নিজস্ব প্রতিবেদক:
পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার সোমবার (১৯ মে) দুই দিনের সরকারি সফরে চীন যাচ্ছেন। সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত সংঘাতের পর এ সফরকে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও কূটনৈতিক সমন্বয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
রোববার পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তরের দেওয়া বিবৃতিতে জানানো হয়, চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র আমন্ত্রণে ইসহাক দার ১৯ থেকে ২১ মে পর্যন্ত বেইজিং সফর করবেন। সফরে তিনি চীনা শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে দক্ষিণ এশিয়ার পরিস্থিতি এবং দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয়ে আলোচনা করবেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “উভয় পক্ষ পাকিস্তান-চীন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পূর্ণ পরিসর পর্যালোচনা করবে এবং পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে মতবিনিময় করবে।”
চীন-পাকিস্তান সম্পর্ক আরও জোরদার
ইসহাক দারের এ সফরকে চীন-পাকিস্তান কৌশলগত অংশীদারিত্ব আরও সুদৃঢ় করার অঙ্গীকার হিসেবে উল্লেখ করেছে ইসলামাবাদ। এর পাশাপাশি সাম্প্রতিক সংঘাতে চীনের প্রকাশ্য সমর্থন পাকিস্তানের জন্য কূটনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। চীনের রাষ্ট্রদূত পাকিস্তানকে ‘আয়রন ব্রাদার’ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, “চ্যালেঞ্জপূর্ণ সময়ে দুই দেশ একে অপরের পাশে থেকেছে।”
আফগানিস্তান নিয়ে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক
সফরের অংশ হিসেবে ২০ মে চীনে পৌঁছাবেন তালেবান-নিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুততাকিও। সেখানে চীন, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। আলোচনায় আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানানো হয়েছে।
ভারত-পাকিস্তান সাম্প্রতিক সংঘাত
গত মাসে ভারত-অধিকৃত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হন। ভারত এ ঘটনার জন্য সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করে, যদিও কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেনি। এরপর দুই দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনা শুরু হয়। ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে সীমান্তে আগ্রাসন চালালে পাকিস্তান পাল্টা প্রতিরোধমূলক ‘অপারেশন বুনিয়ানুম-মারসুস’ পরিচালনা করে।
পাকিস্তান জানায়, এ সংঘাতে ভারতের ৬টি যুদ্ধবিমান ও বহু ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে। সংঘর্ষে ১৩ জন সেনাসদস্যসহ মোট ৫৩ জন পাকিস্তানি নিহত হন। তিনদিনের ওই সংঘাত শেষ হয় যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ১০ মে ঘোষিত যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষণ
চীনে ইসহাক দারের এ সফরকে শুধু দ্বিপাক্ষিক দৃষ্টিকোণেই নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত ভারসাম্যের দৃষ্টিতেও বিশ্লেষণ করছেন বিশেষজ্ঞরা। আফগানিস্তানকে যুক্ত করে ত্রিপক্ষীয় কাঠামো গঠনের মধ্য দিয়ে চীন নিজেদের আঞ্চলিক নেতৃত্বের অবস্থান সুদৃঢ় করতে চাইছে।
একইসঙ্গে পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির পরিবেশ বজায় রেখে আন্তর্জাতিক মহলে ভারতের ‘অগ্রাসী নীতি’কে চ্যালেঞ্জ করতে প্রস্তুত। ইসহাক দারের সফরের ফলাফল ভবিষ্যতে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক কোন দিকে গড়াবে, তা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।