মোঃ আমিরুল হক, রাজবাড়ী প্রতিনিধি
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে আলোচিত ৩টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ এ পর্যন্ত ১৩জনকে গ্রেপ্তার করেছে। সোমবার (০৫ মে) বিকেলে রাজবাড়ী পুলিশ সুপার কার্যালয়ের কনফারেন্সরুমে প্রেস ব্রিফিং করেন পুলিশ সুপার মোছাঃ শামিমা পারভীন।
তিনি বলেন, প্রবাসী আল আমিন হত্যার ঘটনায় পুলিশ পাবনা জেলার আমিনপুর উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের ইকরাম মন্ডলের ছেলে রুবেল মন্ডল (২০), একই গ্রামের টিক্কা সরদারের ছেলে মোঃ শাকিল সরদার (২৪) কে রবিবার দিবাগত রাতে পাবনা জেলার সুজানগর ও আমিনপুর উপজেলার দুর্গম চর এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়।
গত ২৫ এপ্রিল দুপুর আড়াই টার সময় পদ্মা নদীর দুর্গম চরাঞ্চল রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের রাখালগাছি সিএন্ডবি রাস্তার মাথায় উপর্যুপরি কোপ খেয়ে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে নিখোঁজ হয়। শনিবার প্রবাসী আল আমিন (২৩) মরদেহ উদ্ধার করে গোয়ালন্দ ঘাট থানা, কাজিরহাট নৌ-পুলিশ। আল আমিন পাবনা জেলার আমিনপুর থানার ঢালারচর ইউনিয়নের রামনারায়নপুর গ্রামের আবু বক্কর মন্ডলের ছেলে।
আল আমিন প্রায় ৭ বছর যাবৎ মালয়েশিয়ায় কর্মরত ছিল। গত ৪ মাস বাড়িতে ছুটিতে এসেছে। গত ১৫-১৬ দিন আগে শাহ আলী তার নিকট ৩ হাজার টাকা দাবি করে চা-টা খাওয়ার জন্য। আল আমিন টাকা না দেওয়ায় তাকে মোবাইলে গালিগালাজ করে এবং কথা কাটাকাটি হয়। শুক্রবার দুপুর আড়াই টার সময় পাবনা জেলার আমিনপুর থানার ঢালারচর ইউনিয়নের আল আমিন, তার মামা লিটন, বোন আকলিমা সহ ঢালার চর গ্রামের খৈয়মের মেয়েকে দেখতে আসে। দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষে ফুফাতো ভগ্নিপতি মেগা সরদারকে সাথে নিয়ে আল আমিন মোটরসাইকেল যোগে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দঘাট থানার দেবগ্রাম ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের রাখালগাছি বাজারে যায়। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে শাহ আলি, রবিউল, ঠান্ডু, জুয়েল ফকির, সেলিম সহ ৭-৮ জন অজ্ঞাত ব্যক্তি ৪ টি মোটরাইকেল যোগে আল আমিনের পিছু পিছু এসে রাখালগাছি বাজারের রাস্তার মাথায় পথরোধ করে। এসময় আল আমিনকে উপর্যুপুরি ছুরিকাঘাত করলে প্রাণে বাঁচার জন্য পাশ্ববর্তী পদ্মার শাখা নদীতে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতরে ওঠার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। সে নদীর পানিতে ডুবে নিখোঁজ হয়। নিখোঁজের বিষয়টি পাবনার আমিনপুর, গোয়ালন্দ ঘাট থানা অবগত হলে গোয়ালন্দ ঘাট থানা ও কাজিরহাট নৌ পুলিশ স্পিড বোড ও ডুবুরি নিয়ে অনেক খোঁজাখুজি করে। এ ঘটনায় গত ২৬ এপ্রিল গোয়ালন্দ ঘাট থানায় মামলা দায়ের করে। এ মামলায় ইতিপুর্বে পাবনা জেলার আমিনপুর উপজেলার ধাড়াই গ্রামের মোন্তাজ সরদারের ছেলে মেগা সরদার (৪৭), একই উপজেলার চক আব্দুল শুকুর গ্রামের নায়েব আলী ফকিরের ছেলে জুয়েল রানা (৪২) ও কমরপুর গ্রামের আলো মৃধার ছেলে ঠান্ডু মৃধা (৩৫) কে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে রুবেল মন্ডল আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি প্রদান করেছে।
সর্বহারা নেতা সুশীল কুমার সরকার হত্যাকাণ্ড ঃ রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশের বিশেষ অভিযানে চরমপন্থী নেতা সুশিল হত্যার মামলার আসামী মোঃ রুবেল শেখ (২৭) কে গ্রেপ্তার করেছে। রুবেল গোয়ালন্দ উপজেলার রাখালগাছি গ্রামের মোঃ তোফসের আলী শেখের ছেলে।
