নিজস্ব প্রতিনিধি:
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে স্থানীয় শিল্পের সুরক্ষা কমিয়ে কর অব্যাহতি সীমিত করা হয়েছে। রাজস্ব আয় বাড়াতে সুতা উৎপাদনে ভ্যাট, লোকসানি প্রতিষ্ঠানের কর এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ভাড়ার উৎসে কর বাড়ানো হয়েছে। তবে করপোরেট করের কিছু শর্ত শিথিল ও শিল্পবান্ধব কিছু পদক্ষেপও রয়েছে।
দেশীয় টেক্সটাইল মিলে উৎপাদিত কটন ও ম্যানমেইড সুতার ওপর সুনির্দিষ্ট ভ্যাট ৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ টাকা করা হয়েছে। ফলে গ্যাস সংকটে থাকা টেক্সটাইল মিলগুলো আরও চাপে পড়বে বলে মনে করছেন উদ্যোক্তারা।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, “এই অবস্থায় ভ্যাট বাড়ানো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। এতে দেশীয় সুতা বিক্রি কমে যাবে এবং রাজস্ব আদায়ও ব্যাহত হবে।”
রেফ্রিজারেটর, এসি, মোবাইল ফোন, ও হোম অ্যাপ্লায়েন্স তৈরিতে ভ্যাট অব্যাহতি তুলে নেওয়া হয়েছে। ওয়াশিং মেশিন, রাইস কুকারসহ গৃহস্থালী সামগ্রীর ওপর পর্যায়ক্রমে ৫% থেকে ১০% ভ্যাট বসানো হয়েছে।
ফেরো অ্যালয়ের কাঁচামালের ওপর টনপ্রতি ভ্যাট ২০০ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। সিমেন্ট শিটে ভ্যাট ৫% থেকে ১৫% করা হয়েছে। লিফট উৎপাদনে ব্যবহৃত উপকরণ আমদানিতে ভ্যাট অব্যাহতি তুলে ধাপে ধাপে ভ্যাট বসানো হয়েছে।
লোকসানি হলেও শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে দ্বিগুণ হারে ১% ন্যূনতম আয়কর দিতে হবে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্থান-স্থাপনা ভাড়ার ওপর উৎসে কর ৫% থেকে ১০% করা হয়েছে। কনভেনশন হল ভাড়ার ক্ষেত্রেও একই হারে কর বাড়ানো হয়েছে। বহু বছর ধরে ১০ বছরের জন্য কর অবকাশ সুবিধা পাওয়া ৩১টি শিল্প খাত থেকে সেই সুবিধা তুলে দেওয়া হয়েছে। এতে দেশীয় উৎপাদন ও বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এছাড়া, শিল্পের কাঁচামালে আগাম কর ৩% থেকে কমিয়ে ২% করা হয়েছে, এলএনজি আমদানিতে ভ্যাট কমানো হয়েছে এবং কাস্টমসে ভুল ঘোষণায় জরিমানা অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে। ভ্যাট রিটার্নের সময়সীমাও বাড়িয়ে ৬ মাস করা হয়েছে।
ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম খান বলেন, করপোরেট করের নগদ লেনদেন সংক্রান্ত শর্ত তুলে নেওয়া ভালো পদক্ষেপ। তবে রিটার্ন জমার পর কর কর্মকর্তারা যেভাবে খরচ অগ্রহণযোগ্য করে দেন, তা বন্ধ করা দরকার। এটি করদাতাদের অনৈতিক লেনদেনের দিকে ঠেলে দেয়।
তিনি আরও বলেন, কর আইনে ভুলবশত না কাটা ট্যাক্স পরিশোধের সুযোগ না থাকায় অনেক প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত করের বোঝায় পড়ে।
এই বাজেট দেশীয় শিল্প ও ব্যবসার জন্য একদিকে যেমন কিছু সুবিধা এনেছে, অন্যদিকে করের বোঝা বাড়িয়ে উৎপাদন খাতকে চাপে ফেলেছে বলে মনে করছেন উদ্যোক্তারা ও অর্থনীতিবিদরা। স্থিতিশীল রাজস্বের পাশাপাশি শিল্পের বিকাশ নিশ্চিত করতে হলে কর কাঠামোতে ভারসাম্য আনাই এখন মূল চ্যালেঞ্জ।