৯ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১১ই জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

আল্লাহর ভালোবাসা—হৃদয়ের আকাশ জুড়ে অনন্ত শান্তির প্রভা

লেখক জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান

যখন পৃথিবীর সমস্ত শব্দ স্তব্ধ হয়ে আসে, যখন সব আশা ধূসর ধুলোয় মিশে যায়—তখনো এক অনন্ত আশ্রয়, এক চিরন্তন ভালোবাসা আমাদের ডেকে নেয় নীরবে। সে ভালোবাসা কারো নয়, একমাত্র আল্লাহর; যা হৃদয়ের গভীরে আলো হয়ে জ্বলে, রূহের কাননে প্রশান্তির সুবাতাস হয়ে বয়ে যায়।

এই ভালোবাসা কোনো পার্থিব টান নয়, নয় কোনো শর্তাধীন অনুভব। এটি এক পবিত্র আকর্ষণ, যার ভিত্তি আত্মসমর্পণ আর একান্ত ভক্তি। যে হৃদয় একবার আল্লাহর প্রেমে সিক্ত হয়, তার কাছে দুনিয়ার মোহ হারিয়ে যায় মরিচিকার মতো। সেই মানুষ আর কারো দরজায় মাথা নত করে না—সে মাথা রাখে কেবল সেই সত্তার সামনে, যিনি সব দরজার মালিক।

আল্লাহর ভালোবাসা মানুষকে শুদ্ধ করে, করে পরিশীলিত ও প্রশান্ত। এই প্রেমে নিমগ্ন মানুষ চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করে রবের করুণার বারিধারার। তার চোখ অশ্রুসিক্ত হয় ইবাদতে, আর অন্তর হয়ে ওঠে অগাধ আস্থার ঝর্ণাধারা। সে জানে, যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি ছাড়া কেউ তার অভিভাবক নন।

ভালোবাসা তখনই পূর্ণ হয়, যখন তা ইবাদতে রূপ নেয়। সালাত আর যিকির তখন শুধুমাত্র কর্তব্য থাকে না—তবে হয়ে ওঠে প্রেমিকের নিবেদন, প্রেমপাত্রের নিবিড় সাক্ষাৎ। কুরআনের প্রতিটি আয়াত তখন একেকটি প্রেমের বাণী, যেখানে আল্লাহ তাঁর প্রেমিক বান্দার সঙ্গে মমতায় কথা বলেন।

এই ভালোবাসা হৃদয়কে পরিণত করে দয়ার উৎসে। মানুষের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যায়; হিংসা-বিদ্বেষের জায়গা দখল করে নেয় সহমর্মিতা ও ক্ষমাশীলতা। এমন হৃদয় আর কারো ক্ষতিতে আনন্দ পায় না—বরং অন্যের দুঃখে কাঁদে, আর নিজের সুখও ভাগ করে নিতে চায় প্রিয় স্রষ্টার সন্তুষ্টির আশায়।

আল্লাহর ভালোবাসায় গড়া জীবন আধ্যাত্মিক এক বাগান, যেখানে প্রতিটি কাজ ফুল হয়ে ফোটে, আর প্রতিটি দুঃখ হয়ে ওঠে জিয়ারত। সেখানে ব্যর্থতা বলে কিছু থাকে না, কারণ সে জানে, তার রব দেরি করেন, কিন্তু অবহেলা করেন না। প্রতিটি অশ্রু, প্রতিটি প্রার্থনা তাঁর কাছে পৌঁছে যায় নিঃশব্দেই।

এই ভালোবাসা চিরন্তন—মৃত্যু তার পরিসমাপ্তি নয়, বরং আরেক জীবনের শুভ সূচনা। যারা আল্লাহর প্রেমে জীবন কাটায়, তাদের জন্য মৃত্যুও প্রেমের মিলনের সেতু হয়ে ওঠে। সেজন্যই প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছিলেন— “যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চায়, আল্লাহও তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান।” (সহীহ বুখারি)

এই প্রেমই হোক জীবনের অভ্যন্তরীণ ভাষা। আমাদের হৃদয় জুড়ে বয়ে চলুক সেই অনন্ত শান্তির ধারা, যা আসে কেবল আল্লাহর ভালোবাসা থেকে—নিঃশর্ত, অমলিন, অপার্থিব।

লেখক,শিক্ষার্থী আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়,কায়রো,মিশর

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

এই বিভাগের আরও খবর

৫ মে: শাপলা চত্বরের সেই রক্তাক্ত রাতের স্মৃতি

আজ ঐতিহাসিক ৫ মে। ক্যালেন্ডারে অনেক বছর পেরিয়ে গেলেও বদলায়নি সেই ‘ভয়াল রাতের স্মৃতি’। ২০১৩ সালের এই দিন, ঢাকার মতিঝিল শাপলা চত্বরে ইতিহাসের ‘নির্মমতম গণহত্যা’

আবেগের কফিনে গাঁথা এক জীবনের কবরগাথা

লেখক জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান সে ছিল স্বপ্নবতী এক তরুণী—চেহারায় মাধুর্য, মননে দীপ্তি। চোখে ছিল স্বপ্ন, হৃদয়ে ছিল নির্মল আকাঙ্ক্ষা। আন্ডারগ্র্যাজুয়েট পড়ার সময় একদিন স্বাভাবিকভাবেই

ঘামে লেখা গৌরবনামা ইসলামে শ্রমিকের মর্যাদা ও মানবতার দৃষ্টিভঙ্গি

লেখক জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান সকাল যখন দিগন্তে আলো ছড়িয়ে দেয়, তখন প্রথম যে শব্দ ভেসে আসে, তা হলো হাতুড়ির শব্দ, করাতের ঘর্ষণ কিংবা জমিনে

শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠায় একমাত্র পথ ইসলাম

লেখক: মাওলানা আসগর সালেহী মে দিবসের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস: মে দিবস, আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে বিশ্বব্যাপী পালিত হয় প্রতি বছর ১ মে। এর সূচনা ১৮৮৬ সালের

Scroll to Top