেজ-মুফতী, তাওহিদি জনতা যখন তাহাজ্জুদের নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত আর ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ ধ্বনি তুলে আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করছিল — ঠিক তখনই ‘রাষ্ট্রীয় বাহিনী’ ঘিরে ফেলে শাপলা চত্বর। নিভিয়ে ফেলে ‘বাতি’, সরিয়ে দেয় ‘ক্যামেরা’। শুরু হয় ‘ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম অভিযান’।

সেই রাতে শহীদ হন ‘শত শত নবীপ্রেমিক আলেম-তালিবে ইলম’। কেউ খুঁজে পায়নি প্রিয়জনের লাশ, কেউ হারিয়েছেন সন্তানের ‘রক্তমাখা জামা’। ঢাকার আকাশে ছড়িয়ে পড়েছিল ‘গুলির শব্দ’, ‘রক্তের গন্ধ’। অথচ বলা হয়েছিল, “কোনো লাশ নেই, হেফাজত পালিয়েছে।” সেই ‘মিথ্যা’, সেই ‘উপহাস’ আজও ইতিহাসের ‘কলঙ্ক’।

আল্লামা আহমদ শফী (রহ.) ও জুনায়েদ বাবুনগরী (রহ.)-এর মতো ‘ঈমানি নেতাদের’ ওপর চলে ‘অপপ্রচার’, ‘গ্রেপ্তার-নির্যাতনের ষড়যন্ত্র’। শহীদ বাবুনগরী (রহ.) ‘নির্যাতনের মুখেও’ বুকভরা ঈমান আর আল্লাহর ভরসা নিয়ে ‘শাহাদাত বরণ করেন’। আজও তাঁর কবরের মাটিতে ‘তাজা রক্তের স্মৃতি’ ভাসে।

বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংগঠন জানায়, সেদিন ৩৩ হাজার ‘রাবার বুলেট’, ৫ হাজারের বেশি ‘গুলি’, হাজার হাজার ‘টিয়ারশেল’ ও ‘সাউন্ড গ্রেনেড’ নিক্ষেপ হয়। তবে নিহতের কোনো সরকারি তথ্য আজও প্রকাশ হয়নি।

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ দীর্ঘ এক যুগ পর ৯৩ জন ‘শহীদের প্রাথমিক তালিকা’ প্রকাশ করেছে। যাচাই-বাছাই শেষে আরও নাম প্রকাশের কথা জানিয়েছে সংগঠনটি। কিছু গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘শহীদের তালিকা’ নামে যে তথ্য প্রকাশিত হচ্ছে — সেটি হেফাজতের ‘আনুষ্ঠানিক তালিকা’ নয়। এ নিয়ে ‘বিভ্রান্তি না ছড়ানোর’ অনুরোধ জানানো হয়েছে।

২০১৩ সালের শাপলায় যেন ফিরে এসেছিল ১৮৩১-এর ‘বালাকোট’। শাইখুল ইসলাম আহমদ শফীর মাঝে ছিলেন ‘সাইয়্যেদ আহমদ শহীদ (রহ.)’-এর দীপ্তি। জুনায়েদ বাবুনগরী (রহ.) ছিলেন ‘শাহ ইসমাঈল শহীদ (রহ.)’-এর জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। সে রাতের তাজা রক্ত বাংলার প্রতিটি প্রান্তে ‘চেতনাবিন্দু’ হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে।

দীর্ঘ সময় ‘নানা প্রতিবন্ধকতায়’ শহীদদের নাম-পরিচয় সংরক্ষণে কাজ করা যায়নি। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের ‘বিপ্লবোত্তর সময়’ থেকে এ উদ্যোগকে গতি দেওয়া হয়েছে। আমরা প্রত্যাশা করবো, হেফাজতের আন্দোলনের সূচনা থেকে আজ অবধি যতগুলো ‘নবী প্রেমিক’ ‘শাহাদাত বরণ’ করেছেন, ‘গুম’ হয়েছেন, ‘খুন’ হয়েছে সবগুলোর সঠিক তথ্য জাতির সামনে প্রকাশিত হোক।

হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা আহমদ শফী (রহ.) ‘বিশেষ দিবস পালনে অনাগ্রহী’ ছিলেন। তাই হেফাজত ৫ মের ‘কর্মসূচি না করে’ সুবিধাজনক সময়ে ‘মহাসমাবেশের সিদ্ধান্ত’ নিয়েছে। তবে অনেক সংগঠন ‘স্মরণসভা’, ‘দোয়া মাহফিল’সহ কর্মসূচি পালন করছে। তাদের সাফল্য কামনা করছি।

আমাদের দাবি — ৫ মের ‘গণহত্যার বিচার’ এবং ‘শহীদদের রক্তের বদলা’ নেওয়া হোক। ‘দোষীদের শাস্তি’ নিশ্চিত করা হোক। সমস্ত ‘মিথ্যা মামলা’ প্রত্যাহার করা হোক। ‘ইতিহাস বলে’, শহীদের রক্ত বৃথা যায় না। একদিন এই বর্বরতার ‘বিচার হবেই’, ইনশাআল্লাহ।

এম. আসগর সালেহী
ভূজপুর, ফটিকছড়ি

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

এই বিভাগের আরও খবর

আবেগের কফিনে গাঁথা এক জীবনের কবরগাথা

লেখক জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান সে ছিল স্বপ্নবতী এক তরুণী—চেহারায় মাধুর্য, মননে দীপ্তি। চোখে ছিল স্বপ্ন, হৃদয়ে ছিল নির্মল আকাঙ্ক্ষা। আন্ডারগ্র্যাজুয়েট পড়ার সময় একদিন স্বাভাবিকভাবেই

ঘামে লেখা গৌরবনামা ইসলামে শ্রমিকের মর্যাদা ও মানবতার দৃষ্টিভঙ্গি

লেখক জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান সকাল যখন দিগন্তে আলো ছড়িয়ে দেয়, তখন প্রথম যে শব্দ ভেসে আসে, তা হলো হাতুড়ির শব্দ, করাতের ঘর্ষণ কিংবা জমিনে

শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠায় একমাত্র পথ ইসলাম

লেখক: মাওলানা আসগর সালেহী মে দিবসের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস: মে দিবস, আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে বিশ্বব্যাপী পালিত হয় প্রতি বছর ১ মে। এর সূচনা ১৮৮৬ সালের

“পড়তে হবে, পড়ার মতো” – নতুন দৃষ্টিকোণ নিয়ে বই পড়ার গুরুত্ব!

আব্দুল মাবুদ মোহাম্মদ ইউসুফ, মুতায়াল্লীম: দারুননাজাত সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসা, ঢাকা আজকের যুগে প্রযুক্তি ও ডিজিটাল মাধ্যমের আধিপত্য থাকা সত্ত্বেও বই পড়ার গুরুত্ব একেবারেই কমে যায়নি।

Scroll to Top