নিজস্ব প্রতিবেদক:
হজ ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘদিনের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে আলোচনায় এসেছেন হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সাবেক সভাপতি ও যুবলীগ নেতা এম শাহাদাত হোসেন তসলিম। অভিযোগ রয়েছে, তিনি ফ্লাইনাস এয়ারলাইন্সের জেনারেল সেলস এজেন্ট (জিএসএ) হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ নানা অনিয়মে জড়িত ছিলেন।
সূত্র জানায়, ‘ডাইন্যাস্টি ট্রাভেলস’-এর মাধ্যমে তিনি সৌদির বেসরকারি এয়ারলাইন্স ফ্লাইনাসের বাংলাদেশ অংশের জিএসএ হয়ে ওঠেন। এরপর হজ ফ্লাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এবং নিম্নমানের বিমানসেবার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রেও স্বচ্ছতা না থাকায় অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।
একাধিক অভিযোগে বলা হয়, ফ্লাইনাসের টিকিটের টাকা এয়ারলাইন্সের নির্ধারিত অ্যাকাউন্টে জমা না দিয়ে নিজস্ব এজেন্সির মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন পরিচালনা করা হয়। এতে প্রতি হজযাত্রীর কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমিশন নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
২০২৩ সালে ফ্লাইনাসের মাধ্যমে হজযাত্রী পরিবহণ শুরু হওয়ার পর থেকে বিমান ভাড়া হঠাৎ করে ৫৮ হাজার টাকা বৃদ্ধি পায়। এতে প্রায় এক লাখ তেইশ হাজার হজযাত্রীকে অতিরিক্ত ৭১৩ কোটি টাকার বেশি পরিশোধ করতে হয়। অথচ ওই এয়ারলাইন্সের বিমান ছোট ও নিম্নমানের হওয়ায় এ ভাড়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনেক হজ এজেন্সি মালিক।
হাবের বর্তমান কমিটি জানায়, ২০১৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সংগঠনটির প্রায় ১৫ কোটি টাকার আয় হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই সময়কালে এম শাহাদাত হোসেন তসলিম সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। বিষয়টি তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
হাবের বর্তমান সভাপতি সৈয়দ গোলাম সরওয়ার বলেন, “বিগত কয়েক বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব আমরা খতিয়ে দেখছি। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
অন্যদিকে, ‘বৈষম্যবিরোধী হজ এজেন্সি মালিকবৃন্দ’ সংগঠনের নেতারা এক লিখিত বক্তব্যে জানান, ফ্লাইনাসের টিকিট বণ্টনে একটি নির্দিষ্ট সিন্ডিকেট কাজ করছে। হাবের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কেউ পরপর তিনবারের বেশি সভাপতি হতে পারেন না, কিন্তু তসলিম চারবার দায়িত্ব পালন করেছেন বলে দাবি করা হয়।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এম শাহাদাত হোসেন তসলিম। তিনি বলেন, “৫ আগস্টের পর থেকে আমি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছি। বর্তমানে ‘ডাইন্যাস্টি ট্রাভেলস’-এর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন মেজবাহ উদ্দিন সাঈদ।”
নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগকে ভিত্তিহীন দাবি করে তিনি বলেন, “হাবের টাকা এককভাবে ভোগ করার কোনো সুযোগ নেই। আর আল রশিদ ফাউন্ডেশন একটি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান। এর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা সঠিক নয়।”
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব একেএম আফতাব হোসেন প্রামাণিক বলেন, “সৌদি আরবের ফ্লাইনাস এয়ারলাইন্সের বর্তমান জিএসএ হিসেবে ডাইন্যাস্টি ট্রাভেলস অনুমোদন পেয়েছে। এটি সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সের বিষয়।”
এ বিষয়ে ডাইন্যাস্টির বর্তমান চেয়ারম্যান মেজবাহ উদ্দিন সাঈদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।