২০শে আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৬শে সফর, ১৪৪৭ হিজরি

রামগতিতে লোডশেডিং ও ভুতুড়ে বিলে দিশেহারা পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহকরা

মোঃ রাকিব হোসেন, রামগতি (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি:

মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি ভুতুড়ে বিলে দিশেহারা লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গ্রাহকরা। গতো দু মাস ধরে প্রতিদিন গড়ে ৬-৮ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। এছাড়াও সার্ভিস ড্রপের সরবারহ বন্ধ এবং নতুন মিটার না থাকায় দেওয়া হচ্ছে না নতুন সংযোগও। অভিযোগ জানাতে গেলে গ্রাহকেই বলা হয় মিটার রিডিং ভিডিও করে আনার জন্য। সবমিলিয়ে নানান অভিযোগ রামগতি উপজেলা পল্লী বিদ্যুতের প্রতি। সমিতির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে চাহিদার তুলনায় বরাদ্ধ কম থাকায় প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সেবা দিতে পারছেন না তারা। নষ্ট মিটার পরিবর্তনের আবেদন দীর্ঘদিন পড়ে থাকলেও পরিবর্তন হচ্ছে না মিটার। আবার গ্রাহককে না জানিয়েও পরিবর্তন করে লাগানো হচ্ছে পুরাতন মিটার।

নুরিয়া হাজীর হাটের চা-দোকানি মোঃ বয়ান। গত ৬/৭ বছর ধরে দোকান চালাচ্ছেন। দোকানে দুটি ফ্যান ও দুটি বাল্ব ব্যবহার করছেন। হঠাৎ করে গত মে মাসে তার বিল আসে ২হাজার ৭৯টাকা। অভিযোগ জানাতে গেলে অফিস থেকে বলা হয় মিটার নষ্ট তাই বিল বেশি আসতে পারে। মিটার পরিবর্তন করতে হবে। আগে কাগজে আসা বিল পুরোপুরি জমা দিতে হবে, তারপর অভিযোগ ও মিটার পরিবর্তনের আবেদন। অতিরিক্ত বিল দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ফিরে আসেন তিনি। তিনি আরো জানান, অন্যান্য মাসগুলোতে দুই আড়াইশ টাকার বেশি বিল আসে না। হুট করে এ মাসে বেশি বিল আসছে। অফিসে গেলে বলা হয় মিটার পরিবর্তন করা হয়েছে। এটি সমাধান করতে সময় লাগবে। গ্রাহককে না জানিয়ে তার মিটার কেন পরিবর্তন করা হয়েছে এমন প্রশ্ন করলেও কোন উত্তর পাননি তিনি।

চর রমিজ ইউনিয়নের চরমেহার গ্রামের বেলাল উদ্দিন। বছরের শুরু থেকে অস্বাভাবিক বিল আসায় অভিযোগ নিয়ে গেছেন অফিসে। বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত বিল বাবদ ৩হাজার টাকা জমা দিয়ে অভিযোগ করেন। মিটার পরিবর্তনের জন্য ২৭০টাকা দিয়ে আবেদন করার তিনমাস সময় পার হয়ে গেলেও অদ্যবধি তার মিটার পরিবর্তন হয়নি। তার মার্চ-এপ্রিল মাসের বিদ্যুৎ বিলে পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মার্চ মাসে মিটার রিডিং ৫হাজার ২০ইউনিট, এপ্রিল মাসেও ৫হাজার ২০ ইউনিট। কিন্তু গড়পড়তা বিলের নামে এপ্রিল মাসে ৮০ইউনিটের বিল করা হয়েছে। মো: কামাল উদ্দিন রামগতি পৌরসভার চর হাসান হোসেন গ্রামের বাসিন্দা। তার এপ্রিল-মে মাসের বিদ্যুৎ বিলে দেখা যায় এপ্রিলে ব্যবহৃত ইউনিট ছিল ১৮৯৫, মে মাসেও ব্যবহৃত ইউনিটও ১৮৯৫। কিন্তু মে মাসে বিল করা হয়েছে ৩শ ৯৫ইউনিটের। কামাল উদ্দিনের অভিযোগ বিগত দিনগুলোতে গড়পড়তা ৪০ থেকে ৬০ইউনিটের মধ্যে বিল আসলেও মে মাসে অস্বাভাবিক বিল আসছে। অভিযোগ জানাতে গেলে আগে বিল পরিশোধ করে তারপর মিটার পরিবর্তনের আবেদন করতে বলা হয়েছে। বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত বিল পরিশোধ করতে হয়েছে। কিন্তু এখনো মিটার পরিবর্তন হয়নি।

