১২ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৪ই জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সমাবেশ

ইমতিয়াজ উদ্দিন, জবি প্রতিনিধি

০৪ দফা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ‘জবি ঐক্য’ নামক একটি নতুন প্ল্যাটফর্মের ব্যানারে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ সোমবার (১২ মে) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য চত্বরে এই সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষক, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের সদস্য ও নেতাকর্মীরা অংশ নেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘ইউজিসির কালো হাত ভেঙে দাও, গুড়িয়ে দাও’, ‘মন্ত্রণালয়ের কালো হাত ভেঙে দাও, গুড়িয়ে দাও’, ‘বাজেটের বৈষম্য মানি না, মানব না’, ‘বৈষম্যের গদিতে আগুন জ্বালাও একসাথে’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, জবিয়ানরা জেগেছে’, ‘আপোস না সংগ্রাম’, ‘বাজেটের বৈষম্য মানি না মানবো না’, ‘একশন, একশন, ডাইরেক্ট একশন’, ‘ইউজিসির বৈষম্য মানি না মানবো না’, ‘ইউজিসির কালো হাত ভেঙ্গে দাও গুড়িয়ে দাও মন্ত্রণালয়ের কালো হাত ভেঙ্গে দাও গুড়িয়ে দাও’, ‘দালালী না রাজপথ, রাজপথ, রাজপথ’ ইত্যাদি নানা স্লোগান দিতে থাকেন।

সমাবেশটিতে বক্তারা বাজেট বৈষম্যের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং হল সংকট নিরসনের জন্য দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানান।

শিক্ষার্থীদের চার দফা দাবি—

১. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক বাজেট বৃদ্ধি করতে হবে এবং ২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেটে অন্তত ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন ভাতা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

২. দ্বিতীয় ক্যাম্পাস এবং পুরান ঢাকার ড. হাবিবুর রহমান হল ও বাণী ভবনের নির্মাণকাজ আগামী ১০ মে ২০২৫-এর মধ্যে শুরু করতে হবে।

৩. বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে হল ও দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণ কার্যক্রমের অগ্রগতি প্রতি ১৫ দিন অন্তর মুক্তমঞ্চে এসে অবহিত করতে হবে।

৪. আগামী ১৫ মে ২০২৫-এর মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে।

সমাবেশে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী নূর নবী বলেন, “প্রতিটি স্তরেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বৈষম্য করা হচ্ছে। মন্ত্রণালয় ও সচিবালয়ে এমন কিছু স্বৈরাচারী দোসর বসে আছে, যারা ইচ্ছাকৃতভাবে জবির বাজেট আটকে দিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে ১১টি হলের কথা বলা হলেও বাস্তবে সেগুলো বিভিন্ন গোষ্ঠীর দখলে। প্রশাসন এখনও এসব হল বা জমি উদ্ধার করতে পারেনি। বলা হচ্ছে, জমিগুলো ভেস্টেড প্রপার্টি (ভিপি), যেখানে নির্মাণের অনুমতি নেই। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক হলই ভিপি জমিতে গড়ে উঠেছে। এই বৈষম্যের জবাবদিহিতা আমাদের কাছেই করতে হবে। আমাদের এই যৌক্তিক দাবি এই মাসের মধ্যেই করা সম্ভব।”

ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. বিলাল হোসেন বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি ভবন বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে, যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। সবসময় আতঙ্কে থাকতে হয়। আমরা কেন আমাদের ক্যাম্পাসকে উন্নত করতে পারছি না, সেটি নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। আমাদের দাবি একটাই—প্রথম ক্যাম্পাসকে সুসজ্জিত করতে হবে। দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের দায়িত্ব সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অতি দ্রুত সেখানকার কাজ শেষ করে শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসন উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমানে ক্যাম্পাসে বিকেল ৩টার পর বাস ছেড়ে যায়, ফলে ক্যাম্পাস কার্যত বন্ধ হয়ে পড়ে। গবেষণার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজও মাঝপথে ছেড়ে বাস ধরতে হয়। এমন পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে এসে এমন ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে আমরা রাত ১০টা কিংবা ১২টা পর্যন্তও কাজ চালিয়ে যেতে পারি।”

সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ইভান তাহসিব। তিনি বলেন, “আবাসনের দাবিতে আমি আট বছর ধরে লড়ছি। আমার আগের ব্যাচের শিক্ষার্থীরাও আন্দোলন করেছে। আমরা কখন এই অধিকার পাব জানি না, তবে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। জবির সংকট কেবল একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয় নয়, এটি একটি জাতীয় ইস্যু—এটি জাতীয়ভাবে তুলে ধরতে হবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যে কত সংকটে আছে তা ফেসবুকে বিভিন্ন পেইজে বেশি বেশি প্রচার করুন, পোস্ট করুন।”

ইংরেজি বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী প্রিয়ন্তী বলেন, “আমরা যখন অধিকার আদায়ের জন্য শিক্ষকদের পাশে চাই, তখন অনেক শিক্ষক আমাদের সহায়তা করেন না। তারা আমাদের অবজ্ঞা করেন। এতে আমাদের লজ্জা লাগে, কিন্তু শিক্ষকরা লজ্জা পান না—কারণ তারা আমাদের সন্তান মনে করেন না। অথচ শিক্ষার্থীরাই সবচেয়ে বড় লিডার, এটি সবার মনে রাখা উচিত।”

