মোঃ নাঈম ইসলাম, গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি:
সুস্থ্য-সবল মানুষ ছিলেন সাইদুল ইসলাম (৩৫)। ভ্যান চালিয়ে জিবিকা নির্বাহ করতেন। তবে আজ (৬ মে) মঙ্গলবার সকালে তার জীবনে নেমে আসে বিষাদ। অবৈধ পুকুর খননের কাজে ব্যবহৃত ভেকুর ধাক্কায় বাম পায়ে গুরুতর আঘাত পান। এখন পায়ের নিচের অংশ কেটে ফেলার উপক্রম হয়েছে।
পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আহত হওয়ায় নানা দুশ্চিন্তায় পড়েছে তার ছয় সদস্যের পরিবার। গুরুদাসপুর উপজেলার চাপিলা ইউনিয়নের ধানুড়া মোল্লাপাড়া গ্রামে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে সাইদুল দুর্ঘটনাকবলিত হন। সাইদুল ইসলাম ওই গ্রামের ফজলের ছেলে। গুরুতর আহত অবস্থায় সাইদুলকে প্রথমে নাটোর সদর এবং পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের সার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে।
সাইদুলের ভাই ফরিদুল ইসলাম জানান, বাম পায়ের অ্যাংকেল জয়েন্ট (গোড়ালির ওপরের অংশ) কেটে বিচ্ছিন্ন করার কথা বলেছেন রাজশাহী মেডিকেলের অর্থপেডিক্স বিভাগের চিকিৎসকেরা। আঘাতপ্রাপ্ত অংশটুকু বিচ্ছিন্ন না করা হলে ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। তাই অপারেশনের প্রস্তুতি চলছে।
এঘটনায় মঙ্গলবার বিকেলে ফরিদুল ইসলাম বাদি হয়ে ভেকু চালক মো. আববাছ আলী, মাটি ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর, মো. আনিছ, মো. শাহিন মন্ডল এবং মো. শামীম হোসেন, মো. জাদুসহ ৬জনকে অভিযুক্ত করে গুরুদাসপুর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এদের মধ্যে ভেকু চালক আব্বাসকে আটক করে পুলিশে দেয় স্থানীয় লোকজন। জব্দ করা হয় ভেকুটি।
সাইদুরের স্ত্রী খাদিজা বেগম বলেন, মাসখানেক আগে তিনি সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে পূত্র সন্তান জন্ম দিয়েছেন। সংসারে এখন ৬ সদস্য। সংসারের খরচ বহন করতে তার স্বামীই ছিলেন একমাত্র উপর্জনক্ষম ব্যক্তি। স্বামী পায়ে আঘাত পাওয়ায় সন্তানের দুধ, নিজের ওষুধ কেনাসহ নানা চিন্তায় জর্জড়িত তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় ইউপি সদস্য এরশাদ আলী বলেন, অবৈধভাবে পুকুর খননের জন্য ধানুড়া মোল্লা পাড়ার কাঁচা সড়ক হয়ে ভেকু নিয়ে যাচ্ছিলেন মাটি ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর, মো. আনিছ, মো. শাহিন মন্ডল। এসময় সড়কের পাশে তার কলাগাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একারণে তিনি বাধা দিয়েছিলেন। এনিয়ে তার সাথে অভিযুক্তদের বাকবিতন্ডা হয়। তার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন ভ্যানচালক সাইদুল। একপর্যায়ে ইচ্ছা করেই ভেকুর বাকেট সাইদুলের পায়ের ওপর তুলে দেওয়া হয়। সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন সাইদুল। বামপায়ে গোড়ালির ওপর থেকে আঘাত পেয়েছেন।
সাইদুলের মা চাইমন বিবি বলেন, ভ্যান চালিয়ে ওষুধপত্র, এনজিওর কিস্তি দেওয়াসহ সংসারের খরচ বহন করতেন। ভেকুর আঘাতে এখন তার ছেলেটি পঙ্গু হওয়ার পথে। তিনি দোষিদের বিচার দাবি করেন।
গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনজার্চ (ওসি) মেজবাউল হক বলেন, ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। ভেকুটিও জব্দ করা হয়েছে।