আলেকজান্ডার আসলপাড়া এলাকার পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহক মো: ছালা উদ্দিন। অস্বাভাবিক বিলের অভিযোগ জানান তিনিও। তার মার্চ এবং এপ্রিল মাসের বিল ঘেঁটে দেখা যায় মার্চ মাসে তার ব্যবহৃত ইউনিট ৮হাজার ৮শ ৭৫ইউনিট এবং এপ্রিল মাসেও দেখানো হয়েছে একই সংখ্যা। কিন্তু গড়পড়তা বিলের নামে তার ব্যবহৃত ইউনিট এপ্রিল মাসের বিলে দেখানো হয়েছে ৩শ ইউনিট। উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কার্যালয়ে এসে অভিযোগ জানিয়ে গেছেন। কিন্তু মিটার পরিবর্তন হচ্ছে না। রামগতি পৌরসভার কর্মচারী শুভংকর সাহা। নতুন মিটার আবেদন করেছেন চার মাস হয়েছে। এখনো মিটার পাননি তিনি। অফিসে যোগাযোগ করা হলে নতুন মিটার সরবরাহ এবং সার্ভিস ড্রপ নেই বলে মিটার দেওয়া হচ্ছে না বলে জানান তিনি।

উল্লেখিত ভুক্তভোগীরা ছাড়াও সরেজমিনে রামগতি উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে- অস্বাভাবিক বিলের অভিযোগ এবং মিটার পরিবর্তনের আবেদন নিয়ে দৈনিক ৩০-৪০জন গ্রাহক কার্যালয়ে হাজীর হচ্ছেন। প্রায় দেখা যায় অভিযোগ জানাতে আসা গ্রাহকদের সাথে অফিস স্টাফদের সাথে বাকবিতন্ডা। চররমিজ ইউনিয়নের চরআফজল থেকে আসা আবদুল হালিম এবং তার স্ত্রীর সাথে কথা হয়। অস্বাভাবিক বিলের অভিযোগ নিয়ে এসে বিড়ম্বনার কথা জানিয়ে বলেন, অফিস থেকে বলা হচ্ছে মিটার রিডিং ভিডিও করে আনার জন্য। আমাদের তো ভিডিও করার মত মোবাইল নেই। কি করবো ভেবে পাচ্ছি না। বয়োবৃদ্ধ এ গ্রাহক বলেন বেশি কিছু ব্যবহার না করলেও হঠাৎ করে আমাদের কেন বিদ্যুৎ বিল আসছে তা জানি না। এতো বিল দেওয়ার মত সামর্থ আমাদের নেই।

রামগতি উপজেলা পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক মোঃ মুজাহিদ, সুমন হাওলাদার, সাদ্দাম হুসাইন, মোঃ হান্নান, ডাক্তার নিজাম উদ্দীনসহ বেশ কয়েকজন জানান, লোডশেডিংয়ের যন্ত্রনায় জীবন যাপন কঠিন হয়ে যাচ্ছে। একদিকে তীব্র গরমে ঘুমাতে পারছি না। অন্যদিকে অন্যান্য স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বেশি বিল আসছে। আমাদের বাসায় সন্তান আছে তারা দৈনিক পড়ালেখা করতে হয় বিদ্যুৎ না থাকার কারণে পড়াশোনার অমনোযোগী হচ্ছে। দৈনিক ৬/৭ঘন্টাও বিদ্যুৎ থাকেনা।এরকম প্রতি নিহত লোডশেডিং হলে পড়ালেখায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। প্রতিদিন যদি এভাবে চলতে থাকে তাহলে ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়া অমনোযোগী এবং ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

 

রামগতি পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা ৬৫হাজার। গ্রাহকদের বহুবিধ সুবিধার কথা মাথায় রেখে সাধারণ মিটারগুলোকে প্রিপেইড মিটারে রুপান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ৩৮হাজার গ্রাহকের জন্য প্রিপেইড মিটারের একটি প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। আগামী অর্থবছরে এ কাজ শুরু হবে। উপজেলায় বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ১৪ মেগাওয়াট কিন্তু বরাদ্ধ হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে ৪ থেকে ৫ মেগাওয়াট।

রামগতি উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম রেজাউল করিমের সাথে এসব বিষয়ে কথা হলে তিনি জানান, রামগতি এলাকার পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহকরা সচেতন নয়। তারা বিলের সাথে মিটার রিডিং মেলান না। এছাড়াও আমাদের মিটার রিডাররা না দেখেই গড়পড়তা ইউনিট লিখতে পারে। যথাযথ ভাবে দায়িত্ব পালন না করায় ইতিমধ্যে ১২জন মিটার রিডারকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অস্বাভাবিক বিলের বিষয়ে কেউ অভিযোগ করা হলে সমাধান করে দেওয়া হয়।

নষ্ট মিটার পরিবর্তনে সময়ক্ষেপন বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বৈশ্বিককারনে মিটার সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। তাই মিটার পরিবর্তনে সময় লাগছে। হুট করে গ্রাহকের অস্বাভাবিক বিল কেন আসে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেক গ্রাহকের ইউনিট বকেয়া রয়েছে- সেগুলো সমন্বয় করতে গিয়েই এখন বেশি ইউনিট দেখাচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্ধ পেলে লোডশেডিং কমবে

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top