নিজস্ব প্রতিবেদক:
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের তিন মাস পার হওয়ার পর এখন অনেক বিশ্বনেতাই বুঝে গেছেন, ওভাল অফিসের আমন্ত্রণ সবসময় সম্মানের প্রতীক নয়। বরং তাতে প্রকাশ্যে বিব্রত হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার সাম্প্রতিক হোয়াইট হাউস সফর তার চূড়ান্ত প্রমাণ।
বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে উঠে আসে, গতকাল বুধবারের বৈঠকটি যেন ছিল রামাফোসাকে হেনস্তা করার জন্য পূর্বপরিকল্পিত এক প্রদর্শনী। বৈঠক চলাকালে আচমকা আলো নিভিয়ে, বড় পর্দায় দীর্ঘ ভিডিও চালানো এবং পুরনো খবরের কাটিং সামনে এনে দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের ওপর কথিত নিপীড়নের বিষয়টি তুলে ধরেন ট্রাম্প।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রামাফোসা বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার বাস্তবতা জানতে হলে ট্রাম্পকে সেখানকার মানুষের কথা শুনতে হবে। এরপরই ট্রাম্প সহকারীকে নির্দেশ দেন আলো নিভিয়ে ভিডিও চালাতে। ভিডিওতে দেখা যায়, কিছু নেতা ‘শুট দ্য বুর’ গান গাইছে, যা ট্রাম্প শ্বেতাঙ্গ-বিরোধিতার উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করেন, যদিও এটি মূলত বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের প্রতীকী গান।
আলোচনার সময় ট্রাম্পের উপদেষ্টা ইলন মাস্ক, যিনি নিজেও দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্মগ্রহণ করেছেন, পেছনে নীরব দর্শক হিসেবে ছিলেন। এ সময় ট্রাম্প দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গদের ‘গণহত্যা’ নিয়ে একের পর এক অভিযোগ তুলে ধরেন, যার বেশিরভাগই ভিত্তিহীন।
তবে সিরিল রামাফোসা ছিলেন প্রস্তুত। তিনি ছিলেন সংযত, সংক্ষিপ্ত এবং কৌশলী। আলোচনায় গলফপ্রেমী ট্রাম্পের মনোযোগ আকর্ষণে তিনি পাশে বসান দক্ষিণ আফ্রিকার দুই প্রখ্যাত শ্বেতাঙ্গ গলফার এর্নি এলস ও রেটিফ গুসেনকে। এছাড়াও বৈঠকে ছিলেন কৃষিমন্ত্রী, যিনি একটি বিরোধী দলের নেতা এবং জাতীয় ঐক্য সরকারে যুক্ত।
ট্রাম্পের একাধিক প্ররোচনার পরও রামাফোসা শান্ত থাকেন। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, “আফ্রিকায় যদি শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের গণহত্যা হতো, তাহলে এরা (গলফার ও কৃষিমন্ত্রী) আজ এখানে থাকতেন না। আমি আপনাকে হলফ করে বলছি।”
ট্রাম্প হয়তো রামাফোসাকে প্রকাশ্যে চাপে ফেলতে চেয়েছিলেন, তবে তার সেই কৌশল প্রত্যাশিত ফল দেয়নি। বরং রামাফোসা পরিপক্ব কূটনৈতিক কৌশলে পরিস্থিতি সামলে নেন।
এই নাটকীয় কূটনীতি যতটা না বিদেশি অতিথির উদ্দেশ্যে, তার চেয়েও বেশি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ঘরোয়া দর্শকদের জন্য। ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ আদর্শে বিশ্বাসী ট্রাম্প জানেন, তার সমর্থকেরা কী দেখতে চায়। তবে এখন যেহেতু কিছু বিদেশি নেতা তার এই কৌশলের মোকাবিলা করতে শিখে গেছেন, তাই ভবিষ্যতে তাকে আরও নতুন পরিকল্পনা নিতে হতে পারে।