নিজস্ব প্রতিনিধি:
রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরির জন্য দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির শীর্ষ নেতাদের হত্যার পরিকল্পনা করেছিল তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও তার সহযোগী মোল্লা মাসুদ। তাদের এই ষড়যন্ত্রে পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা। গোয়েন্দা জিজ্ঞাসাবাদে উঠে এসেছে এই বিস্ফোরক তথ্য।
ঢাকার হাতিরঝিল থানায় অস্ত্র মামলায় বুধবার আদালত সুব্রত বাইনকে ৮ দিন এবং তার তিন সহযোগী মোল্লা মাসুদ, আরাফাত ও শরীফকে ৬ দিনের রিমান্ডে দিয়েছেন। আদালতে হাজির করার সময় চার আসামিকে হেলমেট, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট এবং হাতকড়াসহ রাখা হয়। রিমান্ড শুনানিতে সুব্রত বাইন নিজেই বলেন, ‘আমি ১৯৮৭ সাল থেকে কোনো প্রতিবাদ করিনি, এখনও বাঁচার জন্য অস্ত্র রাখি।’
সেনাবাহিনীর অভিযানে গ্রেফতারের পর গোয়েন্দা কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, প্রতিবেশী একটি দেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে তাদের কাছে মোটা অঙ্কের অর্থ পাঠানো হয়। সেই অর্থে সংগঠিত করা হয় উঠতি বয়সি, পরিচিতহীন সন্ত্রাসীদের একটি বড় নেটওয়ার্ক। তাদের হাতে পৌঁছানোর জন্য মগবাজার, শাহবাগ, গুলশান ও বাড্ডা এলাকায় পাঠানো হচ্ছিল বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গুলি।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশে একের পর এক রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে সামগ্রিকভাবে রাজনৈতিক বিভ্রান্তি এবং গৃহবিবাদ তৈরির লক্ষ্য ছিল সুব্রত বাহিনীর। পরিকল্পনা অনুযায়ী, এসব হত্যাকাণ্ডের দায় রাজনৈতিক দলের ঘাড়ে চাপিয়ে তাদের মধ্যে শত্রুতা বাড়ানোর চক্রান্তও করা হয়েছিল।
জিজ্ঞাসাবাদে সুব্রত বাইন আরও স্বীকার করেন, বিএনপি সরকারের আমলে ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় নাম ওঠায় তিনি দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। পরে আওয়ামী লীগের আশ্রয়ে এসে বিএনপির নেতাদের প্রতিপক্ষ বানিয়ে পরিকল্পনা সাজান। তিনি জানান, ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিএনপির নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা সাড়া না দেওয়ায় তিনি আওয়ামী লীগের মিশনে যোগ দেন।
ডিবি সূত্রে জানা গেছে, অস্ত্র ও অর্থ লেনদেনের বেশিরভাগ কাজ হয়েছে যশোর, কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ সীমান্ত দিয়ে। সেই কারণেই কুষ্টিয়ায় গা ঢাকা দিয়েছিল সুব্রত বাহিনী। সেখান থেকে ঢাকায় পাঠানো হয় বেশ কয়েকটি চালান। এখন সেই অস্ত্র উদ্ধারে গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।
উল্লেখ্য, হাতিরঝিল ও কুষ্টিয়ায় আলাদা অভিযানে সুব্রত বাইন, মাসুদ ও তাদের দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করে সেনাবাহিনী। অভিযানে উদ্ধার হয় ৫টি বিদেশি পিস্তল, ১০টি ম্যাগাজিন, ৫৩ রাউন্ড গুলি ও একটি স্যাটেলাইট ফোন। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, এই চক্রের অনেক সদস্য এখনো পলাতক, যাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।