রবিবার সকাল ৮টার সময় মানিকগঞ্জ জেলার শিবলায় থানার পাটুরিয়া ঘাটের মাছ বাজার হতে তাকে গ্রেপ্তার করে।
গত ২২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে গোয়ালন্দ উপজেলার কাটাখালী এলাকার ইমদাদুলের চায়ের দোকানের পাশে গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভোট ভাকলা ইউনিয়নের কেউটিল গ্রামের মনিন্দ্রনাথ সরকারের ছেলে ও চরমপন্থি নেতা সুশিল কুমার সরকার (৫৮) কে কুপিয়ে ও গুলি করে। তাকে ডেকে নিয়ে পাশেই চরমপন্থিরা অভ্যন্তরিন কোন্দলের জের ধরে তাকে গলায় কুপিয়ে ও এলোপাথারী গুলি করে পালিয়ে যায়। তাকে উদ্ধার করে সন্ধ্যা ৭টার দিকে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে। এ ব্যাপারে গোয়ালন্দ ঘাট থানায় ওইদিন রাতেই অজ্ঞাতনামা আসামী করে মামলা দায়ের করেন নিহতের ভাই সুনিল কুমার সরকার। ইতিপুর্বে এ মামলার ঘটনায় গোয়ালন্দ উপজেলার ছোট ভাকলা ইউনিয়নের বরাট চরকাচরন্দ গ্রামের মৃত সালাম শেখের ছেলে মোঃ তোফাজ্জেল শেখ ওরফে তোফা (৩৮), মৃত মজিবর শেখের ছেলে মোঃ লোকমান শেখ (৩৫), মৃত আঃ জব্বার শেখ ওরফে দোয়াত শেখের ছেলে আশিকুল শেখ ওরফে ভাসান শেখ (২৮) ও কালাম মোল্যার ছেলে মোঃ জনি মোল্যা (৩৪) কে গ্রেপ্তার করে।
সর্বহারা নেতা শহীদ মোল্যা হত্যাকান্ড ঃ রবিবার বিকেল সোয়া ৪টায় পাবনা জেলার আমিনপুর উপজেলার খাসচরের দুর্গম এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাবনা জেলার আমিনপুর উপজেলার ঢালারচর ইউনিয়নের ধড়াই গ্রামের মৃত আইনউদ্দিন মন্ডলের ছেলে খাইরুল মন্ডল (৪৬) কে গ্রেপ্তার করে।
গত ২০২৪ সালের ১৩ জুলাই পাবনা জেলার আমিনপুর থানার বড় দুর্গাপুর গ্রামের মোঃ কানাই মোল্লার ছেলে চরমপন্থী নেতা সহিদ মোল্লার (৪৪) কে হত্যা করে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ফেলে যায়। তার মরদেহ গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশ উদ্ধার করে। নদী কেন্দ্রীক চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তাকে গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের রমজান মাতুব্বর পাড়া এলাকার মেহগনি বাগানে মারপিট করা হয়। এরপর কয়েকজন মিলে বিকেল পৌনে পাঁচটার সময় তাকে গোয়ালন্দ হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা। এ ঘটনায় ১৪ জুলাই গোয়ালন্দ ঘাট থানায় মামলা দায়ের হয়। তার বিরুদ্ধে হত্যা ও চাঁদাবাজির ৫টি মামলা ছিল। এ মামলায় ইতিপুর্বে রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়নের গোপালবাড়ী গ্রামের ইদ্রিস আলী খানের ছেলে মোঃ শাকিল খান (২৫), গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের মোঃ হালিম খানের ছেলে মোঃ হাসিবুল হাসান (২২) কে গ্রেপ্তার করে।
রাজবাড়ী পুলিশ সুপার মোছাঃ শামিমা পারভীন বলেন, প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের পরই পুলিশ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করাসহ অপরাধীদের সনাক্ত করে গ্রেপ্তার অভিযান পরিচালনা করেছে। অপরাধ দমনে রাজবাড়ী জেলা পুলিশ বিশেষ টিম গঠনের ও তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অপরাধীদের আইনের আওতায় এনেছে। এ সব হত্যাকান্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
প্রেস ব্রিফিংকালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) শরীফ আল রাজীব, সহকারী পুলিশ সুপার (পাংশা সার্কেল) দেব্রত সরকার সহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।