নিজস্ব প্রতিবেদক:
এভারেস্টের চূড়ায় দাঁড়িয়ে আবেগে কেঁদে ফেলেছেন বাংলাদেশের পর্বতারোহী ইকরামুল হাসান শাকিল। কক্সবাজারের ইনানী সৈকত থেকে ১,৩৭২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে তিনি ১৯ মে ২০২৫ তারিখে ভোর সাড়ে ছয়টায় পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ জয় করেন। ‘সি টু সামিট’ নামের এই অভিযানে শাকিল গড়েছেন একাধিক নজির—তিনি হয়েছেন সপ্তম বাংলাদেশি, সর্বকনিষ্ঠ এবং পদযাত্রায় সবচেয়ে বেশি পথ পাড়ি দিয়ে সবচেয়ে কম সময়ে এভারেস্টজয়ী মানুষ।
এভারেস্ট জয়ের পর শাকিল লিখেছেন, “আমি তখন কেবল একজন পর্বতারোহী ছিলাম না—আমি ছিলাম হাজারো ত্যাগ, সংগ্রাম, স্বপ্ন আর দায়িত্ববোধের প্রতীক।”
অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল পরিবেশ সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া। শাকিলের ভাষায়, “যদি পাহাড় জয় করা যায়, তবে নিজের ভেতরের অসচেতনতাকেও জয় করা সম্ভব।” তাঁর এই অভিযানে শারীরিক ও মানসিক সীমা ছাপিয়ে ছিল এক বিশাল বার্তা—প্লাস্টিক দূষণ ও কার্বন নিঃসরণ রোধে বিশ্বকে সচেতন করা।
এভারেেস্ট চূড়ায় ওঠার পুরো পথে তিনি পাড়ি দিয়েছেন বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূল, ভারত ও নেপালের দুর্গম অঞ্চল, খুম্বু আইসফল, সাউথ কল, হিলারি স্টেপসহ বহু কঠিন স্থান। প্রতিটি ধাপে ছিল জীবন-মৃত্যুর ভারসাম্য।
অভিযানের আয়োজক ছিল বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাব। প্রধান পৃষ্ঠপোষক প্রাণ, সহযোগী ছিল ইউএনডিপি, মি. নুডলস, সিস্টেমা টুথব্রাশ, মাকালু ই ট্রেডার্স, ৮কে এক্সপেডিশন, জাগোনিউজ, ও জাগো এফএম।
শাকিলের সঙ্গী ও গাইড ছিলেন নেপালের তাশি গ্যালজেন শেরপা, যিনি নিজেও ২০ দিনের মধ্যে চারবার এভারেস্ট চূড়ায় ওঠার পথে। শাকিল জানিয়েছেন, “আমার এই জয় একার নয়। এটি দেশের, তরুণ প্রজন্মের, যারা স্বপ্ন দেখে সীমা ভাঙার।”
গাজীপুরের কালিয়াকৈরের এই তরুণ ২০১৩ সালে কলকাতা থেকে হেঁটে ঢাকায় এসেছিলেন। এরপর থেকেই যুক্ত হন পর্বতারোহণে। তিনি কেয়াজো-রি, দ্রৌপদী-কা-ডান্ডা-২, হিমলুংসহ বহু পর্বত জয়ের অভিজ্ঞতা অর্জন করেন।
সাম্প্রতিক এই এভারেস্ট জয় শুধু রেকর্ড নয়, বরং একটি জাতির পক্ষ থেকে বিশ্বকে দেওয়া এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা—”এখনই সময় সচেতন হওয়ার, নইলে ভবিষ্যৎ আর থাকবে না।”