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. রইছ উদ্দিন  বলেন, “আমরা অতীতে বহু প্রশাসনকে দেখেছি যারা বাহির থেকে এসে নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়িত করেছে শুধু। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা নিয়ে ভাবে নি। আমি লক্ষ করেছি পূর্বে যখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন আন্দোলন হয়েছে তখন প্রশাসন আন্দোলনকারীদের বিভিন্ন বিভিন্ন ট্যাগ দিয়ে দমন করতে চেয়েছে। আবাসন আমাদের ন্যায্য অধিকার। অতীতে আমাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এখন আর কোন ধরনের বৈষম্য মেনে নেওয়া হবে না।”

তিনি আরো বলেন, “জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস-ঐতিহ্যের লীলাভূমি। এখানে অনেক প্রশাসন এসেছে। অতীতে সাধারণ শিক্ষার্থী যখনই অধিকার আদায়ের জন্য যতবার কণ্ঠ তুলেছে ততবারই তাদেরকে নানা ট্যাগ লাগানো হয়েছে।

অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হল পেল, আবাসন পেল। কিন্তু জগন্নাথ কেন পেল না? যদি আমাদের অধিকার দেওয়া না হয়, আমরাই শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে কমপ্লিট শাটডাউন করবো।

আমরা প্রধান প্রকৌশলীকে জানিয়েছি বুয়েট থেকে এক্সপার্ট প্রকৌশলী নিয়ে এসে প্রয়োজনে ভেঙ্গে পড়া ভবনটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর। আগামীকাল সেই প্রকৌশলী আসবেন। যদি পরীক্ষায় প্রমাণিত হয় এই ভবন বসবাসের উপযুক্ত নয় তাহলে আমরা এই ভবনে আর ঢুকবো না। প্রয়োজনবোধে আমরা গাছতলায় ক্লাস করবো।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ সাবিনা শারমিন বলেন,  “আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। আবাসন ভাতা একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। ইউজিসির সাথে বৈঠক করে আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসন ভাতা বৃদ্ধির চেষ্টা করছি।”

জবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, “জবিতে দীর্ঘদিন ধরে চলা সমস্যাগুলো নিরসনের জন্য আজ ক্যাম্পাসের সকল ছাত্রসংগঠন, শিক্ষকবৃন্দ, সাংবাদিকবৃন্দ, সাধারণ শিক্ষার্থীগণ- সকলেই একতাবদ্ধ হয়েছে। ঢাকার বুকে সবসময় এই জবিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মানদণ্ড থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। জবির সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের জন্য জবি ছাত্রদল সর্বদা শিক্ষার্থীদের পাশে ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।”

তিনি আরো বলেন, ” অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের, ফ্যাসিবাদের প্রেসক্রিপশনে জবি চলবে না। সাধারণ শিক্ষার্থীরা তা মেনে নিবে না। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সুষ্ঠু শিক্ষার্থীবান্ধব ক্যাম্পাস গঠনে কাজ করে যাচ্ছে, সবাইকে নিয়ে আমরা কাজ করে যাবো”

বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, আপনারা জুলাই বিপ্লবের শহিদদের রক্তের বিনিময়ে এই গদিতে বসে আছেন। আপনারা আমাদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো মেনে নেন।”

উল্লেখ্য, সমাবেশটিতে জবির ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, শিক্ষক সমিতির সদস্যবৃন্দ, ট্রেজারার অধ্যক্ষ, প্রক্টর অধ্যাপক, কর্মচারী-কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিল। দুপুর ৩টায় সমাবেশটি সমাপ্ত হয়।

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

এই বিভাগের আরও খবর

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে ‘OBE Curriculum’ প্রশিক্ষণ কর্মশালা

মোছাঃ মাহমুদা আক্তার নাঈমা, জাককানইবি প্রতিনিধি জাককানইবি তথা জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের শিক্ষকদের অংশগ্রহণে শুরু হয়েছে শীর্ষক দুই দিনব্যাপী ‘OBE

পটুয়াখালী ভার্সিটিতে, ‘শিক্ষাবান্ধব পরিবহন ব্যবস্থা’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত

জাকির হোসেন হাওলাদার, দুমকী ও পবিপ্রবি( পটুয়াখালী ) প্রতিনিধি: পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পবিপ্রবি) কর্মরত গাড়ি চালক ও সহকারীদের জন্য ‘শিক্ষাবান্ধব পরিবহন ব্যবস্থা’ শীর্ষক

‘Setting Vision and Mission of the University & the POEs’ শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত

ইমতিয়াজ উদ্দিন, জবি প্রতিনিধি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল (আইকিউএসি)-এর আয়োজনে ‘Setting Vision and Mission of the University & the POEs’ শীর্ষক কর্মশালা

জকসু নির্বাচন আর কতদূর?

ইমতিয়াজ উদ্দিন, জবি প্রতিনিধি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচন চায় জবির শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে ছাত্র সংসদের বিধান থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রায় ১৯ বছরেও

Scroll to Top